ইসি ভবনে আগুন শর্ট সার্কিট থেকে, ক্ষতি পৌনে ৪ কোটি টাকা: তদন্ত কমিটি

নির্বাচন ভবনে আগুন লাগার কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটকে চিহ্নিত করেছে ইসির তদন্ত কমিটি; এতে পৌনে ৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাবও দিয়েছে তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2019, 01:32 PM
Updated : 12 Sept 2019, 02:53 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীরের কাছে দেখা করে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তদন্ত কমিটির সভাপতি ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান।

এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে হয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ডে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১৬৯ টাকার মালামাল পুড়েছে।

রোববার রাতে ঢাকার আগারগাঁওয়ে ভবনের বেইজমেন্টে অগ্নিকাণ্ডের পর ইসি চার সদস্যের এই কমিটি গঠন করে। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আগারগাঁওয়ে ১২ তলা  নির্বাচন ভবনের বেইসমেন্টে রোববার রাতে আগুন লাগে। এতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের অন্তত দুই ডজন যন্ত্রাংশ, দুই জোড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও বৈদ্যুতিক তার, কিছু কাগজপত্র পুড়ে যায়।

বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল বলে ধারণা করছিলেন ইসি কর্মকর্তারা। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও তাই  আসে।

তদন্ত কমিটি প্রধানমোখলেসুর বলেন, তদন্তের প্রয়োজনে তারা বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, প্রত্যক্ষদর্শীও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারও নেন।

“বার বার আমরা সেখানে পরিদর্শন করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে এখানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। “

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বেইজমেন্টের  সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা যায়- কক্ষের একাংশে বৈদ্যুতিক লাইনে স্ফূলিঙ্গ থেকে আগুন ধরে। এতে ইভিএমের কেবল ও মনিটর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন নেভানোর সময় ছিটানো পানিতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।

বিদ্যমান ফোর্স ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি হাইটেক কক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে সার্বক্ষণিক সিসিটিভির আওতায় আনা, স্বয়ংক্রিয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা চালুসহ ৫ দফা সুপারিশ করেছে কমিটি।

ইসি সচিব মো. আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ আমার কাছে কমিটি এসেছিল। কারিগরি বিষয়গুলো যোগ করে প্রতিবেদনের পূর্ণাঙ্গ করতে কিছু সময় নেয়। সব কিছু চূড়ান্ত করে কমিটির প্রধান গণমাধ্যমে ব্রিফিং করেছে। তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে রোববার পাব।”

তিনি জানান, প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। সেই সঙ্গে সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করা হবে।
“অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিটি যেসব সুপারিশ করতে তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রোববার রাতের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র।

কীভাবে অগ্নিকাণ্ড

তদন্ত কমিটির প্রধান মোখলেসুর বলেন, যেখানে ইভিএম কাস্টমাইজড হয়ে থাকে, সেই জায়গাটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছিল রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে। সিসিটিভি ফুটেজে ১০ টা ৫০ মিনিটের দিকে ধোঁয়া দৃশ্যমান হয়। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আধা ঘণ্টার মধ্যে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।

তিনি জানান, ইভিএম কাস্টমাইজ সেন্টারে সাড়ে চার হাজার ইভিএম মেশিন ছিল। পরবর্তীতে সেখানে যে সংখ্যক যন্ত্রপাতি ছিলো সেগুলো গণনা করা হয়েছে।

মোখলেসুর বলেন, “যেহেতু অনেক পানি দেওয়া হয়েছে, যেগুলো একেবারে ভস্মীভূত হয়েছে এবং একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলোকে আলাদা করেছি। যেগুলো ব্যবহার উপযোগী বা নষ্ট হয়নি কার্টনের ভিতরে ছিল সেগুলোকেও আলাদা করেছি। উপরের কাঁচ, দেয়াল ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু বিল্ডিংয়ের তেমন ক্ষতি হয়নি।”

আর্থিক ক্ষতির হিসাব

তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক হিসাব তুলে ধরেছে।

কমিটি জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে ইভিএম কন্ট্রোল ইউনিট ৫৯টি, ব্যাটারি ৪৭টি, ব্যালট ৭৮৯, মনিটর এক হাজার ২৩৩ হাজারটি, তার ৫৫৭ সেট, মনিটরের ব্যাটারি ৬৪টি, ল্যাপটপ একটি ও বার কোড স্ক্যানার দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সামগ্রীর আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি ২১ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৩ টাকা।

অন্যান্য কিছু ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীও ছিল তার মধ্যে এসি ছিল ৯টি, সিলিং লাইন ৪৮টি, একটি প্রজেক্টর, হুইল চেয়ার ও অটবি চেয়ার ১৬টি, টেবিল তিনটি, ঘড়ি একটি, সুইচ বোর্ড ১৪টি, বিভিন্ন রকমের ৯টি প্লাগ, ওয্যারিং চ্যানেল ২ হাজার ফিট, ফ্লোর টাইলস ৫০টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মূল্য ৪০ লাখ ৪৫ হাজার ৭০০টাকা।

পূর্ত ক্ষতি ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৬ টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষতি ৩ কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১৬৯ টাকা।

অগ্নিকাণ্ডের পর বেইজমেন্ট থেকে সরিয়ে আনা ইভিএমগুলো

পাঁচ সুপারিশ

ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে পাঁচটি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

>> কমিশন ভবনে ইভিএম কাস্টমাইজ  কক্ষের মতো অন্যান্য হাইটেক কক্ষগুলোতে সার্বক্ষণিক সয়ংক্রিয় অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং অতিরিক্ত পোর্টেবল ফায়ার এস্টিংগুইশার স্থাপন করতে হবে। কাস্টমাইজসহ অন্যান্য হাইটেক কক্ষগুলো সম্পূর্ণরুপে সার্বক্ষণিক সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে। বিদ্যমান ফোর্স ভেন্টিশন ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

>> নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন ভবনের  যে কোনো পূর্ত এবং ইএম (বিদ্যুৎ) কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তরের সঙ্গে অধিকতর সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।

>> ইভিএম কাস্টমাইজেশন কক্ষটির অভ্যন্তরঅন বৈদ্যুতিক কাজের ক্ষেত্রে উন্নত তার ব্যবহার করতে হবে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপ্লাগ, তার, সুইচ, সকেট ব্যবহার করতে হবে। নতুন বৈদ্যুতিক সংযোগ ও প্রাত্যহিক ব্যবহার ক্যালকুলেশন করে ঠিক করতে হবে।

>>  প্রতি ছয় মাস পর পর বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (বিইসি), গণপূর্ত অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতিনিধির সমন্বয় গঠিত কমিটি দ্বারা বৈদ্যুতিক লাইন ও ফায়ার সিস্টেম পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

>> নির্বাচন ভবনে অত্যাধুনিক ইন্টেগ্রেটেড বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে হবে ও সার্বক্ষণিক তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।