পুনর্দখল ঠেকাতে সিটি করপোরেশনের ‘মনিটরিং’ কার্যক্রম চলার মধ্যে এ সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটল।
Published : 12 Feb 2024, 07:15 PM
হকার উচ্ছেদের চার দিনের মাথায় ফুটপাতে পুনর্দখল ঠেকাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অভিযানকালে নগরীর রেলস্টেশন এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার রেলওয়ে স্টেশন, বিআরটিসি ফলমণ্ডি এলাকা থেকে নিউ মার্কেটের আমতল পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশ, হকার ও সিটি করপোরেশনের কর্মীসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে করপোরেশনের কয়েকটি গাড়ি।
অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পরও ঘণ্টাখানেক ধরে চলে সংঘর্ষ। এ সময় পুলিশের টিয়ার সেল ও গুলির শব্দে এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নগরীর বিআরটিসি ফলমণ্ডি এলাকা থেকে নিউ মার্কেটের আমতল পর্যন্ত ফুটপাতে অভিযান চালিয়ে হাজারখানেক হকার উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।
অভিযান চালানোর পর দু’দিন ওই এলাকা হকারমুক্ত থাকলেও তৃতীয় দিন থেকে আবার ফুটপাতের দুয়েক জায়গায় হকার বসতে শুরু করে। এরপর রোববার থেকে আবার পুনর্দখল ঠেকাতে অভিযান শুরু করে সিসিসি।
সোমবার বেলা আড়াইটায় আবার পুরাতন রেল স্টেশন এলাকায় অভিযানে যায় সিটি করপোরেশনের দল। এরপর সেখানে ফুটপাতে বসানো একটি জেনারেট অপসারণ করতে গেলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
এ সময় হকারদের একটি দল দারুণ ফজল মার্কেটের সামনে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। অন্যদিকে নুপুর মার্কেটের সামনের সড়কে হকারদের আরেকটি পক্ষ অবস্থান নেয়। তারা মেয়র ও সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে।
হকাররা দলবদ্ধ হয়ে এরপর সিটি করপোরেশনের অভিযান দলের উপর হামলা চালায়। করপোরেশনের গাড়ি ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে বল প্রয়োগ করে। তখন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। হকাররা আমতল ও নুপুর মার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্টেশন রোড পাবলিক টয়লেটের পাশে বসানো জেনারেটর অপসারণ করতে গেলে হকাররা বাধা দেয়।
“এসময় তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। ইটের আঘাতে এক নারী কনস্টেবলসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।”
পুলিশ টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়লে হকাররা রিয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকুমণ্ডি লেইনের গলির ভেতরে অবস্থান নিয়ে সরতে শুরু করে।
সোমবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত চালানো অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিসিসি’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরীন ফেরদৌসী, চৈতী সর্ববিদ্যা ও মো. সাব্বির রহমান সানি৷
অভিযান সম্পর্কে ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তা, নালা ও ফুটপাত দখল করা প্রায় তিনশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি আমরা৷ এ সময় অবৈধ দখলদাররা বাধা দিলে আমরা পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। পুনর্দখল ঠেকাতে মনিটরিং চলমান থাকবে।”
উচ্ছেদকালে অবৈধ দখলদারদের আকস্মিক হামলায় সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের ৪ কর্মী আহত হন৷ দখলদাররা দুটি ডাম্প ট্রাক, একটি পিকআপ ও চসিকের বিদ্যুৎ উপ-বিভাগের একটি এরিয়াল লিফট ভাঙচুর করে৷ এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিসিসি।
অভিযানের সময় উপস্থিত মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমের বক্তব্য জানতে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
সংঘর্ষের বিষয়ে চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ৫দিন ধরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি। আমরা পেটের দায়ে ব্যবসা করতে রাস্তায় নেমেছি।
“আজ হঠাৎ তারা পুলিশ নিয়ে এসে মারধর ও জরিমানা করে। হকাররা প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠলে পুলিশ টিয়ার সেল ও গুলি করে। এলোপাথাড়ি মেরে পুলিশ আমাদের কয়েকজনের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “মেয়র মহোদয়ের কাছে আমাদের দাবি উচ্ছেদ করা হকারদের পুনর্বাসন করা হোক। না হলে হকারদের একপাশে বসার সুযোগ দিক। এর বেশি কিছু আমরা চাই না।”
র্যাব-পুলিশ নিয়ে ফুটপাত উদ্ধার করল সিসিসি, হকারদের বিক্ষোভ
ফুটপাত উদ্ধারে ‘ব্যাপক অভিযানে’ নামছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
গাড়ি ভাংচুরের বিষয়ে নুরুল আলম লেদু বলেন, “আমরা কোনো গাড়ি ভাংচুর করিনি। নুপুর মার্কেটের অংশ দিয়ে তামাকুমণ্ডি লেইন থেকে কিছু লোকজন এসে গাড়ি ভাংচুর করেছে। তারা আমাদের কেউ না। হকারদের ফাঁসিয়ে দিতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”
গত ৩০ জানুয়ারি মাসিক সাধারণ সভায় নগরীর দখল হওয়া ফুটপাত উদ্ধারে ‘ব্যাপক অভিযান’ পরিচালনার ঘোষণা দেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
এর আট দিন পর গত বৃহস্পতিবার নগরীর পুরাতন রেল স্টেশন, নিউ মার্কেট ও জিপিও এলাকায় সব ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ শুরু করে সিসিসি।
চট্টগ্রামের বিআরটিসি মোড়, পুরাতন রেল স্টেশন, নিউ মার্কেট মোড়, জিপিও’র সামনের সড়ক ও কোতোয়ালী মোড়সহ পুরো এলাকার ফুটপাত হকারদের দখলে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সড়কের অংশ বিশেষও চলে যায় হকারদের দখলে।
এর আগেও বিভিন্ন সময় অতীতের মেয়ররা হকার উচ্ছেদে অভিযান চালালেও তীব্র বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের। উচ্ছেদ হওয়া ফুটপাত বেশিদিন দখলমুক্ত রাখা সম্ভব হয়নি।
উচ্ছেদের পর মুক্ত হওয়া ফুটপাত ও সড়কের অংশে দোকান বসানো বন্ধ করতে নোটিসও দিয়েছিল সিসিসি। তবে তাতে কাজ হয়নি।