অপরাধ করে ধরা পড়ার পর থানায় নিলেও ছেড়ে দিতে হচ্ছে পুলিশকে। কারণ, আদালতে চালান দেওয়ার মত সুযোগও নেই।
Published : 12 Aug 2024, 01:22 AM
ঢাকার তেজগাঁও থানায় ঢুকতে গেলে ফটকে আনসার সদস্যের বাধা। সংবাদকর্মী পরিচয় দেওয়ার পর ভেতরে যাওয়ার অনুমতি মিলল। ভেতরে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি হাতেগোনা পুলিশ সদস্যদের দেখা গেল। পুলিশের সবাই ছিলেন সাদা পোশাকে, পুরো থানায় ইউনিফর্ম পরা একজন পুলিশও ছিলেন না।
ওসি ও ডিউটি অফিসারের রুম ফাঁকা, প্রায় অন্ধকার। একজন পরিদর্শকের কক্ষে তালা থাকলেও অন্য এক পরিদর্শকের কক্ষের দরজা ভেড়ানো। সেই পরিদর্শক সাদা পোশাকে বসে আছেন চেয়ারে।
রাজধানীর তেজগাঁও থানার এ দৃশ্য শনিবার দুপুরের। অথচ এই থানার কার্যক্রম শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, রোববার বিকাল পর্যন্ত সারা দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৫৯৯টির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি মহানগরের ১১০টি থানার মধ্যে ৯৭টি।
জেলা পর্যায়ের ৫২৯টির মধ্যে ৫০২টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে।
তবে থানা চালু হওয়া আর স্বাভাবিক কার্যক্রম চলার মধ্যে যে দুস্তর পার্থক্য তা পুলিশ কর্মকর্তাদের তথ্যে উঠে এসেছে। সব পুলিশ সদস্য কাজে ফিরলেও পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হবে, তা বলা মুশকিল।
ঢাকার বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেগুলোতে পুলিশ এসেছে, সেগুলোতে কেবল সাধারণ ডায়েরি করা হচ্ছে।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের আগুন গিয়ে পড়ে থানার ওপর। দেশের সিংহভাগ থাকায় আক্রমণ করে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সরকার জানিয়েছে ৪২ জন পুলিশ হত্যার শিকার হয়েছে, তবে সংখ্যাটি নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। তারা আরও আক্রমণের ভয়েই মূলত থানায় যাচ্ছেন না।
এসব হামলায় নথিপত্র, আসবাবপত্রের পাশাপাশি পুড়ে গেছে থানায় থাকা সব গাড়ি। লুট হয়ে গেছে অনেক অস্ত্র ও গুলিও।
সব মিলিয়ে কত গাড়ি পুড়েছে, কত অস্ত্র লুট হয়েছে, সেই সংখ্যাটি এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদরদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
যোগাযোগ করা হলে সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “এ ব্যাপারে কাজ চলছে, খুব শিগগির এ ব্যাপারে জানতে পারবেন।”
তবে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, খোয়া যাওয়া অস্ত্র নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। কারণ, এগুলো অপরাধীদের হাতে পড়লে সেটি জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। যেহেতু পুলিশের পক্ষে এখন স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো প্রায় অসম্ভব, সেহেতু অপরাধীদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখাও কঠিন হবে।
তেজগাঁও থানার মতই চিত্র অন্যান্য থানাতেও। নরসিংদী, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিরাও প্রায় একই রকম তথ্য দিচ্ছেন। তারা দৃশ্যমান কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখতে পাচ্ছেন না।
অপরাধ করে ধরা পড়ার পর কী হচ্ছে?
