খুনি চালকের ফাঁসি আমিও দাবি করি: তাপস

সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় চালকের ফাঁসি দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2021, 02:11 PM
Updated : 25 Nov 2021, 02:13 PM

বৃহস্পতিবার নাঈম হত্যার বিচারের দাবিতে নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সমাবেশে এসে তিনি একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের দাবি দাওয়া আদায়ে সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলে তারা সেখান থেকে চলে যান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র তাপস বলেন, “আমি জানি এই কষ্ট কি! একজন মেধাবী ছাত্র নাঈম আমার এই সিটি করপোরেশন এলাকার সড়কে আমার করপোরেশনের গাড়ি দ্বারা দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে নিহত হবে, সেজন্য আমি রাজনীতিতে আসি নাই। আমার কাছে আমার সন্তানের সুখ, সন্তানের হাসি, সন্তানের ভালোবাসা অনেক অনেক মূল্যবান।

“আপনারা যে দাবি দিয়েছেন, সেই দাবির সাথে আমি শুধু একমত পোষণই না, শুধু সম্মতিই না- আমি আরও দাবি করি, যেন সেই খুনির ফাঁসি হয়। আমি দাবি করি, এই শহরের সড়কে আর যেন কোনও নাঈমের প্রাণহানি না ঘটে।”

বুধবার গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাকের ধাক্কায় নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের মৃত্যুর পরপরই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়।

এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, ফার্মগেট, শান্তিনগর ও উত্তরায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।

নটরডেম কলেজের কয়েকশ ছাত্র মতিঝিল হয়ে বেলা ১১টার দিকে গুলিস্তানে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে। সেখানে বেলা ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখিয়ে তারা নগরভবনের দিকে রওনা হন।

বেলা ৩টার পর নগর ভবনের ফটক খুলে শিক্ষার্থীরা হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা স্লোগান দিতে থাকে: ‘মেয়র তোমার দেখা চাই, নাঈম হত্যার বিচার চাই’।

পরে বেলা ৪টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র ফজলে নূর তাপস শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ‘জঞ্জালমুক্ত’ করার আশ্বাস দিয়ে তাপস বলেন, আরেকজন ভাড়াটিয়া গাড়ি চালককে দিয়ে গাড়িটি চালানো হয়েছে। যার দায়িত্ব ছিল তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

“ইনশাআল্লাহ চাকরি থেকেও অপসারণ করব। যেই চালক গাড়ি চালানো অবস্থায় ছিলো সে খুনি। তার সর্বোচ্চ শাস্তি ইনশাআল্লাহ আমরা নিশ্চিত করব। আপনাদের সাথে কণ্ঠে কণ্ঠ লাগিয়ে আমি বলি, সেই খুনির ফাঁসি চাই আমি।”

এ সময় আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবির পক্ষে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেনদরাবর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, “সরকারের কাছ থেকে সকল দাবি আদায়ের ব্যবস্থা করব। ঢাকা নিরাপদ শহর হবে- আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল। নিরাপদ সড়ক করতে আপনাদের সাথে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে কাজ করব। কোনও বহিরাগত যেন ডিএসসিসির কোন গাড়ি চালাতে না পারে, সেই কঠোর ব্যবস্থা নেব।”

নাঈমকে নিজের সন্তানতূল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমি আমার সন্তানের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে এসেছি। কিন্তু আসার দিনেই নাঈমকে হারাব সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। নাঈম শুধু আপনাদের ভাই না, আপনাদের বন্ধু না, একটি সতের বছরের আমার সন্তান।”

এ সময় ছাত্রদের দাবি মেনে নাঈমের নামে এ বছরের মধ্যে দক্ষিণ সিটির নিজস্ব অর্থায়নে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণা দেন তাপস।

এরপর সন্ধ্যায় দোষীদের বিচার ও বাসে ‘হাফ ভাড়ার’ দাবি পূরণে শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে রাস্তা ছাড়ে শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে দাবি আদায়ের বিষয়ে কোনো আশ্বাস না পেলে শনিবার বেলা ১১টা থেকে ফের বিক্ষোভের ডাক দিয়ে রেখেছে তারা।