পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় হাজার হাজার মৃত্যু ও আসন্ন দুর্ভিক্ষের মুখে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মাসব্যাপী রোজার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। এমনিতে ফিলিস্তিনে উৎসবমূখর পরিবেশে রমজান শুরু হলেও এবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়া ও ইসরায়েলি পুলিশের কড়া পাহারার মধ্যে মাসটি শুরু হচ্ছে।
পুরনো জেরুজালেম শহরের সরু গলিগুলোতেও হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। এসব অলিগলিতে লাখখানেক মুসলিমের বাস। তারা প্রতিদিন ইসলাম ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদে নামাজ পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই স্থানটি ইহুদিদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত। তাদের মধ্যে এটি টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত। দীর্ঘ দিন ধরেই এই এলাকাটি দুই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। ২০২১ সালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১০ দিনব্যাপী যে যুদ্ধ হয়েছিল তার শুরু হয়েছিল এই স্থানকে কেন্দ্র করেই।
এখন গাজায় ষষ্ঠ মাসে গড়ানো যে যুদ্ধ চলছে তার তুলনায় সর্বশেষ ওই যুদ্ধ নিতান্ত বামন হয়ে গেছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের নজিরবিহীন হামলা এ যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত হয় বলে ভাষ্য ইসরায়েলের।
এর প্রতিশোধ নিতে ও হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য ঘোষণা করে ওই দিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা তাদের অবিরাম আক্রমণে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩১০০০ ছাড়িয়ে গেছে। এখন ভূখণ্ডটির আরও বহু মানুষ দুর্ভিক্ষে মৃত্যুর হুমকির মুখে পড়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, দেশে ও বিদেশে রোববার দেওয়া রমজানের বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা, একটি যুদ্ধবিরতি এবং ওই অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদি স্থিতিশীলতার অঙ্গীকার করেছেন।
গত মাসে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন জিভির বলেছিলেন, তিনি আল আকসা মসজিদে নামাজিদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চান। তার এই বক্তব্য তখন কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল। পরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, এবারও গত বছরের মতো একই সংখ্যক মুসলিমকে এখানে নামাজ পড়ার অনুমোদন দেওয়া হবে।
আল আকসার তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান জেরুজালেম ওয়াকফের মহাপরিচালক আজ্জাম আল-খাতিব বলেছেন, “এটি আমাদের মসজিদ। আমাদেরই এটার দেখভাল করতে হবে। আমাদের অবশ্যই এই মসজিদে শান্তিপূর্ণভাবে এবং নিরাপদে প্রবেশ করতে সক্ষম হওয়া বিপুল সংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।”
রোজার শুরু চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। ফিলিস্তিনে সোমবার থেকে রোজা শুরু হয়েছে আর কিছু আরব ও অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে মঙ্গলবার থেকে রোজা শুরু হবে।
আরও পড়ুন: