জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধে অপ্রত্যক্ষ আলোচনা শুরু করতে তেল আবিব ৪৫ দিনের একটি অন্তর্বর্তীকালীন যুদ্ধবিরতি চেয়েছিল। হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে বলেও শর্ত দিয়েছিল তারা।
Published : 18 Apr 2025, 11:42 AM
ইসরায়েলের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন বিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হামাস বলেছে, তারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি এবং ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে তাদের হাতে থাকা বাকি সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে চায়।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির প্রধান খলিল আল-হায়া বলেছেন, তারা আর কোনো ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তিতে রাজি হবে না। হামাসের যে দলটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে হায়া তারও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
হামাসের এই অবস্থান ইসরায়েল মেনে নেবে না এবং গাজায় তেল আবিবের সাম্প্রতিক অভিযান আরও দীর্ঘায়িত হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
হায়া বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলের কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি ও গাজার পুনর্গঠনের বিনিময়ে সব জিম্মিকে ছাড়তে হামাস যত শিগগির সম্ভব একটি ‘পূর্ণাঙ্গ চুক্তির আলোচনায়’ বসতে চায়।
“নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডার ঢাল হিসেবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সরকার এসব আংশিক চুক্তিগুলোকে ব্যবহার করছে, সব জিম্মিকে বলি দিয়ে হলেও তারা এটা করতে চায়। আমরা এই নীতি বাস্তবায়নের অংশ হতে চাই না,” বলেছেন তিনি।
সোয়া এক বছরের যুদ্ধ শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েল যে যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয়েছিল, গত মাসে তা ভেস্তে যায়। মিশরের মধ্যস্থতাকারীরা এখনও জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরুজ্জীবনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
“হামাসের মন্তব্য প্রমাণ করে যে তারা শান্তিতে নয় বরং চিরস্থায়ী সহিংসতায় আগ্রহী। ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত বদলায়নি: জিম্মিদের মুক্তি দাও, নতুবা নরকের মুখোমুখি হও,” বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট।
যুদ্ধবিরতি পুনরুজ্জীবিত করা ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে সোমবার কায়রোতে হওয়া সর্বশেষ রাউন্ডের আলোচনায় কোনো ধরনের সমঝোতাই হয়নি, রয়টার্সকে এমনটাই বলেছে ফিলিস্তিনি ও মিশরীয় সূত্রগুলো।
জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধে অপ্রত্যক্ষ আলোচনা শুরু করতে ইসরায়েল ৪৫ দিনের একটি অন্তর্বর্তীকালীন যুদ্ধবিরতি চেয়েছিল।
কিন্তু তাদের দেওয়া বেশকিছু শর্তে আপত্তি আছে হামাসের। তেল আবিবের শর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল- হামাসের নিরস্ত্রীকরণ।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি বারবারই বলেছে, ‘অস্ত্র সমর্পণ’ এমন একটি ‘লাল দাগ’, যা নিয়ে আলোচনা তো দূর, কোনো অবস্থাতে বিবেচনাও করা হবে না।
হায়ার অভিযোগ, ইসরায়েল ‘অসম্ভব সব শর্ত’ দিয়ে নানান প্রস্তাব হাজির করছে, যেগুলো ‘মানার কোনো কারণই নেই’।
জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর হামাস এখন পর্যন্ত ৩৮ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে।
যুদ্ধ বন্ধের নিশ্চয়তা না দিয়ে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব হামাস প্রত্যাখ্যান করলে মার্চে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তাদের স্থল অভিযান ও বিমান হামলা ফের শুরু করে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, বাকি ৫৯ জিম্মির মুক্তি ও গাজাকে ‘ডিমিলিটারাইজড’ না করা পর্যন্ত তাদের অভিযান চলবে।
অন্যদিকে হামাস বলছে, যুদ্ধ বন্ধে কোনো চুক্তি হলেই কেবল তারা জিম্মিদের মুক্তি দেবে এবং যা-ই ঘটুক না কেন তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না।