দুই যুগ আগের এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।
Published : 12 Feb 2023, 06:34 PM
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তার স্ত্রী পরিচয়ে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেওয়া রওশন আক্তার তুলি আদালতে সাক্ষ্য দিতে দাঁড়িয়ে ভিন্ন বক্তব্য দেওয়ার পর তাকে বৈরী ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি দাবি করেন, ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। সোহেল চৌধুরীর স্ত্রীও তিনি নন।
এ পরিস্থিতিতে তাকে বৈরী ঘোষণা করে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি সাদিয়া আফরিন শিল্পী।
যদিও মামলার নথি অনুযায়ী, সোহেল চৌধুরী হত্যার পর পুলিশের কাছে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তুলি। সেখানে স্বামীর নাম সোহেল চৌধুরী বলে উল্লেখ করেন।
জেরায় উঠে আসে, সোহেল চৌধুরীর বাসা ভাড়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে নম্বর নিয়ে বান্ধবী আফরিন সুলতানার জন্য ফোন করেন তুলি। সোহেল চৌধুরীর মায়ের সাথে তখন তার কথা হয়। পরে সোহেল চৌধুরীর মোবাইল নম্বর পান তিনি। তাদের মধ্যে ফোনে কথা হতে থাকে।
রাষ্ট্রপক্ষের জেরায় তুলি বলেন, নায়কের ‘ফ্যান’ হিসেবে তাদের কথা হত।
স্ত্রী দাবি করে সম্পত্তির ভাগ নিতে চেয়েছিলেন কি না– রাষ্ট্রপক্ষের এমন প্রশ্নের জবাবে তুলি বলেন, “না”।
এরপর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের ব্যবস্থাপক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এনামুল হাফিজ খান ওরফে এনায়েত হোসেন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ক্লাবের নীচতলায় সোহেল চৌধুরী এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ‘তর্কাতর্কি’ হয়। তিনি এসে তা থামিয়ে সোহেল চৌধুরীকে চলে যেতে বলেন। সোহেল চৌধুরী চলে যান।
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: সাক্ষ্য দিলেন ভাই তৌহিদুল
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: কেস ডকেট উপস্থাপনে শেষ সুযোগ পেলেন ফরিদ
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: গ্রেপ্তার দেখানো হল আশীষ চৌধুরীকে
তবে সন্ত্রাসী আশীষ রায় চৌধুরীর সাথে সোহেলের ঝামেলা হয়েছিল কি না- তা জানেন না বলে সাক্ষ্যে দাবি করেন এনায়েত হোসেন।
পরে বিচারক জাকির হোসেন পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দেন।
এ মামলার আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসী।
এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ শামসুল হক বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসামিদের মধ্যে ইমন ও আশীষ চৌধুরীকে এদিন কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। বিদেশে থাকা আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়াও বান্টি ইসলাম ও সেলিম খান পলাতক। বাকিরা জামিনে আছেন।
আইনজীবী বাদল বলেন, গত বছরের ২২ অগাস্ট নিহত সোহেল চৌধুরীর ভাই মামলার বাদী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ওই দিন দাবি করেন, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের সময় পার হয়ে গেছে। তাই মামলাটি দায়রা আদালতে ফেরত পাঠানোর প্রার্থনা করেন তারা।
তবে ২৪ অগাস্ট সেই আবেদন খারিজ করে আদেশ দেয় আদালত। এরপর ২৮ অগাস্ট তৌহিদুলের জবানবন্দি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। দুই যুগ আগের এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।
এই অভিনেতা খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
ওই মামলায় ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়।
কিন্তু আসামিদের মধ্যে তারিক সাঈদ মামুনের পক্ষে হাই কোর্টে মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত একটি রুল দেয়; সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ আসে। ২০১৫ সালে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়।
তারও ৭ বছর পর ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার নথি বিচারিক আদালতে ফেরত এলে পুনরায় বিচার শুরু হয়।
১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে নামের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন সোহেল চৌধুরী। একই প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন পারভিন সুলতানা দিতিও। পরে এই তারকা জুটি বিয়ে করেন।