শনিবার তেজগাঁও থানায় থাকা সেই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সময় একটি বিষয় নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন দেখা গেল। তিনি জানালেন, সেনাবাহিনী সদস্যরা ২ ছিনতাইকারীকে দিয়ে গেছে। কিন্তু তাদেরকে আদালতে পাঠানোর মত ব্যবস্থা নেই।
“ছিনতাইকারীদের কোথায় পাঠাব ভাই? আমার ফোর্স কই, গাড়ি কই, নিরাপত্তা কই। আদালতেরও কার্যক্রমও তো স্বাভাবিক না।”
তাহলে এদেরকে নিয়ে কী করবেন জানতে চাইলে তার উত্তর, “দেখি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কী করা যায়।”
এই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত বিষয়টিও এখন স্বাভাবিক নয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উপকমিশনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তিনি এখন অফিস যাচ্ছেন না।
কারণ কী- এই প্রশ্নে জবাব এল, “কোনো অফিস অর্ডার নেই। কিন্তু আমার সিম নিয়ে গেছেন একজন অফিসার। এই সিম নিয়ে যাওয়ার অর্থ হল সেখানে আমার আর পোস্টিং নেই। এখন নতুন কোনো অর্ডার হলে সেখানে আমাকে যেতে হবে।”
পরে তথ্য মিলে, সেই দুই ‘ছিনতাইকারী’কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
রোববার বিকালে আসাদগেট এলাকায় বাসের এক নারী যাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার সময় হাতেনাতে আটক করে পিটুনি দিয়ে সেনাবাহিনীকে খবর দেয় জনতা। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষে সেই তরুণকে আটক করার কোনো আইনি সুযোগ নেই। পরে তাকে ছেড়ে দিতে হয়।
এলাকাটি পড়েছে শেরেবাংলা নগর থানার অধীনে। এই থানায় সীমিত পরিসরে পুলিশ সদস্য ফিরেছেন। থানার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, “আমরা যাব কীভাবে আর তাকে এনেই কী করব? আসামি আনার মত আমাদের একটি গাড়ি নেই, সব তো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
“তাকে ধরে আনতে হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার আদালতে পাঠাতে হবে। সেখানেই বা পাঠাব কী করে?“
সন্ধ্যায় তেজগাঁওয়ে বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর করে লুটপাটের চেষ্টা করে একদল মানুষ। এটি দেখে এগিয়ে এসে তাদেরকে আটক করে স্থানীয়রা।
এরপর সেনাবাহিনীকে খবর দিলে তারা আসে ঘটনাস্থলে। সেখানেও যায়নি পুলিশ সদস্যরা। ফলে সন্দেহভাজন ডাকাতদেরকে এই ঘটনাতেও গ্রেপ্তার করা যায়নি।
তেজগাঁও থানার ওসি মো. মোহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এই ধরনের কোনো তথ্য পাইনি।”
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মশিউর রহমান বলেছেন, “কোনো তথ্য পেলেও আমাদের যাওয়ার মত কোনো অবস্থা নেই। আজকে আমরা কেবল পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ সরালাম।”
সরকার পতনের পর থেকে প্রতি রাতেই ঢাকা বা ঢাকার বাইরে পাহারা বসিয়ে দেশবাসী যে ডাকাতদের আটক করছে, তাদের বলতে গেলে কারো বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
নিষ্প্রাণ আদালত
ঢাকার বিচারিক আদালতের কর্মীদের কাছ থেকে তথ্য মিলেছে, এখন নতুন আসামি যাচ্ছে না বললেই চলে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, “আদালতের ডেক্সের কার্যক্রম চলছে। তবে থানা থেকে কোনো আসামি বা মামলার কোনো নথিও আসছে না।”
তাহলে এখন কী হচ্ছে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আদালতের অন্য কার্যক্রম অনুযায়ী কিছু কিছু জামিন হচ্ছে, জামিন বাতিলও হচ্ছে, তবে সবই আগের মামলার।”
কেবল থানা থেকে নয়, কারাগার থেকেও আসামিদের আনা হচ্ছে না নিরাপত্তাহীনতার কারণে। কেবল কাগজ পাঠানো হয়, কাজ হয় সেটি নিয়েই।
আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ থাকলেও আতঙ্কের কারণে কেউ পোশাকে নেই বলেও জানিয়েছেন সেই কর্মকর্তা। এমনকি তিনি নিজে তার পরিচয়টিও গোপন করার অনুরোধ করেছেন।
থানা ধ্বংসে নিয়ন্ত্রণহীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, চলছে লুটপাট
সরকার পতনের রাতে ঢাকার থানাগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটিতে আটকে থাকা পুলিশ সদস্যরা রাতের বেলায় ফাঁকা গুলি করতে করতে সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ বা রাজারবাগে পুলিশ লাইনসে গিয়ে আশ্রয় নেন।
পরদিন থেকে পুলিশবিহীন বাংলাদেশে দেখা দেয় নজিরবিহীন নিরাপত্তাহীনতার বোধ। লুট করতে আসা ডাকাতদলকে ঠেকাতে সারাদেশেই নির্ঘুম রাত কাটছে বহু মানুষের।
সারাদেশেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাসভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণি বিতানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের খামারও লুট হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ নেই, কেবল এই কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জে গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠান থেকে সব মালামাল ট্রাকে করে, ভ্যানে করে বা অন্য কোনো গাড়িতে করে যার যা খুশিমত লুটে নিয়ে গেছে।
জাপানের গুমনা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জাকির হোসেন পাবনার ঈশ্বরদীতে একটি রিসোর্ট গড়েছিলেন। তিনি দেশে থাকেন না, তার ভাই এটি চালান। পরিবারটি রাজনীতিতেও জড়িত নয়। সেই রিসোর্টটিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
জাকির আক্ষেপ করে ফেইসবুকে লিখেছেন, “একজন প্রবাসীর হালাল রুজিতে নির্মিত স্বপ্ন... এটাই আমার স্বপ্নের কুটির। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নের অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে অত্র এলাকার কিছু চিহ্নিত দুষ্কৃতকারী রাতের অন্ধকারে লুটপাট করে জ্বালিয়ে দিয়েছে। ক্ষতি যাই হোক, আমি চাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক এবং এই ভ্যান্ডালিজমের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক দুষ্কৃতিকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।”
ওয়ার্ল্ড ভিশনের কাজ ছেড়ে কৃষি উদ্যোক্তা হয়েছিলেন আহসানুল কবির ডালিম। তিনি রাজনীতিতে জড়িত না থাকলেও গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে আন্দোলনে ছিলেন।
চাকরি ছেড়ে সাত বছর আগে বগুড়ার সদরের লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের কাজী নুরুইল গ্রামে একটি খামার গড়ে তুলেছেন। তার ‘কর্ষণ’ নামে এই উদ্যোগ বেশ সাড়া জাগিয়েছে। ফিলিপাইন থেকে এনে কালো আখ দেশে জনপ্রিয় করেছেন তিনি। আগাম টক বড়ই, আগাম মিষ্টি বড়ইও চাষ করেন।
পাশাপাশি গরুর খামার, লাইব্রেরি ও নেট পলিহাউজ গড়ে তুলে এলাকায় কৃষি বিপ্লবের চেষ্টা করছেন।
গভীর রাতে তার খামারে আক্রমণ করে তিনটা গরু, সাড়ে ১১ লাখ টাকা, দুটি ফ্রিজ, আসবাবপত্র, ক্যামেরা, ল্যাপটপ, সব লুট করে নেওয়া হয়। বাকি অবকাঠামো পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তছনছ করা হয় লাইব্রেরি আর খামার।
কারা এই কাজ করেছে- এই প্রশ্নে ডালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাত থেকে আটজনকে আমি চিনি, তারা বিএনপি ও শিবিরের সঙ্গে জড়িত। বাকি ১৮ থেকে ২০ জন ছিলেন মুখোশধারী।
তারা কী বলছিল- এই প্রশ্নে এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, “তারা বলছিল তোর গণজাগরণ মঞ্চ কই “
পুলিশই এখন নিরাপত্তার খোঁজে
নির্ধারিত যেসব জায়গার পোশাকধারী গুটি কয়েক পুলিশ সদস্যকে দেখা গেলেও তাদের পক্ষে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ সদস্যরাই দেশবাসীর নিরাপত্তায় কাজ করার কথা। এখন উল্টো পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তায় থাকতে হচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি এমনকি আনসার সদস্যদের।
পোশাক পরে থানায় না থাকার বিষয়ে তেজগাঁও থানার সেই কর্মকর্তা বললেন নিরাপত্তাহীনতার কথা।
তিনি বলেন, “বোঝেন তো ভাই, রাস্তায় এখনো শিক্ষার্থীরা আছেন। তারা ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। তাছাড়া ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন।”
তেজগাঁও থানায় সেই কর্মকর্তার কক্ষে সেনাবাহিনীর এক সদস্য এসে জানান, এক ব্যক্তি তার জব্দ করা মোবাইল ফোন নিতে এসেছেন। তাকে থানায় ঢুকতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যায় কিনা।
ওই কর্মকর্তা অনুমতি দিলেও যে পুলিশ সদস্য মোবাইল জব্দ করেছেন তার সঙ্গে কথা বলে আসার পরামর্শ দেন সেই সেনা সদস্য।
তেজগাঁও থানায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক কম। এখানে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হলেও ভেতরে খুব একটা ক্ষতি হয়নি।
ওই থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন ৫ অগাস্টের পর থেকে থানায় আসছেন না। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অধীনে মোহাম্মদপুর থানার অবস্থা করুণ। সেটি পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কার্যক্রম শুরু করার মত কোনো অবস্থা নেই। শেরে বাংলা নগর থানার চিত্রও একই রকম।
দুটি থানাতেই আনসার সদস্যদের পোড়া ভবন আর কঙ্কালসার গাড়িগুলোর নিরাপত্তা দিতে দেখা যায়। তবে থানা ঘিরে উৎসুক জনতাকে দেখা যায়।
দুই থানার ওসির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত ও সরকারি মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
রাজধানীর থানাগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপকমিশনারদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
ডিএমপির বিশেষ শাখা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট-সিটিসিসির এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করা হলে জানান, তিনি শনিবার অফিসে গিয়ে কিছুক্ষণ থেকে চলে এসেছেন।
এই শাখায় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান কাজে আসছেন না। তারও মোবাইল ফোন বন্ধ।
ওই কর্মকর্তা এর আগে ডিএমপির ক্রাইম বিভাগে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, “পুলিশের মনোবল ভেঙে গেছে, সেটা ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগবে।”
তেজগাঁও বিভাগের একটি থানার পরিদর্শকের ব্যক্তিগত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে বিশ্রামে আছে বলে জানান।
“গণ্ডগোলের সময় টানা চার রাত একই পোশাকে ছিলাম। গোসলও করতে পারিনি। আঘাতও পেয়েছি। এ জন্য বিশ্রামে আছি।”
গত ৬ অগাস্ট দায়িত্ব পেয়ে নতুন পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও এখনও সেই নির্দেশ শোনেননি সিংহভাগ পুলিশ সদস্য।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন পুলিশ সদস্যদেরকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এর মধ্যে কাজে না এলে তাদেরকে পলাতক ঘোষণা করা হবে।
কাজে যোগ না দেওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিয়ে ‘নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি’ গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদস্যরা আইজিপির কাছে ১১ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। তবে এই দাবিগুলো তাৎক্ষণিক পূরণ করা সম্ভব নয়।
যেমন ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ হত্যার বিচার, পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা, সারাদিনে ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি না করানো, নতুন বেতন কাঠামো, বার্ষিক নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিন থেকে বাড়িয়ে ৬০ দিন করা, অধঃস্থন কর্মচারীদেরও সোর্স মানি দেওয়া, ঝুঁকিভাতা বাড়ানো ইত্যাদি।
১১ দফা দাবির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এগুলোর বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যেগুলো সম্ভব সেগুলো নিয়ে কাজ করা হবে। বাকিগুলো আইজিপি মহোদয়ের ওখান থেকে পর্যায়ক্রমে কাজ করা হবে।”
সোমবার থেকে পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হবে বলেও মন্তব্য করেছেন এই কর্মকর্তা।