আট বছরে ‘পরী’র গর্ভেই জন্ম নিয়েছে ১৫টি ছানা। যার মধ্যে তিনটি মারা গেছে।
Published : 26 Apr 2024, 10:06 PM
চার বছর বাঘহীন থাকায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয় এক জোড়া বাঘ-বাঘিনী। আট বছরের ব্যবধানে এখন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা ১৯টি।
এর মধ্যে মধ্যে একটি বাঘিনীর গর্ভেই জন্মেছে ১৫টি শাবক। এদের মধ্যে মারা গেছে তিনটি শাবক।
প্রায় ৯ বছর বয়সী এই বাঘিনীটি চিড়িয়াখানায় ‘পরী’ নামে পরিচিত।
২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘিনী ‘পূর্ণিমা’ মারা যায় ক্যান্সারে। এরপর চার বছর বাঘশূন্য থাকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।
২০১৬ সালে ৩৩ লাখ টাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সংগ্রহ করা হয় বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির এক জোড়া বাঘ-বাঘিনী। ১১ ও ৯ মাস বয়সী এই জোড়ার নাম দেয়া হয় ‘রাজ-পরী’।
২০১৮ সালের ১৯ জুলাই রাজ-পরীর ঘরে প্রথমবারের মত তিনটি শাবকের জন্ম হয়। তার মধ্যে দুটি ছিল সাদা এবং একটি কমলা-কালো ডোরার।
কমলা-কালো ডোরাকাটা শাবকটির নাম দেয়া হয় ‘জয়া’। সাদা দুই শাবকের মধ্যে একটি একদিন পরই মারা যায়। আর বেঁচে থাকা সাদা শাবকটির নাম দেওয়া হয় ‘শুভ্রা’। যেটি দেশের প্রথম সাদা বাঘ বলে দাবি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের।
সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল রাজ-পরী দম্পতির ঘরে আসে আরও তিনটি শাবক, যার মধ্যে একটি ছিল মৃত, বাকী দুইটি মেয়ে শাবক।
এর আগে রাজ-পরীর ঘরে ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর দুটি শাবকের জন্ম হয়। তার মধ্যে একটি মারা যায় পরদিন; অন্যটি কমলা-কালো বাঘিনী, মহামারীর শুরুতে জন্ম বলে এর নাম রাখা হয় ‘করোনা’।
এরপর ২০২১ সালের ৬ মে রাজ-পরীর সংসারে আসে আরও তিন শাবক, এর মধ্যে দুটি বাঘ, একটি বাঘিনী; সবগুলোই কমলা-কালো ডোরার।
২০২২ সালের ৩০ জুলাই রাজ-পরী জন্ম দেয় চারটি শাবকের, যার সব গুলোই সাদা। যার তিনটি বাঘ ও একটি বাঘিনী।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে দুইটি বাঘ রংপুর চিড়িয়াখানায় দিয়ে সেখান থেকে দুইটি জলহস্তী আনা হয়েছে। বর্তমান সময়ে চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা ১৯টি। যার মধ্যে ১৩টি বাঘিনী ও ছয়টি বাঘ।
এছাড়া ১৯টি বাঘের মধ্যে পাঁচটিই সাদা বাঘ বলে জানান তিনি।
রাজ-পরীর প্রথমবারের তিন সন্তানের একটি শুভ্রা। সেই শুভ্রার সঙ্গে জুটি বেঁধে রাজ ২০২১ সালে জন্ম দেয় একটি বাঘিনীর।
সেই বাঘিনীর একটি পায়ে সমস্যা আছে, পায়ের পাতা এবং নখেও আছে খুঁত।
ডেপুটি কিউরেটর শুভ বলেন, “পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রজননের (ইনব্রিডিং) ফলে অনেক সময় নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে শাবকের। এই বাঘিনীর ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। এটি ক্লাবড ফিট (clubbed feet); অর্থাৎ হাঁটুর প্যাটেলা (গোলাকার অংশ) বাঁকানো। ফলে একটি পা বাঁকা। এছাড়া দুটি পায়ের পাতা লাগানো। একটি থাবায় নখ একটি কম।”
তিনি বলেন, “চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা অনুযায়ী আরও বেশি ব্রিডিং করানো যেত। কিন্তু আমরা সে পথে যাচ্ছি না। এখনে বেশি ব্রিডিং হলে ‘ইন ব্রিডিংয়ের’ কারণে বিকলাঙ্গ শাবকের জন্ম হতে পারে। তাই ব্রিডিংয়ের জন্য পরীর ওপর বেশি নজর রাখছি।
“ক্রস ব্রিডিং (পরিবারের সদস্য নয়, এমন বাঘের মাধ্যমে প্রজনন) করতে পারলে সুস্থ বাঘ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। তাই আমাদের প্রয়োজন রাজ-পরী পরিবারের সদস্য নয়- এমন একটি বাঘ।”
একটি বাঘ গর্ভধারণ করে আড়াই বছর বয়েসে। ১২০ দিন পর সন্তান জন্ম দেয়। জন্ম নেয়া বাঘ শাবকের মধ্যে মেয়ে হলে সেগুলো আড়াই বছর এবং ছেলে শাবক দুই বছর মায়ের সাথে থাকে। এভাবে একটি বাঘ সর্বোচ্চ পাঁচ বার সন্তান প্রসব করতে পারে।
ডেপুটি কিউরেটর শুভ বলেন, “আমরা চাই মায়ের সাথে থাকাবস্থায় যাতে বাঘ গর্ভধারণ না করে। তাই মায়ের কাছ থেকে শাবককে সরিয়ে নেয়ার পর ব্রিডিংয়ের সুযোগ করে দেই।”
তিনি বলেন, একটি বাঘের গড় আয়ু ১৬ বছর। মায়ের সাথে দুই থেকে আড়াই বছর শাবক রাখা এবং বয়স বিবেচনায় একটি বাঘ সর্বোচ্চ পাঁচবার গর্ভধারণ করতে পারে।
তবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘীনি ‘পরী’ আরও একবার গর্ভ ধারণ করার আশা প্রকাশ করেছেন ডেপুটি কিউরেটর।
“চিড়িয়াখানায় যেসব বাঘের জন্ম হয় সেগুলোকে ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ বলা হয়। যেহেতু বাঘগুলোর জন্ম জঙ্গলে নয়, তাই সেগুলো দুই থেকে আড়াই বছর মায়ের সাথে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। এ কারণে ৯ বছর বয়সেই ‘পরী’ পাঁচবার গর্ভধারণ করেছে। তাই আরও একবার ‘পরী’ গর্ভধারণ করতে পারে বলে আমাদের আশা।”
এছাড়া ‘পরীর’ গর্ভে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেয়া ‘জয়া’ বিভিন্ন সময়ে আটটি শাবক প্রসব করেছে। তার মধ্যে দুইটি শাবকের মৃত্যু হলেও আছে ছয়টি বাঘ। সেগুলোর মধ্যে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া তিনটি ছাড়া বাকীগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক।
পুরানো খবর:
চট্টগ্রামে নতুন ঠিকানায় আফ্রিকার বাঘ-বাঘিনী
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় 'রাজ-পরীর ঘরে' নতুন অতিথি
রাজ-পরীর শাবকেরা পেল নদীর নামে নাম
রাজ-পরীর সাদা ছানাদের তিনটি বাঘ, একটি বাঘিনী