শনিবার জাতীয় জাদুঘরের নবম শাখা হিসেবে আত্মীকরণ হচ্ছে শহীদ জননীর স্মৃতি বিজরিত স্থাপনাটি।
Published : 03 May 2024, 10:52 PM
তরুণ প্রজন্মকে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।
শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের জাদুঘরে আমন্ত্রণ জানাব। জাদুঘরটি পরিদর্শন করে তাদের ভাবনা লিখিত আকারে আমাদের জানাবে, সে রকম কিছু ভাবনাও রয়েছে।”
শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জাদুঘরটি জাতীয় জাদুঘরের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তার আগেরদিন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী।
২০০৭ সালে পারিবারিক উদ্যোগে জাহানারা ইমাম জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার ঠিকানা- কনিকা, ৩৫৫ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সরণি (পুরোনো এলিফেন্ট রোড)।
মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমামের গৌরবময় অবদান জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য তার বাড়িটি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করা হয়।
এতদিন সপ্তাহের প্রতি শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় জাদুঘরে মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, জাহানারা ইমামের বাড়িটিকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নবম শাখা জাদুঘর হিসেবে একীভূত করা হচ্ছে।
এই জাদুঘরের জন্য লোকবল নিয়োগ দিতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আপাতত আগের মতই সপ্তাহে একদিন খোলা থাকবে। পরে লোকবল নিয়োগ হলে সেটি পর্যায়ক্রমে জাতীয় জাদুঘরের নিয়ম অনুযায়ীই পরিচালিত হবে। তখন সেখানে টিকেটের ব্যবস্থাও হবে।”
জাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধসহ বহুমাত্রিক পাঁচ হাজার স্মৃতি সামগ্রী রয়েছে। এর মধ্যে আছে শহীদ জননীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যমণ্ডিত নিদর্শন।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে সাইফ ইমাম জামী বলেন, “অনেক দিন ধরেই আমরা ব্যক্তিগতভাবে জাদুঘরটি পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু আমরা মনে করেছি, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এটা কতদিন টিকে থাকবে?
“এজন্য জাতীয় জাদুঘরই সবচেয়ে যোগ্য জায়গা। যদি তাদের তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত হয়, তবে সেটি অনেক বেশি মানুষের কাছে যাবে।”
এখন বিদেশে থাকেন জানিয়ে জামী বলেন, “এখন জাদুঘরটির দায়িত্ব সরকার নেওয়ায় আমি অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকব। আমি বিভিন্ন সংগঠনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকব, স্মারক বৃত্তিসহ নানা রকম কাজ করব।”
দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯১৩ সালে ৩৭৯টি নিদর্শন নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাতীয় জাদুঘর। বিভিন্ন পেশাজীবী, সংগ্রাহক, ইতিহাসবিদ, বুদ্ধিজীবী বিশেষ করে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৮৩ সালে ঢাকা জাদুঘর রূপান্তরিত হয় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে।
এর অধীনে ৮টি শাখা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে-স্বাধীনতা জাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, ওসমানী জাদুঘর, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন জাদুঘর, কাঙাল হরিনাথ জাদুঘর, নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়ি জাদুঘর।
জাদুঘরের মহাপরিচালক জানান, শনিবার সকাল ১১টায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক শহীদ জননী জাহানারা ইমাম জাদুঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন।
লেখক জাহানারা ইমামের জন্ম ১৯২৯ সালের ৩ মে। ১৯৭১ সালে নিজের বড় ছেলে শাফী ইমাম রুমীকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন তিনি। ঢাকায় গেরিলা হামলা পরিচালনাকারী ‘ক্র্যাক প্লাটুনের’ সদস্য রুমীকে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আর তার সন্ধান মেলেনি। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার রুমীর বাবাও একাত্তরে মারা যান।
স্বামী-সন্তান হারানোর বেদনা চেপে রেখে জাহানারা ইমাম একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে নেমেছিলেন আন্দোলনে।
স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে ১৯৯২ সালে দলের আমির পদে বসালে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত হয় একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। যুদ্ধাপরাধের বিচারে তার নেতৃত্বে বসেছিল গণআদালত।
এজন্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছিল জাহানারা ইমামকে। সেই অভিযোগ মাথায় নিয়েই ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।
তার সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এক দশক আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়। সেই বিচারে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে যে শাহবাগ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার প্রেরণাও ছিলেন শহীদ জননী।
জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরটি স্থাপন করেন জাহানারা ইমামের ছেলে ও শহীদ রুমীর ছোট ভাই সাইফ ইমাম জামী।