গত শনিবার তারা অভিযোগ করেছিলেন, গোপনে হিযবুত তাহরীর, ছাত্রশিবিরের মতো সংগঠন ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
Published : 01 Apr 2024, 07:03 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, তা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষালয়টির একদল শিক্ষার্থী।
সোমবার বিকালে কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এসময় তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু', ‘আজকের এই দিনে নেতা তোমায় পড়ে মনে' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এসব শিক্ষার্থীই শনিবার দাবি করেছিলেন, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও গোপনে হিযবুত তাহরীর, ছাত্রশিবিরের মতো সংগঠন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে ওই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়।
ওই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ অনেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে নতুন করে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
তাদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান।
এ ঘটনায় শুক্রবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান। পরে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
এরপর রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে ৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
শনিবার দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছেন আন্দোলনকারীরা। ওই দিন বিকালেই কয়েকজন শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘আবেগকে' ব্যবহার করে হিযবুত তাহরীর, ছাত্রশিবিরের মতো সংগঠন স্বার্থ হাসিল করছে।
পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে অবিলম্বে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি চালুর অনুমতি দেওয়ার দাবি জানায় ছাত্রলীগ। পরে বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংগঠনটির কয়েকশ নেতাকর্মী।
আর ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সোমবার হাই কোর্টে রিট মামলা করেন হল থেকে বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম।
ওই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা দুপুরে স্থগিত করে আদেশ দেয় হাই কোর্ট। এর ফলে দেশে প্রকৌশল শিক্ষার শীর্ষ এ বিদ্যাপীঠে ছাত্র রাজনীতি চর্চায় আর কোনো বাধা থাকছে না।
বিকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আজকে খুবই উচ্ছ্বসিত। বলতে গেলে, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, নিজের সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেয়েছি। এটি আমাদেরকে আজকে খুব বেশি খুশি করেছে।
“এই রায়ের মাধ্যমে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। তার সাধুবাদ হিসেবে আজ আমরা এখানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি।"
শ্রদ্ধা জানানোর সময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু সাইদ কনক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও বুয়েটের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিন আজফার পান্থসহ ১৪ জন শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন