সোহেল চৌধুরী হত্যা: আসামিদের মৃত্যুদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ

বিচারক অধিকতর যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2024, 11:48 AM
Updated : 19 March 2024, 11:48 AM

ঢাকাই সিনেমার নব্বই দশকের নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ ৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মঙ্গলবার ঢাকার দ্বিতীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেসমিন আরা বেগমের আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ দাবি জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাদিয়া আফরিন শিল্পী।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আসামিদের খালাসের দাবি জানান।

তিনি বলেন, “আমরা ল পয়েন্টে কিছু আরগুমেন্ট করব। আমরা উচ্চ আদালতের আরো কয়েকটি সিদ্ধান্ত তুলো ধরে তা জমা দেব।”

পরে বিচারক অধিকতর যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ মামলা শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে, এপ্রিলেই রায় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।”

ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসী।

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।

এই অভিনেতা খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।

মামলায় বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা-কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়।

ঘটনার বর্ণনায় এজাহারে বলা হয়, সেই রাতে সোহেল তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবারও তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান।

১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দে

এরপর ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়।

কিন্তু আসামিদের মধ্যে তারিক সাঈদ মামুনের পক্ষে ২০০৪ সালে হাই কোর্টে মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত একটি রুল দেয়; সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ আসে।

এরপর দীর্ঘদিন মামলাটির নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সবার নজরে আসে।

২০১৫ সালের ৫ অগাস্ট হাই কোর্ট সেই রুল খারিজ করে রায় দিলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তারপর বিচারিক আদালতে পুনরায় বিচার শুরু হয়।

মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষে মাত্র ১০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া গেছে। আসামিদের মধ্যে সানজিদুল হাসান ইমন এবং আশিষ রায় চৌধুরী গত ১১ ফেব্রুয়ারি আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য দেন। তারা দুজনেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন।

১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে নামের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন সোহেল চৌধুরী। একই প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন পারভিন সুলতানা দিতিও। পরে দুই তারকা বিয়ে করেন, দুটি সন্তানও রয়েছে তাদের।