দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় আধা কিলোমিটার জনবসতিশূন্য এলাকায় প্রায় ২৫০ মিটার জুড়ে ৭টি বগি এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।
Published : 13 Dec 2023, 05:26 PM
ভোরের কনকনে শীতে জানালা বন্ধ করে সিটে বসেছিলাম; চোখে ঘুম। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে ট্রেন ঝাঁকুনি খেলে সিট থেকে পড়ে গড়াতে লাগলাম।
কথাগুলো বলছিলেন, বুধবার ভোরে গাজীপুরের ভাওয়ালে দুর্ঘটনায় পড়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী আমজাদ আলি। তিনি ওই ট্রেনে করে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন।
ভাওয়াল ও রাজেন্দ্রপুর রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে ফেলায় ভোর ৪টার দিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে একজন যাত্রী নিহত ও লোকো মাস্টারসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
ঘটনার পর পরই ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত রেলপথ মেরামত ও ট্রেনটি উদ্ধারের কাজ চলছিল।
আমজাদ আলি বলেন, “সিট থেকে ছিটকে পড়ার কারণে কুনই ও হাঁটুতে ব্যথা অনুভব করছিলাম। এক পর্যায়ে ঝাঁকুনি থেমে গেলে অনেক কষ্টে সোজা হই। পরে দেখি ট্রেনের বগি কাত হয়ে পড়ে আছে, কোনো রকমে জানালা দিয়া জীবনটা নিয়ে বের হই।
“বের হয়ে দেখি, রেললাইন বেঁকে গিয়ে ট্রেনটির বেশ কয়েকটি বগি কাত হয়ে আছে। যাত্রীরা ভয়ে চিৎকার শুরু করেছে।”
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় আধা কিলোমিটার জনবসতিশূন্য এলাকায় প্রায় ২৫০ মিটার জুড়ে সাতটি বগি এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে ইঞ্জিন ও চারটি বগি পড়ে আছে রেল লাইনের পূর্ব দিকে; বাকি বগিগুলো লাইনের পশ্চিম দিকে।
গাজীপুরে রেললাইন কেটে ফেলায় বগি লাইনচ্যুত, এক জন নিহত
গাজীপুরে দুর্ঘটনা: বিকল্প পথে চলছে ট্রেন, ৩টির যাত্রা বাতিল
গাজীপুরে ছয়শ ফুট রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত, বসছে নতুন পাত
বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ একটি শক্তিশালী এস্কেভেটর মেশিনের সাহায্যে দুটি বগি লাইন থেকে সরানো হয়। ততক্ষণে ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। রেলওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের বিশেষজ্ঞ দলকে উদ্ধার কাজ পরিকল্পনা করতে দেখা যায় সেখানে।
দুর্ঘটনার পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিবি, আনসার সদস্য, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। উৎসুক লোকজনের ভিড়ের কারণে ‘বিপদ এড়াতে’ বিশাল এলাকা ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঘটনাস্থলে কথা হয় হাবিবা খাতুন নামের ট্রেনের আরেক যাত্রীর সঙ্গে। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, “দুই শিশুসহ মাঝামাঝি একটি বগিতে আমরা মোট চারজন ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বগিটি পাশের একটি গভীর জমিতে পড়ে যায়।
“এ সময় পুরো বগি অন্ধকার হয়ে যায়; আমার সন্তানও হাতছাড়া হয়। তখন চারপাশ থেকে শুধু চিৎকারের শব্দ পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার সন্তান ও স্বজনদের খুঁজে পেয়ে জানালা দিয়ে বের হই। আমাদের অনেকের শরীরে আঘাত লেগেছে। ”
দুর্ঘটনাস্থলের পাশের বনখড়িয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, “ঘুমাইয়া ছিলাম; বিকট আওয়াজে ঘুম ভাঙে। ঘর থাইকা বাইর হইয়া শুনি, কান্নাকাটির আওয়াজ। কাছে গিয়া দেখি রেললাইন লণ্ডভণ্ড হইয়া কয়েকটা বগি এলোমেলো হইয়া আছে।
“যাত্রীদের চিৎকারে তহন আশপাশের শতশত লোকজন ছুটে আসছিল।”