সোলেদারে পিছু হটার কথা স্বীকার করলো ইউক্রেইন

গত কয়েক মাসের যুদ্ধে ইউক্রেইনে রাশিয়ার এটি প্রথম জয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2023, 05:39 PM
Updated : 19 Jan 2023, 05:39 PM

পূর্ব ইউক্রেইনের দনবাস অঞ্চলের সোলেদার শহর থেকে পিছু হটার কথা স্বীকার করে নিয়েছে ইউক্রেইন। গত সপ্তাহে রুশ বাহিনী লবনখনির এই শহরটির দখল নেওয়ার দাবি করলেও ওই সময় ইউক্রেইন বলেছিল, সেখানে তাদের বাহিনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউক্রেইনের যেসব অঞ্চলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেইনের সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে সোলেদার তার অন্যতম।

সোলেদারের এই জয় রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইউক্রেইনে লড়াইরত রুশ সেনাদের মনোবল চাঙ্গা করতে। কারণ, গত কয়েকমাস ধরে সেখানে কেবল পরাজয়ই দেখছিল রুশ বাহিনী।

তাছাড়া, সোলেদার ও বাখমুত শহরের দখল নিতে পারলে সেটি হবে ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পথে রাশিয়ার জন্য বড় ধরনের অগ্রগতি। সোলেদার ও এর বিশাল লবন খনিগুলোর দখল রাশিয়ার জন্য সামরিক ও বাণিজ্যিকভাবেও মূল্যবান হবে।

যদিও ইউক্রেইনের সেনারা সোলেদারে তাদের পিছু হটাকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তারা বিবিসিকে বলেন, পরিকল্পিত পাল্টা আক্রমণের আগে তাদের এই পিছু হটে যাওয়া ‘নিয়ন্ত্রিত এবং যুদ্ধ কৌশলের অংশ’।

বিবিসি জানায়, সোলেদার ও প্রতিবেশী শহর বাখমুতে বন্দুক ও কামানের তুমুল লড়াই চলেছে। শহর দুটির ধূসর ও খসখসে মাঠ জুড়ে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের লড়াইয়ে চিহ্ন ছড়িয়ে আছে।

Also Read: সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপের

Also Read: সোলেদার রুশ নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার দাবি অস্বীকার করল ইউক্রেইন

Also Read: সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপের

ইউক্রেইনের সেনাদের একটি ইউনিটের কমান্ডার ‍আন্দ্রিয় বলেন, ‘‘এটা (রুশ বাহিনীর অবস্থান) খুব কাছে, এক কিলোমিটারের মধ্যে।”

সেখানে আসলে কী হচ্ছে সেটা নিশ্চিত হওয়া প্রায় অসম্ভব বলে জানিয়েছে বিবিসি। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ার শব্দ, মাথার উপর আওয়াজ, কামান ও রকেটের গোলা বিস্ফোরণের ক্রামগত শব্দ বলে দিচ্ছে রুশ বাহিনী খুব কাছেই অবস্থান করছে।

ইউক্রেইনের ৪৬তম এয়ার অ্যাসল্ট ব্রিগেডের এক প্রেস কর্মকর্তা বিবিসির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সোলেদারের কাছে যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধক্ষেত্র ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে, আগে থেকে অবস্থান অনুমান করা যাচ্ছে না। কখনো কখনো এক দিনে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যুদ্ধ চলছে।”

আন্দ্রিয় স্বীকার করেন, ‘‘এখানে আমরা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি।

‘‘আমরা প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ শত্রু সেনাকে হত্যা করছি।”

সোলেদার শহরের ভেতর ও চারপাশ ঘিরে যে লড়াই চলছে তা ইউক্রেইনে এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধের অন্যতম। মূলত রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদের গোষ্ঠী ওয়াগনার গ্রুপ সেখানে লড়াই করছে এবং তাদের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা পাহাড়ি শহরটির নিয়ন্ত্রণ পেতে চলেছে।

এদিকে, সোলেদার শহর হতছাড়া হওয়ার কারণ হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউক্রেইনীয় সেনা অভিযোগ করে বলেছেন, বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে সমন্বয়ের ত্রুটির কারণে তারা সোলেদারে হেরে গেছে।

একই সঙ্গে তারা এটাও স্বীকার করেছে, রাশিয়া এখন সোলেদারের চেয়েও বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুতের দখল পেতে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

যদিও সোলেদারের কাছের গ্রামগুলোতে যুদ্ধরত ইউক্রেইনের কয়েকটি ইউনিট এখনো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তারা রুশ বাহিনী থেকে মাত্র কয়েকশ’ মিটার দূরে অবস্থান করছে।

আন্দ্রিয় বলেন, ‘‘এটি একটি নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি। আমি আমার কমান্ডারের প্রতি বিশ্বাস রাখছি। কখনও কখনও এক পা পিছিয়ে যাওয়া সত্যিই ভালো.... তারপর একটি পাল্টা আক্রমণ করে শত্রুকে গুঁড়িয়ে দেওয়া যাবে।”