বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার দাবি নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেও কোনো সমাধান আসেনি।
Published : 27 Nov 2021, 02:36 PM
শনিবার ঢাকার বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে পরিবহন মালিকরা উল্টো ভর্তুকি দাবি করে বলছেন, ঢাকার বাস মালিকদের বেশিরভাগই ‘গরিব’। টাস্কফোর্স গঠন করে তাদের জন্য ভর্তুকি নির্ধারণ করা হোক।
আর এসব বিষয়ে ফয়সালা করতে সময় লাগবে জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিএ।
বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, “২৫ নভেম্বরের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজ এ বৈঠক হল। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকা শহরে কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কত শিক্ষার্থী, ইত্যাদি তথ্য তারা চেয়েছেন।
“হাফ ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আলাদা কোনো পরিচয়পত্র দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। পুরো বিষয়টি সুরাহা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, “ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে, তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দুটো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের বাচ্চারাও স্কুল কলেজে যায়।
“এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাব হচ্ছে, বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই ভর্তুকি আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।”
তারা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সরকার বিআরটিসি বাস বাড়াতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে বাস সরবরাহেরও আহ্বান জানান তারা।
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, “যে ছাত্ররা আন্দোলন করছেন তারা আমাদেরও সন্তান। কিন্তু সব দায় কেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। তাই আমরা বলেছি সকলে মিলে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এর পর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। বৃহস্পতিবার পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
সেদিন দাবি পূরণের জন্য শনিবার পর্যন্ত সময় দিয়ে রাস্তা ছাড়ে আন্দোলনকারীরা। এরপর শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে।
বেসরকারি বাসেও একই নিয়ম চালুর জন্য শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার পর পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের নিয়ে ফের বৈঠকে বসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ।
জবাবে এনায়েত উল্যাহ বলেন, “হাফ ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কখনোই সরকারি সিদ্ধান্ত ছিল না। পরিবহন শ্রমিকরা কখনো নিত, আবার কখনো এটা নিয়ে ঝগড়াও হত।
“যখন সরকারিভাবে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়া ঘোষণা করা হবে, তখন অনেকগুলো বিষয় সামনে আসবে। যে দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র নকল হয়, ফেইক ড্রাইভিং লাইসেন্স হয়, সেই দেশে ছাত্রদের জন্য হাফ ভাড়ার ঘোষণা এলে দেখা যাবে যারা ছাত্র নন, তারাও হাফ ভাড়ার জন্য কার্ড বানিয়ে বসেছেন। এখানে অনেকগুলো বিষয় দেখবার রয়েছে।”
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, “পরিবহন শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সরকারকে দেখতে হবে। শ্রমিকরা যেখানে সেখানে মারধরের শিকার হচ্ছেন। সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তুকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। আর আমাদের শ্রমিকরা কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়া, সরকারি সহায়তা ছাড়াই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্ররা তাদের মারধর করবেন এটা কেমন কথা?”
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মোশাররফ হোসেনও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।