শিক্ষার্থীদের দাবি, পুলিশের ওই বাসচালকের লাইসেন্স নেই। তবে বাস চালক দাবি করেছেন, তার লাইসেন্স আছে, তবে সেটা অফিসে রাখা। বেলা দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত আটকে রেখে পরে বাসটি ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
তার আগে তারা বাসটির সামনে ও পাশে লিখে দেয়: ‘পুলিশের কেন লাইসেন্স নাই’, `পুলিশ কেন সন্ত্রাস’, `ঘুষ খোর’, `নিরাপদ সড়ক চাই- ২১’ ইত্যাদি স্লোগান।
বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া চালুর দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই রাজধানীতে বিক্ষোভ চলছিল। এর মধ্যে বুধবার গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ নতুন মাত্রা পায়।
বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। হলিক্রস, বিজ্ঞান কলেজ ও ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে ফার্মগেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করলে সেখানে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর মধ্যে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে একটি বাস রাজারবাগ থেকে মিরপুরে যাওয়ার পথে বেলা দেড়টার দিকে ফার্মগেটে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়ে। শিক্ষার্থীরা বাসটির গায়ে মার্কার কলম ও স্প্রে রং দিয়ে নানা স্লোগান লিখে দেন।
অন্যদিকে বাসটির চালক পুলিশের নায়েক লাল মিয়া বলেন, তার লাইসেন্স রয়েছে। তবে সেটি অফিসে থাকায় তিনি দেখাতে পারেননি। একজন লাইসেন্স নিয়ে ঘটনাস্থলে আসছেন।
বাসটি আটকে রাখার সময় পুলিশের একজন সদস্য ছাত্রদের ‘গালি দিয়েছেন’ বলে অভিযোগ উঠলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রুবাইয়াত জামান এবং তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান এ সময় বাস এবং ছাত্রদের মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ওই বাসের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে রুবাইয়াত জামান সাংবাদিকদের বলেন, “এ গাড়ির লাইসেন্স আছে কি না সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা না বলে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না।”
শিক্ষার্থীরা দাবি তোলে, যে পুলিশ সদস্য ছাত্রদের ‘গালি’ দিয়েছে, তাকে প্রকাশ্যে মাফ চাইতে হবে, তা হলেই তারা বাসটি ছেড়ে দেবে।
পরে বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা বাসটি ছেড়ে দিলে অসংখ্য স্লোগান গায়ে নিয়ে সেটি মিরপুরের দিকে চলে যায়।
তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজের এক শিক্ষার্থী অভিযোড় করেন, তারা বাসটি আটকে যখন চালকের কাছে গাড়ির কাগজ এবং চালকের লাইসেন্স দেখতে চেয়েছিলেন, চালক তা দেখাতে পারেননি। এ সময় বাসের ভেতরে থাকা এক কনস্টেবল বাসের জানালা দিয়ে মুখ বের করে ছাত্রদের ‘গালি’ দিয়ে নিজের গায়ে থাকা পুলিশের পোশাক টেনে দেখিয়ে বলেন- ‘এটাই লাইসেন্স’।
ভাঙচুর
বাসটি চলে যাওয়ার কিছু সময় পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি খালি ময়লার গাড়ি ইন্দিরা রোডের দিক থেকে ফার্মগেট মূল সড়কে আসামাত্র বিক্ষোভরত ছাত্রদের সামনে পড়ে। যে জায়গায় শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাস আটকেছিল, সেখানেই ময়লার গাড়িটি আটকে তারা লাইসেন্স দেখতে চায়।
কিন্তু চালক কাগজ দেখাতে না পারায় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
চালক শাহরিয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি খেজুর বাগানের মোড় থেকে মহাখলীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হন।
“লাইসেন্স হয়েছে, তবে এখনও স্মার্ট কার্ড পাইনি। একটি অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ লাইসেন্স হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা বুঝতে চায় না। তবে গাড়ির কাগজ অফিসে আছে।”
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, ওই ময়লার গাড়ির চালক কোনো লাইসেন্স তাদের দেখাতে পারেনি।
বিকালে শিক্ষার্থীরা ফার্মগেট ছেড়ে যাওয়ার পর ওই ময়লার গাড়িও সেখান থেকে চলে যায়।