গত ২৮ মার্চ থেকে বুয়েটে ‘অচলাবস্থা ও অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে’ টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ‘বাধা সৃষ্টিকারীদের’ শাস্তির আওতায় আনতে বলছেন তারা।
Published : 01 Apr 2024, 03:31 PM
বুয়েটে ‘আন্দোলনের নামে অচলাবস্থা সৃষ্টি’ করার অভিযোগে ‘শিবির, হিযবুত তাহরীরসহ উগ্র মৌলবাদের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে’ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
সোমবার বুয়েট প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশে (আইইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলেন আইইবির সভাপতি ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুস সবুর।
তিনি বলেন, "বুয়েটের আপামর ছাত্র-ছাত্রীরা সব সময় জঙ্গি-মৌলবাদীদের প্রতিরোধ করেছে, যার প্রমাণ আমরা বারবার পেয়েছি। যার প্রমাণ আমরা বারবার পেয়েছি।
“জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী অবস্থানের জন্য ছাত্রলীগ নেতা বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আরিফ রায়হান দীপকে নজরুল ইসলাম হলে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা সব সময়ে সন্ত্রাসকে তীব্রভাবে প্রতিহত করার ফলে ক্যাম্পাসে সনি এবং আবরার হত্যাকারীদের ঠাঁই হয়নি।”
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ‘প্রগতির চাকাকে উল্টে দিয়ে’ বুয়েটে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বারবার বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।
তিনি বলেন, “একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী উগ্র মৌলবাদীদের মাধ্যমে এ পবিত্র ক্যাম্পাসকে ধীরে ধীরে মৌলবাদীদের আস্তানায় পরিণত করার চক্রান্তে লিপ্ত। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গত ২৮ মার্চ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অধিকারকে ভুলণ্ঠিত করে একটি চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের নেতৃত্ব দানকারী বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সরাসরি অভিযুক্ত করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়। আমরা বুয়েট ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতা-কর্মীরা, বুয়েটের এই অসহনীয় দমবন্ধ অবস্থার উত্তরণ চাই।“
আবদুস সবুর বলেন, “সর্বপ্রথম এ ক্যাম্পাসে অরাজকতাকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চাই। পাশাপাশি রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে ক্যাম্পাসকে উন্মুক্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আহবান জানাচ্ছি।"
এ সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন আবদুস সবুর।
গত ২৮ মার্চ থেকে বুয়েটে অচলাবস্থা ও অরাজকতা সৃষ্টির মাধ্যমে বুয়েটে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টিকারীদের তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীকে ‘বিনা তদন্তে বেআইনিভাবে’ হল থেকে বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।
বুয়েটের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে টাংগুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার ২৪ ‘উগ্র-মৌলবাদীদের’ বিরুদ্ধে বুয়েট কর্তৃপক্ষের অ্যাকাডেমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বুয়েটে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর, শিবিরসহ উগ্র-মৌলবাদী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে এবং এদের মদদ দানকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ছাত্র রাজনীতি চালুর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে বুয়েটে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান বন্ধ করতে হবে।
এদিকে এই সংবাদ সম্মেলন চলাকালে হাই কোর্ট এক আদেশে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয়।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।
এর ফলে দেশে প্রকৌশল শিক্ষার শীর্ষ এ বিদ্যাপীঠে ছাত্র রাজনীতি চর্চায় আর কোনো বাধা থাকছে না বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে ওই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে এর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে ফের আন্দোলন শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। পরে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
এরপর রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
এর মধ্যে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ। রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে তারা অবিলম্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালুর অনুমতি দেওয়ার দাবি জানায়। পরে বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী।