এলাকায় এলাকায় দল বেঁধে চলছে পাহারা। মধ্যরাতে মূল সড়কে লাঠি হাতে তরুণের দল গাড়ি থামার নির্দেশ দিলে জাগে ভয়।
Published : 11 Aug 2024, 01:59 AM
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরে ঢোকার মূল ফটক দিয়ে রাত ১১টার পর আর স্টিকার ছাড়া গাড়ি প্রবেশে নিষেধ করা হয়েছে। কেউ ঢুকতে হলে তাকে পরিচয় নিশ্চিত করে হেঁটে ঢুকতে হবে। অ্যাপার্টমেন্টগুলোর মূল ফটকও দিনের বেলায় এখন সারাক্ষণই আটকানো থাকে।
এ এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী নাহিদা খানম এখন সূর্য ডোবার আগেই চেম্বার থেকে বাসায় ফেরেন, দুটি মোবাইলের একটি বাসায় রেখে যান। ব্যাংক কার্ড-ক্রেডিট কার্ড কোনো কিছুই সঙ্গে রাখেন না, হাতে টাকা রাখেন সর্বনিম্ন। কারণ হল নিরাপত্তাবোধের অভাব।
নাহিদা বলেন, “ছিনতাইকারী বা অন্য কোনো অপরাধী যদি হানা দেয়, এখন তো পুলিশের কাছে যাওয়ারও সুযোগ নেই। এভাবে কতদিন চলবে? এভাবে কি থাকা যায়?”
প্রবল গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থানায় বেশুমার হামলার পর পুলিশ উধাও হয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রাজধানীসহ সারা দেশে এক ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি হয়েছে। রাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে এলাকায় এলাকায় চলছে পাহারা।
নির্জন সড়কে সড়কেও হুটহাট গাড়ি-অটোরিকশা থামিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’। থামলেও বিপদ, না থামলেও বিপদ। যারা জিজ্ঞেস করছেন, তারা পাহারার জন্য না কি অপরাধ করতে দাঁড়িয়েছেন, সেটি বোঝার সুযোগও নেই।
রাত গভীর হতেই ফেইসবুকে এই এলাকায় ওই এলাকায় ‘ডাকাত পড়েছে’ বলে লাইভ পোস্ট করা হয়। এলাকাবাসী একজোট হয়ে ‘ডাকাত’ ধরতে বের হয় মানুষ।
ধরাও পড়ছে কেউ কেউ, সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তাদের, কিন্তু এরপর কী হচ্ছে, সেটি আর জানা যাচ্ছে না, কারণ থানায় পুলিশ ফিরতে শুরু করলেও সেখানে আটক রাখার অবকাঠামো নেই লুটপাট আর অগ্নিসংযোগের কারণে।
টানা চারদিন এই পরিস্থিতির পর অবশ্য মানুষের দল বেঁধে পাহারায় আতঙ্ক কিছুটা কেটেছে। শুক্রবার ছুটির রাতে বিভিন্ন এলাকায় পাহারা পরিণত হয় ‘উৎসবে’। রাত্রিকালীন ক্রিকেট, গান-বাজনা, খিচুড়ি ভোজের আয়োজন করার খবর পাওয়া গেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে।
মানুষের আতঙ্ক কাটাতে সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বিজিবি মাঠে থাকার কথা জানিয়েছে।
সুযোগ পেলেই ভবনে হানা
সরকার পতনের পর থেকে ঢাকার সবচেয়ে বেশি ডাকাত আতঙ্কে থাকা এলাকাগুলোর মধ্যে একটি মোহাম্মদপুর। সন্ধ্যার পর থেকেই এ এলাকায় ছিনতাই-ডাকাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে গত চার রাত ধরে।
ডাকাত আতঙ্কে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক করতে শোনা গেছে প্রতি রাতেই। এক পর্যায়ে পুলিশের অনুপস্থিতে ডাকাত আতঙ্কে সড়কে নেমে পাহারার দায়িত্বে নেমে আসে এলাকাবাসী।
ধারাবাহিক এমন উদ্যোগে বাসিন্দাদের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে চাপা আতঙ্ক রয়েই গেছে, যার ফলে গভীর রাত পর্যন্ত চালু থাকা বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ১০টার মধ্যেই।
শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে মোহাম্মদপুর এলাকার শিয়া মসজিদ, চান মিয়া হাউজিং, নূরজাহান রোড, তাজমহল রোড, আদাবর, শেখেরটেক এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
লোকজন বলছেন, পুলিশ টহল না থাকায় আশপাশের বস্তি থেকে আসা ছেলেরা দল বেঁধে পিকআপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুযোগ পেলেই কোনো ভবনে হানা দিয়ে জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এদের হাতে লাঠি, ধারালো অস্ত্র দেখা যাচ্ছে।
আদাবর এলাকার বাসিন্দা বিউটি বলেন, "আজ বিকেলে অভিনব কৌশলে আমার বাসার ডাকাত এসেছিল। অ্যাম্বুলেন্সসহ এসে বাসার দারোয়ানকে বলে, রোগী আছে গেট খুলতে। পরে দারোয়ান গেট খুলে দিলে তারা কয়েকজন বাসার ভেতরে ঢুকে গেইটে তালা দিয়ে উপরে উঠতে থাকে।
"এ সময় দারোয়ানের সন্দেহ হলে বাসার মালিককে জানায়, মালিক সেনাবাহিনীকে ফোন দেয়। ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মসজিদের মাইকেও ঘোষণা দেয়। পরে সেনাবাহিনী এসে ৩-৪ জনকে নিয়ে যায়।"
চানমিয়া হাউজিংয়ের বাসিন্দা আরেফিন তানজীব বলেন, "গত কয়েক রাত ধরেই ডাকাত আতঙ্কে রাতের বেলা ঘুম হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর পরই মসজিদের মাইকে সতর্ক থাকতে বলার পর আর ঘুমানোর পরিস্থিতি থাকে না। তবে এলাকাবাসী পালাক্রমে এলাকায় পাহারা দিচ্ছে, বিষয়টা আতঙ্কের মধ্যেও কিছুটা স্বস্তির।"
আফতাব নওজাস চৌধুরী নামে ধানমন্ডির এক বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তার এলাকা থেকে ৯ জনকে ধরে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে এলাকাবাসী। তারা গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্সসহ এলাকায় এলাকায় যেত।
এই ডাকাত দল কারা?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এরা সবাই আশপাশের বস্তির বখাটে ছেলে, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যও থাকতে পারে। ধারালো অস্ত্র আর লাঠিসোঁটা নিয়ে এরা মূলত লুটপাটে বের হয়েছে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে নিয়ে যাচ্ছে।”
মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরের ডি ব্লকের গৃহিণী সোনিয়া ইসলাম ডাকাতের ভয়ে কোনো স্বর্ণের অলঙ্কারই ব্যবহার করছেন না। তিনি বাঁশি ও দেশীয় অস্ত্র রাখছেন নিরাপত্তার স্বার্থে।
"৪ রাত ধরে রাতে কোনো ঘুম নাই। স্থির হয়ে বসে থাকতেও পারি না, একটা আওয়াজেই আতঙ্কিত হই। ছুরি-বটি, বাঁশি, লাঠি সবকিছু হাতের কাছে রাখি, যেন ডাকাতদের শায়েস্তা করা যায়", শুক্রবার রাতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
মিরপুর-১০ নম্বর সেনপাড়া পর্বতা এলাকার বাসিন্দা শাফিন আহমেদের রাতে বাইরে হাঁটার অভ্যাস ছিল। কিন্তু এখন নিরাপত্তাহীনতার কারণে আর যাচ্ছেন না।
শাফিন বলেন, "দুইদিন আগে এলাকায় ডাকাত ধরা পড়েছিল। সবার চিল্লাচিল্লিতে জানতে পেরেছিলাম। এরপর থেকে মাইকিং করে সতর্ক করে মসজিদ থেকে। আর যেই আতঙ্ক এখন ঢুকেছে, রাতে ঘুমাতেই পারি না।
" বারান্দায় বার বার যাই। মেইন গেইটে লক্ষ্য করি। আমি জেগে থেকে বউ-বাচ্চাদের ঘুমাতে দেই। পুলিশ ছাড়া যে আমরা কতটা অনিরাপদ, সেটা টের পেলাম। এই অবস্থাটা আর ভালো লাগছে না।"
মিরপুর-১২ নম্বরের বাসিন্দা গোলাম রব্বানী বলছেন, "পুরাই একটা দম বন্ধ হওয়া পরিস্থিতি। ডাকাত আতঙ্কে আছি সব সময়। ছোট বাচ্চাটা বাইরে বের হতে চায়, কিন্তু যেতে পারি না। আবার যদি ছিনতাইকারী বা ডাকাতের কবলে পড়ি! এই পরিস্থিতির একটা সমাধান চাই। এভাবে আর চলে না।"
পল্লবী নতুন থানা এলাকার বাসিন্দা হায়াতুল ইসলাম টিটু বলেন, "বুধবার হঠাৎ রাত ৯টায় ইসিবি থেকে কালশী এলাকায় ডাকাত ঢোকার খবর পাই। এ সময় গোলাগুলিও হয় শুনেছি, তখন থেকেই চাপা আতঙ্ক।
"সেনাবাহিনী খবর পেয়ে তাদের কয়েকজনকে আটক করলে বেশিরভাগ ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় সটকে পড়ে। এরপর সেখানেও কয়েকজনকে স্থানীয়রা ধরলেও চাপা আতঙ্ক রয়েই গেছে।”
শুক্রবার দুপুরে কিছু লোক একাত্তর টাওয়ার দখলের চেষ্টা করছে বলে শুনেছেন টিটু। তিনি বলেন, "শুনলাম 'দলীয়' লোকরা দখলের চেষ্টা করছে। ডাকাতের খবর আর শুনিনি।"
মিরপুর-১২ নম্বরে অবস্থানরত শিক্ষার্থী জোবায়ের বিন আতাউর বলেন, "বৃহস্পতিবার রাত থেকে ৬টি গাড়ি ও কিছু মোটরসাইকেল নিয়ে ডিওএইচএস ও মিরপুর-১২ এলাকা পাহারা দেওয়া হচ্ছে। সতর্ক আছি। আল্লাহ না করুক, কেউ যদি আবার অ্যাটাক দিয়ে বসে!"
রামপুরা টিভি সেন্টারের বিপরীতে উলন রোডে বাসা নিয়ে থাকেন দুই বোন। তারা নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নাম প্রকাশ করতে চান না।
বড় বোন বললেন, “আমরা চতুর্থ তলায় থাকি। পাশে টিন শেডের একটা বাসা। রাত দুইটার দিকে শব্দ পেয়ে ফ্যান বন্ধ করে ব্যালকনি দিয়ে নিচে উঁকি দিয়ে দেখি প্রায় ১৫ জন মানুষ। কেউ লুঙ্গি-ট্রাউজার পরা। তাদের একজনের হাতে রামদায়ের মতো বড় অস্ত্র। আরও থাকতে পারে অন্ধকারে স্পষ্ট দেখা যায়নি।
“একজন দেয়াল বেয়ে ভেতরে গিয়ে বাসার গেইট খুলে দিল। তখনই বাসার মানুষের হইচই করে বের হলে আশেপাশের মানুষ আসার সঙ্গে সঙ্গে ওরা খুব কৌশলে এলাকার মানুষের সঙ্গেই মিশে গেল। রাম দা হাতে ব্যক্তিটাও কই হারিয়ে গেল “
“চার রাতের এক রাতেও ঘুমাতে পারিনি। এ কেমন ‘স্বাধীনতা’?”, বলেন তিনি।
রাতে সড়কে ‘তল্লাশি’ নিয়েও ভয়
শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে দেখা গেল তেজগাঁও এলাকায় ভিআইপি হোস্টেলের সামনে কয়েকজন তরুণ হাঁটাহাঁটি করছিল। তারা কালো গ্লাসের একটি গাড়ি দেখেই সেটি দাঁড় করিয়ে তল্লাশি করে। তাদের কারও কারও হাতে লাঠিও ছিল।
কিন্তু এই তরুণদের পরিচয় আগেভাগে নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই দোটানায় থাকে গাড়ির মালিক-চালকরা।
একটি গাড়ি তাদের সংকেত দেওয়ার পরও না দাঁড়ালে তারা হইচই শুরু কর দেয়। এরপর পাশেই পাড়া-মহল্লায় ডাকাতের অপেক্ষায় থাকা অন্য মানুষজনও হইচই শুরু করে দিলে মসজিদের মাইকেও ঘোষণা করা হয় যে, ‘এলাকায় ডাকায় ঢুকেছে, আপনারা সবাই নিরাপত্তা বজায় রাখুন, সতর্ক থাকুন।’
ভিআইপি হোস্টেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মনিরুল ইসলাম বলেন, “পোলাপান হুদাই গাড়ি খাড়া কইরা দেখে ভিতরে কী আছে। কোনো কোনো গাড়ি না খাড়াইলে তারা চিল্লাই। ডাকাত দেখে নাই কেউ এখানে।”
ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক আরও বেশি
বসতবাড়ির পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্যোগে পড়েছে মানুষ। মিরপুর-১১ নম্বরের মোহাম্মদিয়া মার্কেটে শাড়ির দোকান রয়েছে ইসমাইল হোসেনের। সেখানে লুট করতে কেউ হানা দেয় কিনা সেই চিন্তায় নিজেই পাহারায় বসেছেন।
তিনি বলেন, "এখানে তো এমনিতেই গার্ড থাকে। কিন্তু এখন যা অবস্থা, দল বেধে ২০-৩০ জন আসে ডাকাতি করতে৷ তাই আমরাও ৪০-৫০ জন মিলে সারা রাত জেগে মার্কেট পাহারা দেই। এছাড়া তো কিছু করার নাই।"
এ রকম অবস্থায় নিরাপত্তার শঙ্কায় টাকা তোলা যাচ্ছে না শহরের বেশিরভাগ এটিএম বুথ থেকে। শ্যামলীর একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মী শমসের আলী বলেন, "যেই সিকিউরিটি কোম্পানি গাড়িত কইরা ট্যাকা আনা-নেয়া করে তারা আর সার্ভিস দিতেছে না। কখন কে মাইরা ধইরা নিয়া যায় এই আতঙ্ক সবার মইধ্যে। যার কারণে বুথে টাকা আসে না আইজকা নিয়া তিন দিন।"
শমসের জানান, এখানে পাশাপাশি পাঁচটি ব্যাংকের বুথ রয়েছে। সবাই সবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রাতে বুথের সামনে পাহারায় বসে থাকেন। এছাড়া আশপাশের ভবনগুলো নাইটগার্ডরাও সজাগ থাকে।
পুরান ঢাকার নবাবপুরের মোটরপার্টস ব্যবসায়ী নিয়ামুল করিম বলছেন, “এহন দোকানদারি প্রায় বন্ধ। কিন্তু রাত জাইগা পাহারা দিতে হইতেছে। আমার দোকানে খালি দামি মেশিনের বেল্ট আর বিয়ারিং। এক বস্তা বেল্ট নিয়া গেলেই লাখ টাকা লস। এই কারণে নিজেরাই সব পাহারায় বসছি।”
আছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, অপেক্ষা পুলিশের
ডাকাত ঠেকাতে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মাঠে থাকলেও পুলিশ না থাকায় ডাকাতদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। সেনাসদস্যরা ডাকাতদের আটক করে তাদের কাছে কোনো অস্ত্র থাকলে সেগুলো জব্দ করে ছেড়ে দিচ্ছেন। কারণ তাদেরকে থানায় দিলেও লাভ নেই। মামলা করারই সুযোগ নেই।
৫ অগাস্ট সরকার পতনের পরপর দেশের বেশিরভাগ থানাতেই হামলা হয়, লুটপাটের পাশাপাশি আগুন দেওয়ার কারণে ভেতরের নথিপত্র থেকে শুরু করে প্রায় সব গাড়িই পুড়ে যায়।
পুলিশের বসার মত ব্যবস্থাপনাও নেই থানায়, লোহার গারদও খুলে নেওয়া হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। ফলে বন্দি রাখার সুযোগও নেই।
শনিবার তেজগাঁও থানায় গিয়ে এক ইনস্পেক্টরকে পাওয়া যায়। তিনি বললেন, “সেনাবাহিনী আমাদেরকে দুইজন ছিনতাইকারী ধরে দিয়ে গেছে। আমি হাজতে রেখেছি। কিন্তু আমি এখন এদেরকে কী করব? আমি যে আদালতে পাঠাব, আমার ফোর্স নাই, গাড়ি নাই। আর আদালতের কার্যক্রমও নেই।”
আদাবর এলাকার বাসিন্দা মওদুদ হোসেন বলছেন, “পুলিশ না থাকলে কি চলে? সেনা সদস্যরা আসছেন, তাদের দেখে স্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পর আবার আতঙ্কে থাকছি। আমরা চাই দ্রুত থানা পুলিশের কার্যক্রম শুরু হোক। প্রয়োজনে কমিউনিটি তাদের লজিস্টিকস দিয়ে সহায়তা করবে।”
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের মনোনীত প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অ্যাড-হক কার্যালয়ের জারি করা এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়, দেশব্যাপী পরিকল্পিত নাশকতা ও ডাকাতি প্রতিরোধে এলাকা ভিত্তিক কমিটি করে রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় একবার করে মসজিদের মাইকে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, একটি স্বার্থান্বেষী ও সন্ত্রাসী মহল কর্তৃক প্ররোচিত একটি গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিকল্পিত নাশকতা চালাচ্ছে। নিজেদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয়দের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে ওই সতর্কবার্তায়।
গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “পুলিশের এত বিরাট ফোর্স নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর পক্ষে সেটা পূরণ করা সম্ভব হবে না। আমরা আনসার-বিএনসিসিকে কাজে লাগিয়েছি, ছাত্ররাও কাজ করেছে। আমাদের মিলিটারির সকল ফোর্স কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এখন এই ঘটনাগুলো কমে এসেছে।”
শনিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশের পুলিশের সব জেলার এসপি ও থানার ওসিদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও কমিটির সদস্যরা যৌথ টহলের মাধ্যমে হানাহানি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বন্ধুত্বও বাড়ছে
পাহারা দিতে গিয়ে তরুণরা সড়কে নেমে আসায় আলাদা একটা আমেজ তৈরি হয়েছে।
বসিলা এলাকার বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক নাজভী ইসলাম বলছেন, “ঢাকার মানুষ পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীদের চেনে না বলে আগে যে সমালোচনাটা ছিল এখন আর সেটা থাকবে না। এলাকা পাহারা দেওয়ার সুযোগে পুরো ভবন, এমনকি আশপাশের ভবনের লোকজনের সঙ্গে ভালো চেনাজানা হয়েছে। এই সম্পর্কগুলো ভবিষ্যতে কমিউনিটির উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে কাজে লাগবে।”
ধানমন্ডির শংকর এলাকায় স্থানীয়দের উদ্যোগে রাতে সড়কেই খিচুরি রান্না করতে দেখা গেছে। পাশেই কিছু যুবক ক্রিকেট খেলছিলেন সড়কে।
রেজাউল করিম রেজা নামে একজন বলেন, " পশ্চিম ধানমন্ডি ও শংকর এলাকার লোকজন আমরা। পাহারা দেওয়ার জন্য সবাই একসঙ্গে কিছু করে সময় কাটানো আর খাওয়া-দাওয়ার জন্য আমাদের এই আয়োজন। স্বাভাবিক পরিস্থিতি না ফেরা পর্যন্ত আমরা প্রতি রাতেই নিজেদের এলাকার পাহারায় থাকব।"
মোহাম্মদপুর এলাকার এক গলিতে প্রজেক্টর লাগিয়ে উৎসব করতে দেখা যায়। কেউ কারওকি নিয়ে স্পিকারে গান গাইছিলেন। পাশেই কিছু তরুণদের দেখা যায় ক্রিকেট খেলতে।
[প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন গোলাম মর্তুজা অন্তু, কাজী নাফিয়া রহমান, হামিমুর রহমান ওয়ালিউল্লাহ, প্রশান্ত মিত্র ও আবুল বাশার সাজ্জাদ।]