ভোরে ২ ট্রেনের মাঝের এক ঘণ্টায় কাটা হয় লাইন

ভোররাত সোয়া ৩টার দিকে বনখড়িয়া এলাকা পার হয় ভাওয়াল এক্সপ্রেস; আর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস সাড়ে ৪টার দিকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বনখড়িয়া এলাকা দিয়ে ভোরে চলাচলকারী দুটি ট্রেনের মাঝখানের নীরব সময়টুকু কাজে লাগিয়ে রেললাইন কেটে দুর্বৃত্তরা নাশকতার ঘটনা ঘটায় বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

বনখড়িয়া এলাকাটির একপাশে রাজেন্দ্রপুর রেলওয়ে স্টেশন আর অপরপাশে ভাওয়াল গাজীপুর স্টেশন। রেললাইন বরাবর এখানে কোনো জনবসতি নেই। রেললাইনের দুই পাশে ধানি জমি ও বিল।

রেললাইন থেকে উত্তর ও দক্ষিণ পাশে বেশ কিছুটা দূর যাওয়ার পর মানুষের বাড়িঘর চোখে পড়ে। বনখড়িয়া থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর দিকে ছোট্ট বনখড়িয়া বাজার। যে এলাকায় লাইন কেটেছে দুর্বৃত্তরা সেটি অনেকটাই ফাঁকা জায়গা।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে থানার (জিআরপি) ওসি ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, “যতটুকু জানতে পেরেছি ‘ভাওয়াল একপ্রেস’ ট্রেনটি মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ পথের বনখড়িয়া এলাকা অতিক্রম করে দেওয়ানগঞ্জের দিকে চলে যায়।

“এর ঘণ্টাখানেক পর নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি এই এলাকা অতিক্রমের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুটি ট্রেনের মাঝখানে এক ঘণ্টার বেশি সময় ফাঁকা ছিল”, বলেন ওসি।

জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. হানিফ আলী বলেন, “ঢাকা থেকে দেওয়াগঞ্জগামী ভাওয়াল একপ্রেস নামের ট্রেনটি মঙ্গলবার রাত পৌনে ৩টার দিকে জয়দেবপুর জংশন অতিক্রম করে। ট্রেনটি ভোররাত সোয়া ৩টার দিকে বনখড়িয়া এলাকা পার হয়ে গন্তব্যের দিকে গেছে। আর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের দুর্ঘটনায় পড়ে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে।”

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে ট্রেনযাত্রী আসলাম মিয়া নিহত ও লোকো মাস্টারসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনার পর পরই ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর সেই রেললাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

এ ঘটনাকে নাশকতা হিসেবে উল্লেখ করে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দুর্বৃত্তরা অক্সি-অ্যাসিটিলিন গ্যাস ব্যবহার করে রেললাইন কেটেছে।

ভোর সাড়ে ৪টার দিকে দুর্ঘটনার পর সকাল থেকেই সেখানে শত শত মানুষজন জড়ো হয়। সেখানে ক্ষেতের মধ্য থেকে দুটি গ্যাস সিলিন্ডারও উদ্ধার করা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক রাকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে ধরনের গ্যাসের সিলিন্ডার এখানে পাওয়া গেছে এগুলো আমাদের এলাকার কোনো দোকানে বিক্রি হয় না। ফলে ধারণা করা যায়, এগুলো বাইরে থেকে নিয়ে এসেছিল দুর্বৃত্তরা।”

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আরেফিন বলেন, “এ গ্যাসের শিখা দিয়ে সাধারণত ভারী লোহা, লোহার পাত (জাহাজের পাত), সিসা কাটার কাজে ব্যবহার করা হয়।

“রেলের যে পাত কাটা হয়েছে এ গ্যাস ব্যবহার করে সেটি কাটতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগতে পারে। ঘটনাস্থলের পাশে থেকে ওই কাজে ব্যবহৃত অক্সি-অ্যাসিটিলিন ও এলপিজি গ্যাসের দুটি সিলিন্ডার উদ্ধার করা হয়েছে।”

দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গাজীপুরের প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেছেন, “এটা সাধারণ কোনো দুর্ঘটনা নয়। নাশকতার উদ্দেশ্যে রেললাইন কেটে রাখা হয়েছে।”

আরও পড়ুন:

গাজীপুরে রেলে নাশকতা: আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর

রেলে নাশকতা: নির্দোষ আসলামকে কেন মরতে হল, প্রশ্ন স্ত্রীর

রেললাইন কাটা হয় অক্সি-অ্যাসিটিলিন দিয়ে: ডিআইজি নুরুল

গাজীপুরে রেলে নাশকতা: ১৪ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচলের উপযোগী

‘দেখি ট্রেনের বগি কাত, কোনো রকমে জীবনটা নিয়ে বের হই’

গাজীপুরে রেললাইন কেটে ফেলায় বগি লাইনচ্যুত, এক জন নিহত

গাজীপুরে দুর্ঘটনা: বিকল্প পথে চলছে ট্রেন, ৩টির যাত্রা বাতিল

গাজীপুরে ছয়শ ফুট রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত, বসছে নতুন পাত