নির্বাচন, পুলিশ, বিচার, দুদক ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১২১টি সুপারিশকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ বলে মনে করছে উপদেষ্টা পরিষদ।
Published : 25 Mar 2025, 01:11 AM
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্য থেকে শতাধিক সুপারিশ ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ বলে মনে করছে উপদেষ্টা পরিষদ, সেগুলো পাঠানো হয়েছে একডজন মন্ত্রণালয়ে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, আশু বাস্তবায়নযোগ্য ওই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ‘অতি জরুরি ভিত্তিতে’ নির্ধারিত ছকে প্রস্তাব পাঠাতে মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।
সংস্কার সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামত নেওয়ার পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ চলার মধ্যে সরকারের এ উদ্যোগ এল, যাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, “এটি নির্বাচনকে ত্বরান্বিত করার কাজে সহায়ক হবে। সরকার ইচ্ছে করলে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো অধ্যাদেশ জারি করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারেন। বিশেষ করে নির্বাচন সংক্রান্ত অতি জরুরি সংস্কার সুপারিশগুলো যেমন আরপিও সংশোধন, আইন-বিধি সংশোধন করা যেতে পারে।
“আমরা ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর মতামত নিচ্ছি। এর মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংক্রান্ত। এগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু সরকারের ১২১টি সুপারিশের মধ্যে আশু বাস্তবায়নযোগ্য তালিকা হলে আইনি সংশোধন সম্ভব। এক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের মাধ্যমে এক্সপার্টদের মতামত নিয়ে অধ্যাদেশ করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব।”
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১২১টি সুপারিশকে আশু বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করছে উপদেষ্টা পরিষদ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইতোমধ্যে বলেছেন, ছয় সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সংলাপের দরকার নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো নিজ উদ্যোগেই সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “এসব প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের জন্য বড় ধরনের অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। তাই দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে ৩০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠানো হবে।”
এর ধারাবাহিকতায় এক সপ্তাহের মাথায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব নির্ধারিত ছকে চেয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগর সংস্কার অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (শুদ্ধাচার শাখা) মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি ১৯ মার্চ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ একডজনের বেশি মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়।
মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, “প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আশু বাস্তবায়নযোগ্য বাছাই করা প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্ধারিত ছকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।”
আশু করণীয়/ সুপারিশ, বাস্তবায়নকারী, বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সময় এবং আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে, কিনা তা তুলে ধরতে হবে ছকে।
জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক, ভূমি, ইসি, অর্থ, দুদক, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, জ্বালানি ও খনিজ, তথ্য ও সম্প্রচার এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
আশু বাস্তবায়নযোগ্য ১২১টি সুপারিশের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য নয়টি বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে। এ ছাড়া বিচার বিভাগের ৩৮ দফা, দুদক সংস্কার কমিশনের ৪৩ দফা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৩ দফা ও জন প্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮ দফা রয়েছে।
রোববার ঐকমত্য কমিশনে ১৬৬টি বিষয়ে মতামত দেওয়ার পর এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা গেছে, ১২১টি সংস্কার প্রস্তাব দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ছাড়া বাস্তবায়নের কথা ভাবছে সরকার। এসব কি প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হল তাও আমাদের জিজ্ঞাসা ছিল কমিশনের কাছে।”
পুলিশ সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার কমিশনের প্রতিবেদন না পাঠানোর বিষয়টিও ঐকমত্য কমিশনের কাছে জানতে চায় এনসিপি।
আশু বাস্তাবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর মধ্যে ইসি, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের নয়টি বিষয় রয়েছে। এগুলো হল- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (সংশোধন), নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ (সংশোধন), নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও গণমাধ্যম নীতিমালা (স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক) পর্যবেক্ষণ ও সাংবাদিক নীতিমালা (সংশোধন), রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন, হলফনামার খসড়া, ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ (অভ্যন্তরীণ ও প্রবাসী), পোস্টাল ব্যালট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন এবং রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করা।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর তা সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রস্তাব বাছাইয়ে কাজের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনারদের একজন বলেন, “মাত্র চিঠি হাতে এসেছে। বিষয়গুলো দেখে আলোচনা করে তারপর বলা যাবে।”
নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আমরা বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পেয়েছি। এখন কমিশনে পর্যালোচনা করে প্রস্তাবগুলো দেওয়া হবে।”
ইতোমধ্যে সংস্কার কমিশনের অন্তত ১০টি সুপারিশের বিষয়ে মতামত তুলে ধরে ঐকমত্য কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে ভিন্ন মতামত তুলে ধরার পাশাপাশি সুপারিশ বাস্তবায়নে করণীয়ও তুলে ধরেছে ইসি।
ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “ইসির মতামতগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। এসব প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে।”
আরও পড়ুন-
নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ১৫০ সুপারিশ কমিশনের
নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ১৫০ সুপারিশ কমিশনের
যা যা আছে চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে
কিছু সংস্কারে সংলাপ প্রয়োজন নেই: প্রেস সচিব
এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার প্রস্তাব বিএনপির