ইসরায়েল নিজেদের জনসংখ্যা স্থানান্তর করে এসব বসতির বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে আর তা ‘যুদ্ধাপরাধ’, বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার।
Published : 09 Mar 2024, 11:40 AM
ফিলিস্তিনের দখলকৃত ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি রেকর্ড পরিমাণে বিস্তৃত হচ্ছে আর তাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বাস্তব সম্ভাবনা বিলীন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান।
ইসরায়েল নিজেদের জনসংখ্যা স্থানান্তর করে এসব বসতির বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে আর তা ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক।
গত মাসে ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন গৃহায়ণ পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন একে আন্তর্জাতিক আইনের ‘পরিপন্থি’ বলে অভিহিত করেছে।
“বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ও বসতি স্থাপনের সঙ্গে সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন বেদনাদায়কভাবে নতুন স্তরে পৌঁছে গেছে আর একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সব বাস্তব সম্ভাবনা বিলীন করার ঝুঁকি তৈরি করছে,” এক বিবৃতিতে বলেছেন তুর্ক।
রয়টার্স জানিয়েছে, মার্চের শেষ দিকে জেনিভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে যে প্রতিবেদনটি পেশ করা হবে তার সঙ্গে এ বিবৃতিটি দিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও অন্য সূত্রগুলোর ভিত্তিতে তৈরি করা ১৬ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনটিতে ২০২৩ এর অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এক বছর সময়সীমার মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ২৪৩০০টি নতুন হাউজিং ইউনিট গড়ে তুলেছে বলে নথিবদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে পর্যবেক্ষণ শুরু করার পর থেকে এটিই একক সময়ে সবচেয়ে বেশি হাউজিং ইউনিট গড়ে তোলার রেকর্ড বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল রাষ্ট্র ও তাদের বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার তীব্রতা, নির্মমতা এবং নিয়মিত ঘটার বিষয়টি নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় থেকে।
ওই সময় থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী অথবা বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে এমন ঘটনাও নথিবদ্ধ হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে সেনাবাহিনীর উর্দি পরে সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত রাইফেল নিয়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা করেছে অথবা তাদের নির্যাতন করেছে। কখনো কখনো তারা খুব কাছ থেকে গুলিবর্ষণ করেছে। এসব ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে যে সীমারেখা আছে তা প্রায়ই অস্পষ্ট হয়ে গেছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ইসরায়েলিরা দখল করে নেয়। এখন পশ্চিম তীরের যেখানে তারা ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ করছে সেখানে তাদের ‘বাইবেল বর্ণিত জন্মগত অধিকার’ আছে বলে দাবি করে আসছে ইসরায়েল।
আর দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা পশ্চিম তীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে এবং ‘সন্দেহভাজন জঙ্গিদের’ লক্ষ্যস্থল করছে।
১৯৯০ দশকের প্রথমদিকে হওয়া অসলো চুক্তিতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ ওই দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের বিষয়টি নতুন করে সামনে এনেছে। কিন্তু ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টিতে এ পর্যন্ত সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে আর ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ এক্ষেত্রে একটি বাধা হিসেবেই রয়ে গেছে।
জেনিভায় নিযুক্ত ইসরায়েলের কূটনৈতিক মিশন বলেছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের দপ্তরের প্রতিবেদনটিতে ফিলিস্তিনি ‘সন্ত্রাসবাদ’ উপেক্ষা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
‘অনাহার’ কৌশলে গাজার খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ
গাজায় বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ বান্ডিলের আঘাতে নিহত ৫
গাজায় সমুদ্রপথে ত্রাণ করিডোর চালু হতে পারে রোববারের মধ্যে: ইইউ