সহিংসতা নেই, তা ইসিকে স্বস্তি দিলেও অস্বস্তির কারণ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে ভোটারদের আগ্রহ না থাকা।
Published : 22 Jun 2023, 01:26 AM
জাতীয় নির্বাচনের আগে ইভিএমে পাঁচ সিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারায় ইসিতে স্বস্তির ভাব আনলেও ‘অংশগ্রহণমূলক’ না হওয়া এই নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের অনুষ্ঠিত এই সিটি নির্বাচনকে নিজেদের জন্য পরীক্ষা হিসেবেই নিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি, বিশ্লেষকরাও তাকিয়ে ছিল ইসির কাজ দেখতে।
তবে প্রথমেই ধাক্কা খায় সব দলের না আসাটা। জাতীয় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে সাড়াই দেয়নি।
ফলে অনেকটাই নিরুত্তাপ হয়ে পড়ে এই নির্বাচন। তার মধ্যে গাজীপুরের ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটে জিতে চমক দেখালেও বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেটে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর জয় অনুমেয়ই ছিল। সেটাই ভোটার খরার কারণ মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ধারণা অনুযায়ী গাজীপুরে ৪৮.৭৬%, বরিশালে ৫১%, খুলনায় ৪৮.১৭ %, সিলেটে ৪৬.৭১ % ও রাজশাহীতে ৫৬.২০ % ভোট পড়ে।
অথচ রাজশাহীতে ২০০৮ সালে ভোটের হার ছিল ৮১.৬১%। ২০১৩ সালে ছিল ৭৬.০৯%, ২০১৮ সালে ছিল ৭৮.৮৬ শতাংশ। সিলেটসহ অন্য সিটি করপোরেশনেও চিত্রটা ছিল তেমনই।
জাতীয় নির্বাচনের পথে পাঁচ সিটি ভোটের সার্বিক মূল্যায়নে নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরর ডটকমকে বলেন, “আগের পাঁচটি নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে এবার সিটি নির্বাচনে একদিকে স্বস্তি রয়েছে। এবার কোথাও সহিংসতা ছিল না, অনিয়ম দেখা যায়নি।
“অস্বস্তি হচ্ছে- সব দলের অংশগ্রহণ ছিল না। নির্বাচনটাকে লেজিটিমেট বলতে গেলে সব দলকে আসতে হবে। এবার ভোটের হারও ৫০ শতাংশের আশপাশে। গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ড ৭০-৮০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিটাই আশা করে।”
বরিশাল-খুলনা: দুই নগরেই এক ভাবনা, কেন্দ্রে ভোটার যাবে তো
সব দলকে ভোটে পাওয়ার আশায় আছি, ইইউকে সিইসি
সিটি নির্বাচন শেষ হলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ‘আসল চ্যালেঞ্জ’ই এখন বাকি রয়েছে বলে মনে করেন আলীম।
তিনি বলেন, “সিটি নির্বাচনে সব দল না এলেও জাতীয় নির্বাচনে সব দল আসবে, তা আশা করা যায়। সব দলকে ভোটে আনা ইসির কাজ না হলেও একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সবাই দেখতে চায়। এটাই বড় চ্যালেঞ্জ।”
যে সিটি ও সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন হয়েছে, সেখানে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে সেই দায়িত্বে থাকবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সেক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ ভিন্ন রকম থাকতে পারে। এ চ্যালেঞ্জটা কমিশনকে নিতে হবে, বলেন আলীম।
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান ইসিকে নতুন করে একটা প্রস্ততি নিতে হবে ব্যালট পেপারের ভোট নিয়ে। সব নির্বাচনই ইভিএমে করেছে ইসি। সামনে ৩০০ আসনেই ব্যালট পেপারে করবে।
“সামনে হয়ত একটি উপনির্বাচন ব্যালট পেপারে হচ্ছে। সেজন্য ব্যালট পেপারে ভোটের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সমস্যা চিহ্নিত করে প্রস্তুতি নিতে হবে,” বলেন আলীম।
দায়িত্ব নেওয়ার দেড় বছরে কয়েকশ’ নির্বাচন করেছে এ কমিশন। সিটি, পৌর, সংসদীয় আসনের উপনির্বাচসহ সবগুলোই ইভিএমে ভোট হয়েছে। এবার সংসদ নির্বাচনের দেড়শ’ আসনে ইভিএমে করার পরিকল্পনা নিয়েই অগ্রসর হলেও আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে শেষ সময়ে সিদ্ধান্ত এল, ৩০০ আসনেই ব্যালট পেপারে ভোট করবে।
বুধবার রাজশাহী ও সিলেটে ভোট শেষের পর নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সামনে এসে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানান সিইসি হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, “আমরা সন্তুষ্ট বোধ করছি। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা অবাধে, নির্বিঘ্নে এসে ভোট দিয়েছেন। কোথাও কোনো বাধা পেয়েছে বলে শুনিনি, তথ্য পাইনি। কাজেই সার্বিকভাবে আজকের নির্বাচনগুলো ভালো হয়েছে।”
সিটি নির্বাচনে ৫০% ভোটই যথেষ্ট: সিইসি
‘ক্রিটিক্যাল’ এই নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, স্থানীয় এই নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট পড়াটা ‘গুড এনাফ’, যদিও ৬০-৭০ শতাংশ হলেও তা হত ‘এক্সিলেন্ট’।
তবে সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা এর চেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, “আমাদের সময়ে বিশেষ করে ক্রিটিক্যাল নির্বাচনগুলো যে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন, এ নির্বাচনগুলো ভালো হয়েছে। এটা আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় নির্বাচনটাকে যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটাতে ভোটাররা খুব উৎসাহিত হবেন। সেখানে ভোটাররা আগ্রহান্বিত হবেন ভোটকেন্দ্রে যেতে; সেটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক।”
“ভবিষ্যতেরটা আমরা ভবিষ্যতে দেখব, তবে আমরা আশাবাদী,” একইসঙ্গে বলেন তিনি।
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে কমিশন। এরমধ্যে নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মতভেদ কাটার লক্ষণ এখনও দেখা গেলেও তা ঘুচে যাওয়ার আশায় রয়েছেন সিইসি।
বছরের শুরুতেও তিনি বলেছিলেন, “আমরা আশা করি যে অচিরেই মতপার্থক্যটা দূর হয়ে যাবে। শেষমেষ সব দল নির্বাচনে আসবে, সে বিষয়ে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছি।”
তেমন ভোটের প্রত্যাশা রেখেই হাবিবুল আউয়াল বলেন, “যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, তাহলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।”