শতকরা হিসাবে সবচেয়ে বেশি অসচল সাইট রাঙামাটিতে এবং সংখ্যার হিসাবে কুমিল্লায় বন্ধ রয়েছে।
Published : 27 May 2024, 11:31 PM
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে উপকূলের জেলাগুলোতে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোন সেবাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে; একই কারণে ইন্টারনেট সেবাও কাজ করছে না।
সোমবার বিদ্যুৎ না থাকার ভোগান্তি উপকূলের বাসিন্দাদের মত অতটা না হলেও রাজধানী ঢাকাসহ অনেক জেলার মানুষকেও পোহাতে হয়েছে। ঘনঘন লোড শেডিংয়ে রাজধানীতেও মোবাইল নেটওয়ার্কের দুর্ভোগে পড়ার কথা বলেছেন অনেকেই।
ঘূর্ণিঝড় রেমালে রবি ও সোমবার বিতরণ লাইন লণ্ডভণ্ড হওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেশের দুই কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক। এর মধ্যে কেবল পল্লী বিদ্যুতেরই ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ জন গ্রাহক আছেন বলে সোমবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ বিভাগের বার্তায় বলা হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলছে, বিদ্যুৎ না থাকায় ৬৪ জেলার ২২ হাজার মোবাইল সাইট (টাওয়ার) অচল হয়ে পড়েছে, যা মোট সাইটের ৪৮ শতাংশের বেশি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলেছে, উপকূলীয় জেলাগুলোর পাশাপাশি দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেও অনেক মোবাইল সাইট বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় সাইটগুলো সচল করা যাচ্ছে না।
বিটিআরসি বলছে, ঝড়ে উপকূলীয় জেলা বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, ভোলা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালীর ৭০ শতাংশের বেশি মোবাইল সাইট বন্ধ রয়েছে।
উপকূলীয় এসব জেলার পাশাপাশি কুমিল্লা, রাঙামাটি, গোপালগঞ্জ, মেহেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়াতেও অর্ধেকের বেশি সাইট বন্ধ রয়েছে।
সাইটগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিটিআরসির তরফ থেকে কোম্পানিগুলোকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
তবে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটব এক বিবৃতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নের কারণে প্রায় ১৫ হাজার মোবাইল সাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে।
বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, রেমালের কারণে উপকূলীয় নয় জেলার মোবাইল নেটওয়ার্ক উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেটওয়ার্ক দ্রুত ফিরিয়ে আনতে মোবাইল অপারেটরগুলো বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।
বিটিআরসির উপপরিচালক (জনসংযোগ) জাকির হোসেন খাঁনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪৫ হাজার ৬১০টি মোবাইল সাইটের মধ্যে ২২ হাজার ২১৮টি অচল হয়ে পড়েছে। অচল সাইটের সংখ্যা মোট সাইটের ৪৮ দশমিক ৭১ শতাংশ।
জেলাওয়ারি সংখ্যার দিক থেকে সব থেকে বেশি সাইট বন্ধ রয়েছে কুমিল্লায় ১ হাজার ৬৬০টি। এ জেলায় মোট সাইট রয়েছে ২ হাজার ৪৪৭টি, যেগুলোর মধ্যে বন্ধ সাইটের সংখ্যা মোট সাইটের ৬৮ শতাংশ।
শতকরা হিসাবে সবচেয়ে বেশি অসচল সাইট রাঙামাটিতে। জেলার ৮২ শতাংশ সাইট বন্ধ রয়েছে। এখানে মোট সাইটের সংখ্যা ৯৩টি। মেহেরপুরের ২৬৭টি সাইটের মধ্যে ২১৫টিই (৮১%) বন্ধ। গোপালগঞ্জের ৪৮৭টির মধ্যে বন্ধ ৩৮৮টি (৮০%)।
গত ২২ মে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেওয়া হয় রেমাল। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে।
এর প্রভাবে রোববার বিকাল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। পরদিন সকাল থেকে সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়ে দুর্বল হয়ে আসে রেমাল।