Published : 08 Sep 2022, 12:32 AM
নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের ব্যাটারিসহ আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে; যেজন্য কাজও শুরু হয়েছে।
পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বাস্তবায়নাধীন ইভিএম প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে এসব ভোট দেওয়ার যন্ত্র রাখার উপযোগী গুদাম (ওয়্যারহাউজ) নির্মাণ, সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং এ বিষয়ে ইসির সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে।
ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সংরক্ষণের পর্যাপ্ত সুবিধার অভাব ও পাঁচ বছর ধরে ব্যবহারের ফলে ব্যাটারি, চার্জিং কেবলের মত যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ছে। এর হার প্রায় ৩০ শতাংশ।
তবে তাদের কাছে থাকা ইভিএমগুলোর (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) কোনটি নষ্ট নয় বলে দাবি তার।
তিনি জানান, বর্তমানে দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে রয়েছে ৫৪ হাজারেরও বেশি ইভিএম; ৯৩ হাজারেরও বেশি রয়েছে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের কাজে। কিছু ইভিএম নির্বাচন ভবনে সংরক্ষিত রয়েছে।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারে ইসির সিদ্ধান্তের পর ভোট দেওয়ার এ যন্ত্র আবার আলোচনায় আসে।
এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার ‘ইভিএমের টেকসই ব্যবহার, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কৌশল ও সক্ষমতা বৃদ্ধি’ নিয়ে এক কর্মশালায় ইসির হাতে থাকা ইভিএমের সবশেষ অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে ইভিএম ও এর যন্ত্রাংশ নষ্ট, অকেজো, হারিয়ে যাওয়া বা রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়গুলো উঠে আসে।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) এ কর্মশালায় চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় আলোচনার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রাকিবুল জানান, টেকসই ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় কারিগরি বিভিন্ন সমস্যা হয় এবং তা যেন দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে সমাধান করার জন্য সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
ইভিএম নিয়ে প্রচারণা শুরু করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভুল ধারণা দূর করতে কী করা যায় সেই ভাবনাগুলো শেয়ার করা হয়েছে। ইভিএমের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য ওয়্যারহাউজ করতে হবে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে পরের বছর জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সর্বোচ্চ দেড়শ’ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এজন্য আরও নতুন ইভিএম কিনতে হবে। কেননা বর্তমানে ইসির কাছে থাকা দেড় লাখ ইভিএম দিয়ে ৭০-৮০টি আসনে ভোট নেওয়া যাবে বলে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালে শুরু ৩ হাজার ৮২৫ কোটির এ প্রকল্পের আওতায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের ছয়টি আসনে ইভিএমে ভো নেওয়া হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সব ভোটে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির।
ইভিএমগুলোর সবশেষ অবস্থা জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রাকিবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের যা ইভিএম প্রকিউর করা রয়েছে তার মধ্যে ৩০% এর কম বেশি সংখ্যককে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হবে। দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণে নিতে হবে।”
সব ইভিএম সক্রিয় রয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মেইনটেনেন্স মানে অকেজো নয়; এসব ইভিএমের এক্সেসরিজের দুয়েকটা জিনিসের আপডেট করতে হয়, দুয়েকটা জিনিসে সমস্যা থাকে, ফাংশন করতে কাজ করতে হয়।
“মনে করেন, চার্জারের এডাপ্টার টেম্পরারিলি নষ্ট, মানে তো ইভিএম নষ্ট নয়। একটা ইউনিট অপারেট করতে হয়।“
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “দেড় লাখ ইভিএমের সঙ্গে রয়েছে তিন লাখ ব্যালট ইউনিট, ৯ লাখ কেবল রয়েছে, দুই লাখ ব্যটারি রয়েছে।...এভাবে সব মিলিয়ে বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক ছোটখাটো নানা কম্পোনেন্ট রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণের প্রয়োজন হবে।”
ব্যাটারির একটি লাইফটাইম রয়েছে জানিয়ে রাকিবুল বলেন, চার্জিং কেবল লাগবে, এডাপটার, মনিটর রয়েছে- এসবের ছোটোখাটো রক্ষণাবেক্ষণ লাগবে।
তিনি জানান, মাঠ পর্যায়ে থাকা ইভিএমের মধ্যে ৪৭ হাজার ইভিএম হার্ডবোর্ডের বাক্সে, ৪৫ হাজার ইভিএম কাগজের বাক্সে রয়েছে। হার্ড বাক্সগুলো সবগুলো পৌঁছায়নি। কাগজের বাক্সগুলো অত ভালো থাকে না। দেড় লাখ মেশিনই হার্ডবাক্সে থাকবে। কিন্তু হার্ডবাক্স পাঠানো হয়নি। একই সঙ্গে সংরক্ষণে রাখলে যেখানে রাখুক কোনোভাবে আর কিছু হবে না।
আঞ্চলিক ওয়্যারহাউজ বানানোর চেষ্টা করছে ইসি সচিবালয় জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন পার্টস এর কারণে ছোটোখাট যন্ত্রপাতির কারণে, যেগুলো বিএমটিএফে নিয়ে যাব-দু দিনের মধ্যে রেডি হয়ে যাবে। এসব আমরা বলছি- এসবের সংরক্ষণের বিষয় রয়েছে। প্রজেক্টটা রয়েছে- ইভিএমকে সংরক্ষণ করতে হবে, প্লান করতে হবে।
”লোকাল এরিয়ায় কনসার্ন দিতে হবে, তাদের ডিমান্ড, তাদের রিকুয়ারমেন্ট, আমাদের প্রজেক্ট-এসব জিনিসের যেন সংস্থান করা যায়, কোনোভাবে যেন বাদ না পড়ে।”
আরও পড়ুন:
অর্ধশত ইভিএম নষ্ট, চুরি গেছে মনিটর ও ব্যাটারিও
দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ইসির নিজস্ব: সিইসি
ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলছেন ৩৯ নাগরিক
ইভিএম কেনার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন