“এ সময় পুরো বগি অন্ধকার হয়ে যায়; আমার সন্তানও হাতছাড়া হয়। তখন চারপাশ থেকে শুধু চিৎকারের শব্দ পাচ্ছিলাম," বলছিলেন ভয়ার্ত এক যাত্রী।
Published : 14 Dec 2023, 12:28 AM
নওগাঁর ইমরান হোসেন মিলন ঢাকা থেকে বাড়ি যাবেন। প্রথমে ভেবেছিলেন ট্রেনে যাবেন। তবে গত কয়েকদিনে কয়েকটি রেল দুর্ঘটনার পর সিদ্ধান্ত পাল্টে বাসের টিকেট কেটেছেন।
এর মধ্যে ভোরে গাজীপুরে রেল লাইন কেটে দেওয়ার পর ট্রেন দুর্ঘটনার খবর জেনে বুধবার সকাল বেলাতেই শ্বশুর ফোন করে তাকে বলেছেন, “ট্রেনে আসবা না, খুবই ভালো করেছ।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মিলন বলেন, “আজকের যে ঘটনা, তা তো খুবই ভয়াবহ। যদি ট্রেনটা বেশি গতিতে থাকত আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত। ঘটনাটি জেনে আমার গায়ে কাঁটা দিয়েছে সকালে। আমার মনে হয়েছে অন্য কোনো দেশে আন্দোলন আর কর্মসূচি যাই হোক না কেন, অন্তত রেলের ওপর কেউ হাত দেয় না।”
বুধবার ভোরে গাজীপুরের সংবাদকর্মীদের ঘুম ভাঙে ফোনে। তারা জানতে পারেন, জয়দেবপুরের পরে ভাওয়াল স্টেশনের অদূরে বনখড়িয়া এলাকায় ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তারা দুর্ঘটনার যে তথ্য দেন, তা জেনে ভয় লাগে অনেকের।
দুর্ঘটনার কারণ ছিল রেলের পাত পুরোপুরি কেটে দেওয়ায়। ওই লাইনের অন্তত ২০ মিটার অংশ কেটে রাখা হয়েছে। রাতের আঁধারে নির্জন এলাকায় কেউ বা কয়েকজন লোক এ কাজ করেছেন। পরে পুলিশ জানায়, অক্সি-অ্যাসিটিলিন গ্যাস শিখা দিয়ে লাইনের উভয় পাতই কাটা হয়েছে।
রেলের পাত এমনিতে ভীষণ শক্ত থাকে। সাধারণ কোনো যন্ত্র দিয়ে সেটি কাটা কঠিন। তবে এ গ্যাস শিখা দুই হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা উৎপন্ন করে। ফলে লাইনটি কাটা সম্ভব। দুর্নাঘটনাস্থলের আশপাশে গ্যাস সিলিন্ডারও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভয় জাগানো এ খবর রেলযাত্রীদের জন্য তৈরি করেছে এক অনিশ্চয়তা। রেল লাইনের কোথাও নাশকতা হয়েছে, এই তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়া সম্ভব না। রেলওয়েও লাইনের কোথাও ক্ষতি বা নাশকতার তথ্য সাধারণত পেয়ে থাকে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে। কিন্তু রাতের বেলায় স্টেশন থেকে দূরে নির্জনে কেউ এই ধরনের ঘটনা ঘটালে তা জানা সম্ভবই নয়, বলছেন কর্মকর্তারা।
গাজীপুরে রেললাইন কেটে ফেলায় বগি লাইনচ্যুত, এক জন নিহত
যাত্রী, পরিবহন বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যাদের সঙ্গে কথা বলেছে, তাদের সবাই এক বাক্যে বলেছেন, ট্রেন কোনোভাবেই নাশকতার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না।
তারা বলেন, একটি রেলগাড়িতে যাত্রী থাকে হাজারের কাছাকাছি বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশিও। নাশকতার লক্ষ্য যদি ট্রেন হয়ে থাকে তাহলে সেখানে জীবন ও সম্পদের যে ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তা অনেক বেশি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্যাস কাটার দিয়ে এটা কাটা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আমরা অতীতেও দেখেছি। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি, এতে অনেক মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারত। এই ধরনের ঘটনা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”
যাত্রীরা ভয়ে
এ দুর্ঘটনা দেখার পর আইনজীবী নাহিদা খানম তার পাবনার ঈশ্বরদী যাত্রা বাতিল করার কথা ভাবছেন। তার বোন জাপান থেকে আসবেন এবং ভগ্নিপতির বাড়ি যাবেন বলে উৎফুল্ল ছিলেন।
নাহিদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা কোনো কথা? মেয়েটার পরীক্ষা শেষ। তাকে নিয়ে বেড়াতে যাব ভেবেছিলাম। অবরোধে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় ভেবে ট্রেনে টিকেটের জন্য বলে রেখেছি একজনকে। এই দুর্ঘটনার পর ‘না’ করে দিয়েছি।”
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার দুল্লী গ্রামের বাসিন্দা লিয়াকত আলী কাজল বলেন, “অতদিন ধইরা আন্দোলনে বাস, ট্রাক পোড়াইতেছিল। তবু রেলে আমরা নিরাপদে যাতায়াত কইরা আইতাছিলাম। আইজ যেমনে লাইন কাইট্যা ফালাইয়া দিছে, মানুষও মরছে, অহন তো দেখতাছি রেলেও চলাফেরা করা যাইত না। মনে ভয় ধরছে। আতঙ্কে আছি।”
নেত্রকোণা শহরের সাতপাই এলাকার বাসিন্দা নরেন সরকার বলেন, “ব্যবসার কাজে ঢাকায় যাতায়াত করতাম ট্রেইনে। অহন তো দেখতাছি ট্রেইনও নিরাপদ নাই। আমরা চলাচল করবাম ক্যামনে?”
যেভাবে কাটা হয়েছে লাইন
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার হানিফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুধবার ভোররাত চারটা থেকে সোয়া চারটার দিকে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেক্স ট্রেনটি রাজেন্দ্রপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পরপরই এর ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। আমরা শুনেছি দুর্বৃত্তরা রেললাইনের কিছু অংশ কেটে নিয়ে যাওয়ায় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে।”
রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড কমার্শিয়াল) মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, রেললাইনের অন্তত ২০ মিটার অংশ গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে।
ঘটনাস্থলের কাছেই একটি গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রেললাইন কাটা হয় অক্সি-অ্যাসিটিলিন দিয়ে: ডিআইজি নুরুল
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি ছুটে যায় পুলিশও। বিকালে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “রেললাইনকে অক্সি-অ্যাসিটিলিনের মাধ্যমে গলিয়ে ফেলা হয়েছে। এই রেললাইন গলানোর জন্য দুই হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেটের বেশি তাপমাত্রা দরকার।”
আনসার চেয়েছে জিআরপি
২০১৩ সালেও বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে একাধিক নাশকতার পর রেল লাইনে আনসার বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ বা জিআরপির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক দিদার আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এবারও তারা আনসার চেয়েছেন।
তিনি বলেন, “দেশে ৩ হাজার কিলোমিটার রেল লাইন আছে, প্রতিটি জায়গায় নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। সে জন্যই আমরা আনসার চেয়েছি। বরাদ্দ পেলেই হয়ত আমরা নিরাপত্তাকে কিছুটা গুছিয়ে সাজাতে পারব। পাশাপাশি আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি। তাদেরকে সচেতন করছি।”
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, “এই দুই সিলিন্ডার কোথা থেকে কেনা হয়েছে, কারা কিনে নিয়ে গেছে এই সূত্র ধরে এগুচ্ছি আমরা।”
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এর আগে আগুন লাগানোর যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোতে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা তাদের জানা নেই।
যাত্রীদের ভয়াল অভিজ্ঞতা
রেলের লাইন কেটে দেওয়ার ঘটনায় দুর্ঘটনায় পড়ে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে চলা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। ইঞ্জিন ও সাতটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় ১৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল।
ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আসলাম হোসেন নামে একজন। মুরগি ব্যবসায়ী আসলামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের রওহা গ্রামে।
ভোরের কনকনে শীতে জানালা বন্ধ করে আসনে বসেছিলেন আরেক যাত্রী আমজাদ আলি; চোখে ঘুম। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে ট্রেন ঝাঁকুনি খেলে পড়ে গিয়ে গড়াতে থাকেন তিনি।
অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “সিট থেকে ছিটকে পড়ার কারণে কুনই ও হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করছিলাম। এক পর্যায়ে ঝাঁকুনি থেমে গেলে অনেক কষ্টে সোজা হই। পরে দেখি ট্রেনের বগি কাত হয়ে পড়ে আছে, কোনো রকমে জানালা দিয়া জীবনটা নিয়ে বের হই।
“বের হয়ে দেখি, রেললাইন বেঁকে গিয়ে ট্রেনটির বেশ কয়েকটি বগি কাত হয়ে আছে। যাত্রীরা ভয়ে চিৎকার শুরু করেছে।”
‘দেখি ট্রেনের বগি কাত, কোনো রকমে জীবনটা নিয়ে বের হই’
রেলে নাশকতা: নির্দোষ আসলামকে কেন মরতে হল, প্রশ্ন স্ত্রীর
হাবিবা খাতুন নামে আরেক যাত্রী বলেন “দুই শিশুসহ মাঝামাঝি একটি বগিতে আমরা মোট চারজন ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বগিটি পাশের একটি গভীর জমিতে পড়ে যায়।
“এ সময় পুরো বগি অন্ধকার হয়ে যায়; আমার সন্তানও হাতছাড়া হয়। তখন চারপাশ থেকে শুধু চিৎকারের শব্দ পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার সন্তান ও স্বজনদের খুঁজে পেয়ে জানালা দিয়ে বের হই। আমাদের অনেকের শরীরে আঘাত লেগেছে।”
দুর্ঘটনাস্থলের পাশের বনখড়িয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, “ঘুমাইয়া ছিলাম; বিকট আওয়াজে ঘুম ভাঙে। ঘর থাইকা বাইর হইয়া শুনি, কান্নাকাটির আওয়াজ। কাছে গিয়া দেখি রেললাইন লণ্ডভণ্ড হইয়া কয়েকটা বগি এলোমেলো হইয়া আছে।
“যাত্রীদের চিৎকারে তহন আশপাশের শতশত লোকজন ছুটে আসছিল।”
লাইনে নাশকতার তথ্য পাওয়ার সুযোগ নেই
সংবাদমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে নানা সময় দেখা গেছে, কোথাও রেল লাইনে সমস্যা থাকার বিষয়টি প্রত্যক্ষদর্শীরা ফোন করে স্টেশনে জানিয়েছেন বা তারা লাল পতাকা বা কাপড় তুলে সতর্ক করেছেন। সেই সময়গুলোতে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা মিলেছে।
তবে দীর্ঘ লাইনের কোথাও নাশকতার পরিকল্পনা করা হলে জানার উপায় কী?
বুয়েটের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেললাইনের যেখানে স্টেশন নেই বা দায়িত্বরত জনবল নেই এমন এলাকায় যদি রেললাইন তুলে নেওয়া হয়, তাহলে পরের ট্রেইনটি সেই খবর পাওয়ার কোনো সিস্টেম আমাদের নেই।”
রেল লাইনের নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করা হয়-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “অনেক স্থানে রেলের লাইনের নিরাপত্তার জন্য জনবল নিয়োগ করা থাকে, যারা লাইনের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু যেসব এলাকায় রেলের জনবল নেই এমন জায়গায় রেললাইন উপড়ে ফেললে তা জানার উপায় নেই।
“একটি স্টেশন থেকে আরেকটি স্টেশনের দূরত্ব যদি ২০ কিলোমিটার হয় তাহলে মাঝামাঝি কোনো স্থানে কেউ যদি রেললাইন তুলে ফেলে তাহলে পরের রেলটির সেই খবর জানা সম্ভব নয়।”
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম হাদিউজ্জামান বলেন, “এ ধরনের দুর্ঘটনা ম্যানুয়াল ইন্সপেকশন দিয়ে এড়ানো সম্ভব না। কারণ, তিনি পরিদর্শন করার পরেও কিন্তু দুর্বৃত্তরা এটি করে যেতে পারে।”
ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “ইউরোপে রেললাইনের ওপর সেন্সর বসানো থাকে। একটা ট্রেন যখন চলে, যদি এক কিলোমিটার পর্যন্ত ত্রুটি না থাকে, তাহলে পরের ট্রেনের যে চালক আছে, তাকে একটি সংকেত দেয়। তখন সে বুঝতে পারে, তার সামনে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন ত্রুটি রয়েছে কি না।
“এই প্রযুক্তি থাকলে ১ ইঞ্চিও যদি কেউ কেটে ফেলে, তাহলে হলুদ সংকেত চলে যাবে লোকমাস্টারের (ট্রেন চালক) কাছে। তখন তিনি সতর্ক হয়ে যাবেন।”
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “রেলকে আমরা নিরাপদ ও অত্যাধুনিক করতে চাচ্ছি। এ কারণেই আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে।”
উদ্ধার তৎপরতা সময়সাপেক্ষ
সড়ক দুর্ঘটনা আশেপাশের পুলিশ বা ফায়ার স্টেশন থেকে ছুটে গিয়ে যত দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালানো যায়, রেলের ক্ষেত্রে সেটি সম্ভব না।
জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার হানিফ আলী জানান, বিষয়টি ঢাকায় রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর সকাল পৌনে ৯টার দিকে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধারকারী ট্রেন প্রস্তুত করার বিষয় থাকে। এই ট্রেন আসে দূর থেকে। আসার পথে লাইনে অন্য ট্রেনের যাত্রা বাতিল বা বিঘ্নিত হয়। আর দুর্ঘটনায় পড়া ট্রেনকে টেনে তুলতে হয় শক্তিশালী ট্রেন দিয়ে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই যে কাজ করতে হয় সাবধানতার সঙ্গে।
উদ্ধারকারী ট্রেন যাওয়ার পর ১০ ঘণ্টা সময় লেগে যায় লাইনটি ট্রেন চলাচলে উপযোগী করতে।
গাজীপুরে রেলে নাশকতা: ১৪ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচলের উপযোগী
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান জানান, এই ঘটনায় শুধু রেললাইনের বগি-ইঞ্জিনই নয়, ৬০০ ফুট রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি স্লিপার পুরোই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ৩০০ ফুট রেললাইনে নতুন করে পাত বসানো হয়েছে।
রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুর্ঘটনায় পড়া ইঞ্জিন ও বগিগুলোকে উদ্ধার বা সরিয়ে নেওয়া যায়নি। সেটিও কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার বলে জানান রেলের কর্মীরা।
রাজনৈতিক বাদানুবাদ
গত ২৯ অক্টোবর থেকে বিরোধী দলের টানা আন্দোলনের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় পৌনে চারশ গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে একাধিক ট্রেনেও। তবে লাইনে নাশকতার ঘটনা এই প্রথম।
গাড়িতে আগুনের মতোই রেলের নাশকতা নিয়েও রাজনৈতিক বাদানুবাদ তৈরি হয়েছে।
এই ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বিএনপি এখন আর রাজনৈতিক দল নেই, সন্ত্রাসী জঙ্গি দলে পরিণত হয়েছে। তারা চোরাগোপ্তা হামলা করছে। একমাত্র রেল পথই নিরাপদ ছিল। তারা সেখানে আক্রমণ শুরু করেছে।”
তবে এ ঘটনায় তাদের দায় নেই জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘‘এভাবে যাত্রীদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। যারা এই কাজ করছে এরা মানবতার শত্রু।”
এই ঘটনায় আন্দোলনকারীদের দায় নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দুই একটি গণমাধ্যম এই ঘটনায় গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত দলগুলোর ওপর দোষ চাপানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে যা গভীর চক্রান্তমূলক।”
“জনগণ বিশ্বাস করে যে, সুপরিকল্পিতভাবেই এই নাশকতা ঘটানো হয়েছে। উদোর-পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতেই দুই-একটি গণমাধ্যম বিরোধী দলের চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে ন্যাক্কারজনক অপপ্রচার চালাতে শুরু করেছে।”
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের গাজীপুর ও নেত্রকোণা প্রতিনিধি)
এ কী রকম ধ্বংসাত্মক কাজ! প্রধানমন্ত্রীর বিস্ময়
ভোরে ২ ট্রেনের মাঝের এক ঘণ্টায় কাটা হয় লাইন
দেড় মাসে ৩৭৬ যানবাহনে আগুন: পুলিশ
‘২০ হাজার টাকার চুক্তিতে’ ট্রেনে আগুন দেওয়ার চেষ্টা, গ্রেপ্তার ১