অর্ধশত ইভিএম নষ্ট, চুরি গেছে মনিটর ও ব্যাটারিও

চুরির বিষয়ে মামলা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2022, 03:08 PM
Updated : 3 August 2022, 03:08 PM

নির্বাচন অফিসের আগুন নেভানোর সময় পানি ঢুকে সাম্প্রতিক সময়ে এক উপজেলায় রাখা অর্ধশতাধিক ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নষ্ট হয়েছে; একই সঙ্গে আরও দুই স্থানে এ যন্ত্রের অন্তত অর্ধশত মনিটর ও ব্যাটারি চুরি গেছে।

কাশিয়ানী, ঝিনাইদহ সদর ও কসবা উপজেলায় সম্প্রতি পৃথক এসব ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ইভিএমের যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, “কোথাও ইভিএম চুরি বা হারিয়ে যায়নি। তবে একটি জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের পর আগুন নেভাতে গিয়ে পানি ঢুকে ৫০টির মত ইভিএম নষ্ট হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় মনিটর ও ব্যাটারি চুরির ঘটনা ঘটেছে।”

যথাযথ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি কমিশনের নজরে রয়েছে বলে জানান তিনি।

ইসির ইভিএম সংক্রান্ত প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান জানান, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গত মে মাসে রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় আগুন নেভানোর সময় পানির সংস্পর্শে গুদামে থাকা অর্ধশতাধিক ইভিএম নষ্ট হয়। এতে নিচ তলায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ কাগজ, আসবাবপত্র পুড়ে যায়।

তিনি জানান, ওই গুদামে থাকা প্রায় ২০০ ইভিএমের মধ্যে অন্তত অর্ধশত নষ্ট হয়েছে।

এই কর্মকর্তা জানান, কিছুদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় উপজেলা পরিষদের অডিটরিয়ামে চুরির ঘটনা ঘটে, যেখান থেকে মনিটর ও ব্যাটারি চুরির ঘটনা ঘটে।

আর ঝিনাইদহের একটি স্কুল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই, ইভিএমের আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ ও ব্যাটারি চুরি হয়েছে বলে তিনি জানান।

ইভিএমের যন্ত্রপাতি মজুদের যথাযথ জায়গা (ওয়্যারহাউজ) না থাকায় বিভিন্ন জায়গা যেটা পাওয়া যাচ্ছে সেটাতে রাখা হচ্ছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, “সেটার প্রপার সিকিউরিটি বলতে যা বুঝায় সে ধরনের সিকিউরিটি আসলে কোথাও নাই। যার ফলে এই জিনিসগুলো ঘটছে।

“দেশের প্রায় ৩০টি জেলায় এ ধরনের বাসা-বাড়িতে স্টোরহাউজ হিসেবে ব্যবহার করে ইভিএমগুলো রাখা হচ্ছে।“

বর্তমানে ইসির কাছে দেড় লাখের মত ইভিএম রয়েছে। এরমধ্যে এক লাখ ইভিএম নির্বাচনে ব্যবহার উপযোগী। বাকিগুলো রিজার্ভ ও প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার হয়। অন্তত ৯০ হাজার ইভিএম মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা অবস্থায় রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, “নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কনসার্ন। এখনও আপাতত এ ধরনের কোনো ওয়্যারহাউজ তৈরি হয়নি। তাই ইসি সাধ্যমত চেষ্টা করছে এটাকে ভালোভাবে রাখার।“

এর আগে ২০১৯ সালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পৌনে চার কোটি টাকার সরঞ্জাম নষ্ট হয়। এবারও অর্ধশতাধিক ইভিএম নষ্ট হলে ক্ষতি অন্তত কোটি টাকা হতে পারে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে প্রতি জেলায় গড়ে আড়াই হাজার করে রাখার পরিকল্পনা ছিল। এরমধ্যে ৯০ হাজারের বেশি ইভিএম বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা হয়েছে। আর প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে ভালোভাবে রাখা আছে অনেক ইভিএম।

এমন পরিস্থিতিতে যথাযথভাবে সংরক্ষণে অন্তত ১০টি ওয়্যারহাউজ বানানো দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, এছাড়া অন্যান্যভাবে বা বাসা বাড়িতে রেখে এটা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে রাখা সম্ভব না।

২০১০ সালে ইভিএম চালুর পর স্থানীয় নির্বাচনে তা ব্যবহার হচ্ছিল। পর্যায়ক্রমে তা অন্যান্য নির্বাচনে ব্যবহার শুরু হয়। কে এম নূরুল হুদার কমিশনের সময় আইন সংশোধন করে ২০১৮ সালে ছয়টি সংসদীয় আসনে তা ব্যবহার করে।

এ ধারাবাহিকতায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও এখন ইভিএম ব্যবহার বাড়াতে চাইছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগ এর বিপক্ষে মত দিলেও সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ এর পক্ষে মতামত দেয়। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসি।