কনস্টেবল মনিরুজ্জামান ছিলেন সাধারণ পোশাকে। তিনি যে একজন পুলিশ সদস্য, সেটি ছিনতাইকারীদের একবারও বলেননি।
Published : 03 Jul 2023, 05:53 PM
মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিতে বাধা দিয়েছিলেন কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার; আর তাতেই সামনে ও পেছন থেকে ঘিরে ফেলে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিন ছিনতাইকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া এই তথ্য সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটি শেষে শনিবার ভোরে ঢাকায় ফিরে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন মনিরুজ্জামান। সে সময় তিনি সাধারণ পোশাকে ছিলেন। তিনি যে একজন পুলিশ সদস্য, সেটি ছিনতাইকারীদের একবারও বলেননি।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- রাব্বি (২১), লিটন (২১) এবং কামরুল (৪৫)। তাদের মধ্যে প্রথমে রাব্বিকে গ্রেপ্তার করার পর তার দেওয়া তথ্যে লিটনকে ধরে পুলিশ। এছাড়া রাব্বির কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরিটি উদ্ধার করা হয়। আর কামরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, “গ্রেপ্তার তিনজনই স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, তারা মাদকাসক্ত এবং ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে সেই রাতে একত্রিত হয়েছিলেন।”
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার মো. গোলাম সবুর রোববার এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, তাদের তদন্তে এ পর্যন্ত তিনজন জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং আরও কেউ জড়িত থাকলে তা তদন্তে বের হয়ে আসবে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, ঈদের রাতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে হাতিরঝিলে এক টেলিভিশন সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনা এবং কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার নিহতের দুটি ঘটনাই আলোচিত হয়েছে।
৪০ বছর বয়সী মনিরুজ্জামান তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি শেরপুরে। কোরবানির ঈদের ছুটি শেষে শনিবার ঢাকায় ফিরে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ফার্মগেইট এলাকায় ছুরিকাঘাতের শিকার হন।
পরে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল, তার একটি বিবরণ গ্রেপ্তার তিন ছিনতাইকারীর বরাতে সংবাদ সম্মেলনে দেন পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হয়ে অন্য একটি বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মনিরুজ্জামান। এ সময় তিনজন ছিনতাইকারী তার পিছু নেয়।
“একজন মনিরুজ্জামানের সামনে দাঁড়িয়ে মানিব্যাগ নিতে চায়। কিন্তু সে বাঁধা দেয়। পরে পেছন থেকে একজন মনিরুজ্জামানের উরুতে ছুরি মারে এবং আরো আঘাত করে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে আরো পশ্চিমে চলে যায়।“
রাব্বি, লিটন ও কামরুলের নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মাদক, দস্যুতার চেষ্টা, ডাকাতির মামলা আছে বলেও জানান পুলিশের এই অতিরিক্ত কমিশনার।
এদিকে সাংবাদিক আহতের ঘটনায় জড়িতদেরও ‘প্রায় শনাক্ত করা হয়েছে’ বলে জানান তিনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় ১৪৫ জন ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে পুলিশের হাতে। এছাড়া ঈদের আগে ১ হাজারের বেশি ছিনতাইকারীকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কনস্টেবল মনিরুজ্জামান খুন ‘ছিনতাইকারীর’ হাতে, গ্রেপ্তার ৪
ঈদের ছুটি শেষে চির ছুটিতে কনস্টেবল মনিরুজ্জামান