দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ইসির নিজস্ব: সিইসি

নির্বাচনে ইভিএম নতুন কোনো সংকট তৈরি করবে কি না- এমন প্রশ্নে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “ওয়েট করেন, দেখি কী হয়।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2022, 10:34 AM
Updated : 24 August 2022, 10:34 AM

একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ‘চাওয়াকে’ গুরুত্ব দিতে নয়, সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য আগামী সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বুধবার নির্বাচন ভবনে নিজের কার্যালয়ে ইভিএমে নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। আগের দিন কমিশন সভায় দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত হয়।

সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করা ছাড়াও তারা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে ইভিএম বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ‘তাড়াহুড়া ছিল না’ এবং এ সিদ্ধান্ত কমিশনের ‘নিজস্ব’।

“ইভিএমে যাওয়ার একটা বড় সিদ্ধান্ত আমাদের নিজেদের। ভোটটাকে রাজনৈতিক দল হ্যান্ডেল করবে না, হ্যান্ডেল করবে ইসি। আমরা কমিশন কিন্তু পুরোপুরি আস্থাশীল হয়েছি, একেবারে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপাতত ১৫০ সিটে আমরা ইভিএম ব্যবহার করব।”

নির্বাচনে ইভিএম নতুন কোনো সংকট তৈরি করবে কি না- এমন প্রশ্নে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “ওয়েট করেন, দেখি কী হয়।”

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। সংসদে মোট সাধারণ আসন রয়েছে ৩০০টি।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্তের মানে হল, অর্ধেক আসনে যন্ত্রে ভোট নেওয়া হবে।

সিইসি বলেন, “আমরা একটি দলের চাওয়া বা কারো চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নয়, আমরা বিরোধিতাগুলোকেও বিবেচনায় নিয়েছি। একটি দল ইভিএমের পক্ষে বলেনি, বেশ কয়েকটি দল পক্ষে বলেছে। কিছু কিছু দল শর্ত সাপেক্ষে বলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি।

“আমরা একটা বিভাজন করলাম, সম্ভব হলে ১৫০ আসনে করব। ১৫০টা পর্যন্ত সম্ভব হবে কি না এখনও বলতে পারছি না। ইভিএম প্রাপ্যতা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০টা আসনে করতে পারব।”

ইভিএম নিয়ে ইসির সংলাপে বিএনপিসহ ১১টি দল অংশ নেয়নি। এছাড়া নির্বাচন বিষয়ে উন্মুক্ত সংলাপে অংশ নেয়নি ৯টি দল।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য মুখ্য ছিল না বলে মন্তব্য করেন হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন “যারা ভোট দিতে আসবেন, সেটা আমাদের মুখ্য বিবেচনায় এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো কে কি বলেছে সেটা আমাদের মুখ্য বিবেচনায় আসেনি। কিন্তু বক্তব্যগুলো বিবেচনায় নিয়েছি। একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি ভোটার, যারা ভোটাধিকার প্রয়োগে কেন্দ্রে আসেন, তারা যেন আরও ভালোভাবে ভোট দিতে পারে, তা বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।“

Also Read: সংসদ নির্বাচনে সর্বাধিক ১৫০ আসনে ইভিএম, সিদ্ধান্ত ইসির

ইভিএমের সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে কতটা সময় লেগেছে প্রশ্ন করলে সিইসি নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “আমাদের পাঁচ মাসের বেশি সময় হয়ে গেল। আমরা ইভিএম নিয়ে চট জলদি কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। প্রথম থেকেই বলেছিলাম-পরীক্ষা নিরীক্ষা করে, কতটা নির্ভরযোগ্য সেটা পরখ করে দেখার চেষ্টা করেছি।

“বিভিন্ন দল, টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের ডেকেছি, অনেকের মতামত নিয়েছি। এর উপর নির্ভর করে, কমিশন সব দলের মতামত বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা ১৫০-১৫০ এভাবে ভাগ করে আমরা ইভিএমটাকে ব্যবহার করব।”

সিইসি বলেন, “ইভিএম নিয়ে যে কথাগুলো চালু আছে, বলছেন সেগুলো ভোটের পরেও কিন্তু বোঝা যাবে। ইভিএমে নির্বাচন হলে যদি দেখা যায়, ফলাফলের ধরনটা দেখে বোঝা যাবে আসলে এ যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো কারচুপি করা হয়েছে কিনা।

নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের সঙ্কটের শঙ্কা ইসি করছে কি না- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “ভবিষ্যতটা আমরা বলতে পারব না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আগের নির্বাচনগুলো নিয়েও আপনারা সংকটের কথা বলেছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে সংকট হবে কিনা তা প্রেডিক্ট করার সাধ্য নেই।

“এখন দেখা যাক কী হয়। ইসির এটা বড় দায়িত্ব নির্বাচন করা। ভোট যেন আরও স্বচ্ছন্দ, আরও সুষ্ঠু হতে পারে তা নিশ্চিত করবে ইসি।”

ভোটে না আসার ঘোষণা দেওয়া বিএনপির বিষয়েও আগাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন সিইসি। তিনি বলেন, “তখন বিবেচনা করা হবে। উনারা যদি আসেন, তখন বসে সিদ্ধান্ত নেব।”