এখনও নিরাপত্তাহীনতায় বাইরে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না পুলিশ সদস্যরা। যেভাবে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বাইরের কার্যক্রম শুরু করতে বেগ পেতে হবে, বলেন তারা।
Published : 12 Aug 2024, 09:48 AM
তীব্র গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়া দেশের পুলিশি ব্যবস্থা সাত দিনেও স্বাভাবিক হয়নি। সীমিত পরিসরে চলছে কাজ।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশে অধিকাংশ থানার কার্যক্রম চালুর তথ্য দেওয়া হলেও নিরাপত্তাজনিত কারণের পাশাপাশি আরও কিছু কারণে এখনও নিয়মিত অপারেশনাল কাজে নামতে পারেনি পুলিশ।
এখনও কাজে যোগ দেননি বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য। প্রাথমিকভাবে সেনা প্রহরায় থানাগুলোকে সচলের চেষ্টা চলছে। এরই প্রয়াস হিসেবে সাদা পোশাকের সীমিত জনবল দিয়ে নামমাত্র সাধারণ ডায়েরি (জিডি) কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে কিছু থানা।
যারা যোগ দিয়েছেন তারা বলছেন, এখনও নিরাপত্তাহীনতায় বাইরে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না তারা। কাজে যোগ দিতে জুনিয়র অফিসারদের বেশ কিছু দাবি-দাওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা।
এছাড়া থানাগুলোতে যেভাবে পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও তাদের বাইরের কার্যক্রম শুরু করতে বেগ পেতে হবে।
বোরবার বিকাল পর্যন্ত সারাদেশে ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৫৯৯টর কার্যক্রম চালুর দাবি করে পুলিশ সদর দপ্তর।
থানার অপারেশনাল কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য বলছে, রোববার বিকাল ৩টা পর্যন্ত মেট্রোপলিটনের ১১০টি থানার মধ্যে ৯৭টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫০২টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ছাত্র-জনতার তুমুল গণবিক্ষোভের চাপে ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে একের পর এক ঢাকার থানাগুলোতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার খবর আসতে থাকে।
তবে ঢাকার বেশির ভাগ থানায় হামলা হলেও অক্ষত রয়েছে রমনা থানা। তাদের কোনো গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়নি, কিংবা কোনো সদস্য সহিংসতায় আহত হননি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। নির্দেশনা অনুযায়ী থানার কার্যক্রম চালু রয়েছে। স্বল্প পরিসরে কাজ চললেও থানার সবাই এখনও বাইরে যাওয়ার সাহস করছেন না; সবাই থানার ভেতরেই দায়িত্ব পালন করছেন।
রোববার রমনা থানায় ঢুকতেই দেখা গেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গেইটে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। কেউ থানায় প্রবেশ করতে চাইলে তারা পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। থানায় আসার কারণও জিজ্ঞাসা করছেন তারা।
গেইট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই কয়েকজন সেবাপ্রার্থীকে দেখা গেল। তারা পারিবারিক কারণে জিডি করতে এসেছেন। ডিউটি অফিসার তাদের সঙ্গে কথা বলে সেবা দিচ্ছিলেন।
পাশেই বসা থানার টেলিফোন অপারেটর। তবে কোনো সদস্যকেই পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়নি।
থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, “আমার থানার কোন ফোর্স আহত হননি, তাদের মাধ্যমেও কেউ আহত হননি। অনেকে তাদের সহকর্মীদের হতাহতের ঘটনায় ট্রমাটাইজড হয়ে গেলেও আমি মানষিকভাবে পূর্ণ সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি। তারাও সকলেই থানায় আছেন।
“এখানে জিডি ও মামলা নেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের বাইরে কোনো মুভমেন্ট নেই। বাইরের অপারেশনাল কার্যক্রম এখনও আমরা শুরু করতে পারিনি।”
তবে ঠিক বিপরীত চিত্র রাজধানীর আরেক প্রান্তের থানা মোহাম্মদপুরের।
প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করার পর পরই ৫ অগাস্ট বিকালে মিছিল থেকে মোহাম্মদপুর থানার প্রতিটি রুমে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। পাশাপাশি অস্ত্রসহ সব কিছু লুট করা হয়, আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় অবশিষ্ট সব।
শনিবার মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পুড়ে যাওয়া মোহাম্মদপুর থানা পরিষ্কার করেছেন। ফলে আসবাবপত্র না থাকলেও কয়েকটি রুম পরিষ্কার দেখা গেছে।
রোববার এ থানায় গিয়ে দেখা যায়, সেনা সদস্যরা থানা ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। ভেতরে আনসার সদস্যদের দেখা গেলেও ছিলেন না কোনো পুলিশ সদস্য। থানার ডিউটি অফিসার, ওসিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের রুমে ভাঙা টেবিল ছাড়া কিছুই নেই।
থানার ঈমাম দিদারুল ইসলাম বলেন, থানার নামাজ ঘরের এসি, ফ্যানও খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি কোরআন শরীফ রাখার একটি র্যাক ছিল, কোরআন ফেলে দিয়ে সেই র্যাকটিও নিয়ে গেছে।
"থানার বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে থানায় সেবা দেওয়ার মতো পরিস্থতি না থাকায় তারা এসে এসে চলে যান।"
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক জানান, তার সবগুলো থানা (তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর ও হাতিরঝিল) চালু হয়েছে। তবে সব থানায় এখনই জিডি-মামলা করা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত তেজগাঁও, হাতিরঝিল ও শেরেবাংলা নগর থানায় মামলার এজাহার দায়ের করা যাচ্ছে।
পল্টন ও মতিঝিল থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের থানাতেও কার্যক্রম বলতে শুধুমাত্র জিডি নেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হারানো জিডি বা পারিবারিক কারণে জিডি নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের অনেক সদস্যই এখনও কাজে যোগ দেননি।
পল্টন থানার এক পুলিশ সদস্য বলেন, “আমরা এখনও বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছি। পোশাকসহ চলাফেরা তো অনেক পরের হিসেব, বাইরে বের হলে পুলিশ পরিচয়ই দিচ্ছি না আমরা। পুলিশের আইডি কার্ডও সঙ্গে রাখছি না।”
তিনি বলেন, “পুলিশের সব সদস্য থানায় আসলেও পুলিশের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। অনেক থানার সকল যানবাহনিই পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই দায়িত্ব পালনের স্বার্থে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে বেগ পেতে হবে থানা পুলিশকে।”
আরও পড়ুন
গাড়ি নেই, অস্ত্র লুট, পুলিশ এখন কী করবে?
পোশাক বদলাচ্ছে পুলিশের, কর্মবিরতি প্রত্যাহার
ঢাকার থানায় ফেরেনি পুলিশ, রাত হলেই আতঙ্ক
থানায় থানায় লুটপাট, নাশকতার চিহ্ন
ঢাকার কয়েক থানায় হামলা, আগুন
ছাত্র সমন্বয়কদের নিয়ে থানায় থানায় 'নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি'