“নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই, জীবনের নিরাপত্তা চাই। ক্যাম্পাসে নিরাপদে, সৎ সাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই,” বলেন এক শিক্ষার্থী।
Published : 04 Apr 2024, 08:25 PM
‘হিযবুত তাহরীর ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে’ কথা বলায় হুমকি পাচ্ছেন জানিয়ে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠিতে নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছয় শিক্ষার্থী।
বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন, প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাস এবং স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে তারা বুলিংসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক আলম ও অরিত্র ঘোষ।
ক্যাম্পাসে বড় ধরনের ‘নাশকতার আশঙ্কা’ করে অরিত্র বলেন, “হিজবুত তাহরীর বা শিবিরের সন্ত্রাসী আক্রমণ থেকে কতটা নিরাপদ বুয়েটের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি? রাষ্ট্রযন্ত্র মেধাবীদের এই ক্যাম্পাসকে কতটা নজরদারিতে রেখেছে বা এর প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করছে আমরা জানি না। যেকোনো বড় ধরনের নাশকতার ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলে হলি আর্টিজানের মত কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি আমরা ক্যাম্পাসের প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ।
“এ বিষয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা কতটুকু তাও আমরা জানি না। অতিসত্বর বুয়েট নিয়ে তাদের কার্যক্রম জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি।”
ক্যাম্পাসে নিরাপদে রাজনীতির পরিবেশ তৈরিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, “নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সকলের কল্যাণকে মাথায় রেখে আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপদে এবং সৎসাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই।
“আমরা চাই না আমাদের ক্যাম্পাস জঙ্গি তৈরির কারখানা হোক। আমরা চাই না দ্বীপ ভাই, সনি আপু ও আবরার ফাহাদ ভাইয়ের মত নির্মম ঘটনা ঘটুক, আমরা দ্বিতীয় কোনো হলি আর্টিজানের ঘটনাও চাই না। আমরা চাই না তন্ময় ভাইয়ের মত কেউ শিবিরের নৃশংস হামলার ক্ষত চিহ্ন নিয়ে জীবনযাপন করুক। আমরা সবাই জানি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত মুক্তবুদ্ধি চর্চার মুক্ত মাঠের মত, আমাদেরও সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার কাছে এই আকুল আবেদন।”
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের বিপরীত অবস্থানের মধ্যে ‘হত্যার হুমকি’ পাওয়ার অভিযোগ তোলেন এই ছয় শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে বুধবার বুয়েটের উপাচার্যের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে তারা লিখিত আবেদনও করেন। এরপর বিকালে ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আশিক আলম বলেন, “শুধু স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য যে পরিমাণ বুলিং করা হয়েছে আমাদের ওপর, তা অকথ্য। বুয়েটের অন্যতম নক্ষত্র আবরার ফাহাদ ভাইয়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু এরপর র্যাগিং বা এর সঙ্গে জড়িত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভঙ্গের অভিযোগ না থাকলেও ছাত্রদের উপর শুরু হয় পাবলিক হিউমিলিয়েশন এবং ডিফেমেশন, যা হয় শুধুমাত্র স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণে। জাতির জনকের আদর্শকে পালন করতে চাইলেই আমাদের সঙ্গে বুলিং ও নানাভাবে আমাদের হাস্যরস করা হয়।
“আমাদের হলের রুমে বঙ্গবন্ধু ও আপনার ছবি রাখতে চাইলেও আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনা’ বিষয়ক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও তার বিরোধিতা করে সমালোচনা করা হয়। যার কারণে এই ক্লাব প্রতিষ্ঠায় আমাদের পিছপা হতে হয়।”
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।
এরপর থেকে গত সাড়ে চার বছর প্রকৌশল শিক্ষার এই বিদ্যাপীঠে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধই ছিল। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাগম ঘটানোর কারণ হিসেবে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়। এরপর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে সোমবার বুয়েটে ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানির পর হাই কোর্ট বুয়েটে রাজনীতি নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করে।
তবে আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের কথাও জানিয়েছেন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করে আসা বুয়েট শিক্ষার্থীরা। বুয়েটকে ছাত্র রাজনীতি মুক্ত রাখতে তারাও প্রধানমন্ত্রী বরাবর ‘খোলা চিঠি’ দেন।
আরো পড়ুন-
হিযবুত-শিবিরের বিরুদ্ধে কথা বলায় ‘হুমকি’, নিরাপত্তা চাইলেন ৬ বুয়েট শিক্ষার্থী
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি না, যা বললেন বুয়েট উপাচার্য
বুয়েটে জঙ্গিবাদীরা তৎপরতা চালাচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বুয়েটের আন্দোলনকারীরা
আদালতের আদেশ ‘শিরোধার্য’: বুয়েট উপাচার্য
রাজনীতির বাধা কাটার পর ‘উচ্ছ্বসিত’ বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী
রাজনীতির প্রতি ঘৃণা ও ঘৃণার রাজনীতি: প্রসঙ্গ বুয়েট
বুয়েটে আন্দোলনকারীদের শাস্তি চাইলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা
বুয়েট জঙ্গিবাদের কারখানা হচ্ছে কিনা, খতিয়ে দেখে অ্যাকশন: কাদের