ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিতে দাঁড়িয়ে তপন লাল দত্ত দাবি করেন, তিনি কিছুই দেখেননি।
Published : 26 Nov 2023, 06:15 PM
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তপন লাল দত্ত নামে এক নিরাপত্তা প্রহরী রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে আসামিদের পক্ষ নেওয়ায় উল্টো জেরার মুখোমুখি হয়েছেন।
রোববার ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসলি সাদিয়া আফরিন শিল্পী এ সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করে উল্টো জেরা করেন।
ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী হলেও তপন সাক্ষীর ডকে দাঁড়িয়ে জবানবন্দিতে বলেন, “আমি ট্রাম্প ক্লাবে নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে কখনো কাজ করিনি। আমি ছিলাম ওয়েটার। আমি ঘটনার কিছুই জানি না। কিছুই দেখিনি।"
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে আইনজীবী শিল্পী তাকে বৈরী ঘোষণা করে উল্টো জেরার জন্য বিচারকের অনুমতি চান।
অনুমতি মিললে জেরায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, “আপনিতো তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেছেন যে আপনি নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে ট্রাম্প ক্লাবের উত্তর গেটে প্রহরী ছিলেন। আপনি ট্রাম্পের মালিক বান্টি ইসলামকে চেনেন কিনা? আপনার সামনেই ট্রাম্প ক্লাবের প্রবেশ পথে গুলি করা হয় সোহেলকে।”
উত্তর আসে, “চিনি, তিনি মালিক।"
তপন লাল দত্ত বলেন, “ট্রাম্পের ২০/২৫ জন কর্মচারীর সবাইকে চিনি না।”
রাষ্ট্রপক্ষ জেরায় চেপে ধরলে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ট্রাম্প ক্লাবে একজন নিহত হয় বলে শুনেছি। হ্যাঁ তিনি সোহেল চৌধুরী।”
আরেক প্রশ্নের উত্তরে এই সাক্ষী বলেন, বান্টির বন্ধু সানজিদুল ইসলাম ইমনকে তিনি কখনো ট্রাম্প ক্লাবে দেখেননি। সোহেল চৌধুরীকেও কখনো দেখেননি।
এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, হত্যার ঘটনা ‘সরাসরি দেখেও’ তা অস্বীকার করে বান্টি ইসলাম, আশীষ রায় চৌধুরীর শেখানো অনুযায়ী তপন লাল দত্ত আদালতে দঁড়িয়ে সত্য বলার শপথ নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে গেলেন কি না।
জবাবে সাক্ষী বলেন, “সত্য নয়।”
পরে বিচারক এম আলী আহমেদ ১২ ডিসেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করে দেন। এ নিয়ে মোট দশ জনের সাক্ষ্য শেষ হল এ মামলায়।
মামলা বৃত্তান্ত
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।
এই অভিনেতা খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
ওই মামলায় ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়।
কিন্তু আসামিদের মধ্যে তারিক সাঈদ মামুনের পক্ষে হাই কোর্টে মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত একটি রুল দেয়; সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ আসে।
এরপর দীর্ঘদিন মামলাটির নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সবার নজরে আসে। তারপর বিচারিক আদালতে পুনরায় বিচার শুরু হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসী।
১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে নামের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন সোহেল চৌধুরী। একই প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন পারভিন সুলতানা দিতিও। পরে এই তারকা দম্পতি বিয়ে করেন।
পুরনো খবর