ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলছেন ৩৯ নাগরিক

বিবৃতিতে বলা হয়, “এটি রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উস্কে দেবে এবং কমিশনের বর্তমান আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2022, 05:38 PM
Updated : 6 Sept 2022, 05:38 PM

রাজনৈতিক ‘ঐকমত্য ছাড়া’ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ দাবি করে নির্বাচন কমিশনকে তা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ৩৯ জন নাগরিক।

মঙ্গলবার যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমের ফলাফল নিয়েও কারসাজি করা যায়। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কারিগরি টিমও নির্বাচনি ফল বদলে দিতে পারে।

সর্বোচ্চ দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার বিষয়ে গত ২৩ অগাস্ট সিদ্ধান্ত নেয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়াই নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

“আমরা মনে করি, কমিশনের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এটি রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উস্কে দেবে এবং কমিশনের বর্তমান আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে।

“আমরা আবারও একটি ব্যর্থ নির্বাচনের কবলে পড়ব, যা জাতি হিসেবে আমাদেরকে চরম সংকটের দিকে ধাবিত করবে।”

তারা বলেন, “কমিশনের সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতার আরেকটি কারণ হলো, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক থাকা এবং এ ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরি না হওয়া।”

বিবৃতিতে নতুন ইভিএম কেনায় বিপুল অর্থ ব্যয় কতটুকু যৌক্তিক হবে তা ভেবে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

“একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইভিএম ক্রয়ে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার (৪৫০ মিলিয়ন ডলার) মতো ব্যয় হয়েছে। ১৫০টি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করতে হলে নতুন মেশিন কেনায় অন্তত ৫০ কোটি ডলার ব্যয় হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

“বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এ ধরনের বিপুল ব্যয় কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

সংলাপ থেকে রাজনৈতিক দলের মতামত আমলে ‘নেওয়া হয়নি’ দাবি করে কমিশনের সঙ্গে নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের সংলাপও অর্থহীন হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

“আমরা মনে করি, ইভিএম ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের যে আস্থাহীনতা তা দূর না করেই ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচন নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হবে ও আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কের ক্ষেত্র তৈরি করবে।

“তাই আমরা নিম্নলিখিত স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গ আমাদের নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিবৃতিদাতারা হলেন- ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এম হাফিজউদ্দিন খান, ড. আকবর আলি খান, বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, আলী ইমাম মজুমদার, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, ড. শাহদীন মালিক, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. শহিদুল আলম, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড. আহসান মনসুর, আবদুল লতিফ মণ্ডল, শামসুল হুদা, প্রকৌশলী বি ডি রহমতুল্লাহ, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, লুবনা মরিয়ম, অধ্যাপক স্বপন আদনান, শারমিন মুরশিদ, অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, আবু সাঈদ খান, কামাল আহমেদ, জাকির হোসেন, নূর খান লিটন, শিরিন হক, বদিউল আলম মজুমদার, সাইফুর রহমান, ফারুক ফয়সাল, সঞ্জীব দ্রং, সালমা আলী, ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

আরও খবর

Also Read: দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ইসির নিজস্ব: সিইসি

Also Read: ইভিএমকে ‘নিকৃষ্ট যন্ত্র’ বলল সুজন

Also Read: ইভিএম নিয়ে ‘চ্যালেঞ্জ’ জানাতে ইসিতে আমন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনারের

Also Read: ইসির ইভিএমে কারসাজির সুযোগ নেই: জাফর ইকবাল