চট্টগ্রাম নগরীর পুরাতন রেল স্টেশন থেকে শুরু করে নিউ মার্কেট ও জিপিও এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করেছে সিটি করপোরেশন।
Published : 08 Feb 2024, 02:08 PM
বন্দরনগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার ঘোষণার আট দিন পর ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন-সিসিসি।
বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১০টার দিকে পুরাতন রেল স্টেশন থেকে শুরু করে নিউ মার্কেট ও জিপিও এলাকার ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়।
সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাতজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত ৭০০ হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে।
“ফুটপাতে দোকান বসাতে বসাতে অনেকে সেখানে স্থায়ী অবকাঠামো করে ফেলেছিল। সেগুলোও উচ্ছেদ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটও আমাদের সাথে আছেন। এখন পর্যন্ত কোনো বাধা আসেনি।”
উচ্ছেদ অভিযানে ২০০ পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্য, ২০০ শ্রমিক, সিসিসির বিপুল সংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মী অংশ নেন।
দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের চিত্র পাল্টে গেছে। ভাসমান দোকান, ঝুপড়ি, চৌকি ও ভ্যানগাড়ি উচ্ছেদ করায় সড়কগুলো এখন আগের চেয়ে প্রশস্ত মনে হচ্ছে।
চট্টগ্রামের বিআরটিসি মোড়, পুরাতন রেল স্টেশন, নিউ মার্কেট মোড়, জিপিওর সামনের সড়ক ও কোতোয়ালি মোড়সহ পুরো এলাকার ফুটপাত হকারদের দখলে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সড়কের অংশ বিশেষও চলে যায় হকারদের দখলে।
এসব ফুটপাত উদ্ধার করে পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে গত ৩০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় ব্যাপক অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
অতীতে বিভিন্ন সময় মেয়ররা হকার উচ্ছেদে অভিযান চালালেও তীব্র বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। উচ্ছেদ হওয়া ফুটপাত বেশিদিন দখলমুক্ত রাখাও সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতিবারের অভিযান শুরুর পর হকারদের পক্ষ থেকে তেমন বাধা না এলেও বেলা সোয়া ১টার পর উচ্ছেদের প্রতিবাদে পুরাতন রেল স্টেশন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন হকাররা। মিছিল নিয়ে তারা নিউ মার্কেট মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুরাতন রেল স্টেশন এলাকায় ফুটপাতে জুতা বিক্রেতা রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছু না বলে আমার দোকান তুলে দিছে। আর বসতে দেবে না বলতেছে, কী করব জানি না।”
চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ও নোটিস ছাড়াই আজকে অতর্কিতে উচ্ছেদ করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে মেয়র বলেছিলেন, পুনর্বাসন না করে কোনো হকার উচ্ছেদ করা হবে না।
“বিগত দিনে মেয়র আ জ ম নাছির, প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমাদেরকে শৃঙ্খলার সঙ্গে ফুটপাতে বসে ব্যবসা করতে দিয়েছিলেন। এখন হঠাৎ করে এতগুলো মানুষের পরিবারের রুটি-রুজি ও তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার কী হবে?”
লেদু বলেন, “ইতোপূর্বে আমরা মেয়রকে বলেছি, প্রয়োজনে সিটি করপোরেশন থেকে আইডি ও রেজিস্ট্রেশন করে হকারদের যেন ফুটপাতে সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হয়। আমরা তো চুরি-ডাকাতি করি না, ব্যবসা করে খাই।
“আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করব। এখন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে।”
বেলা দেড়টায় সিটি করপোরেশনের একটি দল নতুন রেল স্টেশন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছিল। অন্য একটি দল জিপিও’র সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কাজ করছিল।
মুক্ত করা ফুটপাত ও সড়কের অংশে দোকান বসানো বন্ধ করতে নোটিসও দিয়েছে সিটি করপোরেশন। যাতে আবার দখল না হয় সেজন্য নজরদারি করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম।
এ অভিযানের কারণে বেলা ১১টা থেকে স্টেশন রোড, নিউমার্কেট মোড়, কোতোয়ালি মোড়, নন্দনকানন, জুবিলী রোডসহ সংলগ্ন এলাকার প্রায় সব সড়কে যানজট তৈরি হয়।
আরও পড়ুন-
ফুটপাত উদ্ধারে ‘ব্যাপক অভিযানে’ নামছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন