১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর এই অভিনেতা খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।
Published : 29 Apr 2024, 07:54 PM
ঢাকাই সিনেমার নব্বই দশকের নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ ৯ আসামির শাস্তি হবে কি না, তা জানা যাবে ৯ মে।
ঢাকার দ্বিতীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের নতুন বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী সেদিন ২৬ বছর আগের এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে সোমবার রায়ের এ দিন ঠিক করে দেন তিনি।
ব্যবসায়ী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসী।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাদিয়া আফরিন শিল্পী যুক্তিতর্ক শুনানিতে আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৯ আসামির সবার মৃত্যুদণ্ড চান।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ আসামিদের খালাসের দাবি জানান।
সাদিয়া আফরিন শিল্পী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিতর্কিত ও রহস্যময় আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হাসান ইমনের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী আনতে আমাদের খুব বেগ পেতে হয়েছে। আমরা এর আগে একজন চাক্ষুস সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করে তাকে উল্টো জেরা করেছিলাম।
“যদিও এ মামলার সাক্ষী ছিল ৩৪ জন। কিন্তু ১০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া গেছে। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করেছি।”
অন্যদিকে ফারুক আহম্মেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাজা হওয়ার মতো কোনো সাক্ষ্য আসেনি। আসামিরা খালাস পাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
পলাতক আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পক্ষে এ মামলায় রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে লড়েন আইনজীবী ফিরোজ আহমেদ।
আসামি সানজিদুল হাসান ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য দেন।
আসামি সানজিদুল তার বক্তব্যে বলেন, তার বাবা-মা দু্জনই ‘প্রখ্যাত চিকিৎসক’ ছিলেন। তার মা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ছিলেন। নিজেকে ‘ভালো এবং শিক্ষিত’ পরিবারের সদস্য হিসেবে বর্ণনা করে সানজিদুল দাবি করেন, ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না।
আরেক আসামি আশিষ রায় চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঘটনার সময় তিনি থাইল্যান্ডে ছিলেন। তিনি বিদেশে থাকার সময় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
এই দুইজনসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের দেওয়া বক্তব্য যুক্তিতর্ক শুনানিতে সংক্ষিপ্ত আকারে পড়ে শোনানো হয়। আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান।
কী ঘটেছিল
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।
এই অভিনেতা খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।
মামলায় বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা-কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়।
ঘটনার বর্ণনায় এজাহারে বলা হয়, সেই রাতে সোহেল তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবারও তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান।
১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
এরপর ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়।
কিন্তু আসামিদের মধ্যে তারিক সাঈদ মামুনের পক্ষে ২০০৪ সালে হাই কোর্টে মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত একটি রুল দেয়; সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ আসে।
এরপর দীর্ঘদিন মামলাটির নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সবার নজরে আসে।
২০১৫ সালের ৫ অগাস্ট হাই কোর্ট সেই রুল খারিজ করে রায় দিলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তারপর বিচারিক আদালতে পুনরায় বিচার শুরু হয়।
মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে মাত্র ১০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া গেছে। আসামিদের মধ্যে সানজিদুল হাসান ইমন এবং আশিষ রায় চৌধুরী গত ১১ ফেব্রুয়ারি আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য দেন। তারা দুজনেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন।
১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে নামের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন সোহেল চৌধুরী। একই প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন পারভিন সুলতানা দিতিও। পরে দুই তারকা বিয়ে করেন, দুটি সন্তানও রয়েছে তাদের।
পুরনো খবর