“আমাদের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে বলা হচ্ছে- আপনার সন্তানকে দেখে রাখুন, নয়তো পরে পাবেন না,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন এক শিক্ষার্থী।
Published : 03 Apr 2024, 10:16 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) ছাত্র রাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের বিপরীত অবস্থানের মধ্যে ‘হত্যার হুমকি’ পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ‘ছাত্রলীগ সমমনা’ ছয় শিক্ষার্থী।
‘হিযবুত তাহরীর ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে’ কথা বলায় এই হুমকি দেওয়া হচ্ছে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়টি উপাচার্যের কাছে নিরপত্তা চেয়ে বুধবার তারা লিখিত আবেদন করেন।
উপাচার্যের কাছে অভিযোগ জানানোর পর বিকালে বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা সংবাদ সম্মেলন আসেন।
সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুল আলম বলেন, “আমাদের জীবন নিয়ে থ্রেট দেওয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে আমরা আজকে উপাচার্য স্যারের কাছে সবকিছুর প্রমাণ নিয়ে লিখিত আবেদন করেছি, যেন এটি বন্ধ করা হয়। আমরা ছাড়াও আরো যারা এটার ভুক্তভোগী, তাদের নামও আমরা লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছি।”
বুয়েটে ২০১৩ সালে ছাত্রলীগ নেতা আরিফ রায়হান দ্বীপ খুনের প্রসঙ্গে টেনে আশিকুল আলম বলেন, “দ্বীপ ভাইয়াকে খুনের আগে তাকে নিয়েও এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিং করা হয়েছিল। এরপরও যখন উনি দমছিলেন না, তারপর উনাকে নৃশংসভাবে আমাদের বুয়েট প্রাঙ্গণে হত্যা করা হয়।
“একই কায়দায় আমাদের বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহাম্মেদ ভাইয়াকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও একই জিনিস হচ্ছে, তাই আমরা উদ্বিগ্ন।”
নানভাবে হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে আশিক বলেন, “আমাদেরকে পাবলিকলি এবং ব্যক্তিগতভাবেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যারা আমাদেরকে এই হুমকি দিচ্ছে, তাদের নামগুলো উপাচার্য স্যারের কাছে দেওয়া লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছি। আমাদের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘আপনার সন্তানকে দেখে রাখুন, নয়ত পরে পাবেন না’।
“এই কথাগুলোর মানে কী। এসব কিছু করা হচ্ছে কারণ আমরা হিযবুত তাহরীর এবং শিবিরের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি।”
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি।
এরপর থেকে গত সাড়ে চার বছর প্রকৌশল শিক্ষার এই বিদ্যাপীঠে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধই ছিল। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের সমাগম ঘটানোর কারণ হিসেবে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়। এরপর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে পাল্টা কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে সোমবার বুয়েটে ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানির পর হাই কোর্ট বুয়েটে রাজনীতি নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করে।
ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে আশিক বলেন, “এই শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করেছিল, তাদের ছয় দাবির কোথাও হিযবুত তাহরীর, শিবির বা ছাত্রদলের নাম উল্লেখ ছিল না। শুধু ছাত্রলীগের ইমতিয়াজ রাব্বিসহ আরো যারা সেখানে ছিল তাদের বহিষ্কার চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন কেন তারা শিবির বা হিযবুত তাহরীর নিয়ে কথা বলছে? এটা কিন্তু ভাববার বিষয়।
“আমরাই প্রথম শিবির এবং হিযবুত তাহরীরের পয়েন্ট এনেছি। তারা এখন আমাদের এই পয়েন্ট নিয়ে পুরো আন্দোলনকে ঘুরিয়ে দিতে চাচ্ছে।”
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, “হাইকোর্ট যেহেতু রায় দিয়েছে, আর উপাচার্য স্যারও যেহেতু বলেছেন যে হাই কোর্টের রায় শিরোধার্য, তাই যদি উপাচার্যের অনুমতি থাকে আমরা বুয়েটে প্রগতিশীলতার রাজনীতি চালু করতে চাই।”
সংবাদ সম্মেলনে আশিক ছাড়াও কেমিকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাগর বিশ্বাসও বলেন। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিন আজফার পান্থও রয়েছেন। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।
সম্প্রতি ‘বুয়েটে আড়িপেতে শোনা’ নামের বুয়েটের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি প্রাইভেট গ্রুপে ছাত্র রাজনীতি চালুর পক্ষে-বিপক্ষে নিয়ে অনলাইন ভোটে অংশ নেন ৪ হাজার ৭৯৬ জন। এর মধ্যে রাজনীতি চালুর পক্ষে ভোট পড়ে ২০টি, আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ৪ হাজার ৭৭৬টি।
বুয়েটে জঙ্গিবাদের তৎপরতা আছে কি না, খতিয়ে দেখতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী
এই অনলাইন জরিপের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাগর বিশ্বাস বলেন, “সেই পোলে যারা ভোট দিচ্ছে তাদের পরিচয় যদি না দেখা যেত, তাহলে এই রেজাল্ট হত না। অনেকেই এমন আছে যারা রাজনীতির পক্ষে। কিন্তু এখানে ভোট দিলে তাদেরকেও সামাজিকভাবে বয়কট করা হবে, এই ভয়ে তারা ভোট দেয়নি।”
সেইসঙ্গে ওই প্রাইভেট গ্রুপ যারা পরিচালনা করেন, তাদের পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাগর। তার অভিযোগ, “সেই গ্রুপগুলোতে ‘হেট স্পিচ’ ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের ছবি নিয়ে মকারি করা হচ্ছে।”
আরো পড়ুন-
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি না, যা বললেন বুয়েট উপাচার্য
বুয়েটে জঙ্গিবাদীরা তৎপরতা চালাচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বুয়েটের আন্দোলনকারীরা
আদালতের আদেশ ‘শিরোধার্য’: বুয়েট উপাচার্য
রাজনীতির বাধা কাটার পর ‘উচ্ছ্বসিত’ বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী
রাজনীতির প্রতি ঘৃণা ও ঘৃণার রাজনীতি: প্রসঙ্গ বুয়েট
বুয়েটে আন্দোলনকারীদের শাস্তি চাইলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা
বুয়েট জঙ্গিবাদের কারখানা হচ্ছে কিনা, খতিয়ে দেখে অ্যাকশন: কাদের