ধূলিকণা যত দূরে ভ্রমণ করেছে ততই পরিবর্তিত হয়েছে এর আয়রনের পরিমাণ, যা মহাসাগরের প্রাণের পক্ষে আয়রনকে শোষণ করা সহজ করে তুলেছে।
Published : 26 Sep 2024, 04:55 PM
হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও মহাসাগরের প্রাণে শক্তি জোগাচ্ছে বা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে সাহারা মরুভূমি থেকে উড়ে আসা ধূলিকণা— সম্প্রতি এমনই উঠে এসেছে এক বিস্ময়কর আবিষ্কারে।
সাহারা মরুভূমির এই ধূলিকণায় রয়েছে আয়রন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, যা কোনো জ্যান্ত প্রাণীর শ্বাসপ্রশ্বাস, সালোকসংশ্লেষণ ও ডিএনএ সংশ্লেষণের মতো বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।
আজকের মহাসাগরের অনেক অংশে আয়রনের সরবরাহ কম। যার মানে, আরও আয়রন যোগ হলে তা ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন নামের ক্ষুদ্র উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যেটি পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে ও বৈশ্বিক জলবায়ুকে প্রভাবিত করতে সহায়তা করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
নদী, গলে যাওয়া হিমবাহ, হাইড্রোথার্মাল কার্যকলাপ ও বিশেষ করে বাতাসের মাধ্যমে মহাসাগরে প্রবেশ করতে পারে আয়রন। তবে জ্যান্ত প্রাণীর মাধ্যমে সহজে শোষিত হতে পারে না আয়রনের সব রূপ।
জ্যান্ত প্রাণীরা যে ধরনের আয়রনের গঠন ব্যবহার করতে পারে তাকে বলা হয় ‘বায়োরিঅ্যাকটিভ’ আয়রন।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেরিন সায়েন্স’-এ। এতে দেখা গেছে, সাহারা মরুভূমির ধূলিকণার আয়রন আটলান্টিক মহাসাগর থেকে যত দূরে ভ্রমণ করে তত বেশি তা ‘বায়োরিঅ্যাকটিভ’ হয়ে ওঠে।
এর মানে হচ্ছে, সাহারা মরুভূমির ধূলিকণা পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন আয়রনকে মহাসাগরের প্রাণের জন্য আরও ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।
সাহারা মরুভূমির থেকে আসা এই ধূলিকণা ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা বোঝার চেষ্টা করেছেন ‘ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি’র সহযোগী অধ্যাপক ড. জেরেমি ওয়েনস ও তার গবেষণা দলটি।
এজন্য আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশ থেকে ড্রিল কোর বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা, যা সংগ্রহ করা হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ওশান ডিসকভারি প্রোগ্রাম (আইওডিপি)’-এর মাধ্যমে। এসব কোরে পলির স্তর রয়েছে, যেগুলো তৈরি হয়েছে গত এক লাখ দুই হাজার বছর ধরে, যা মহাসাগরের তলদেশের অতীতের পরিবেশগত অবস্থার রেকর্ড সরবরাহ করে।
‘সাহারা-সাহেল ডাস্ট করিডোর’ থেকে দূরত্বের ভিত্তিতে চারটি কোর নির্বাচন করেছেন গবেষকরা। এটি মৌরিতানিয়া থেকে শাদ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি অঞ্চল, যা প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা তৈরির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
এর মধ্যে দুটি কোর সংগ্রহ করা হয়েছে মৌরিতানিয়া থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলের কাছাকাছি। অন্য দুটি কোর অনেক দূর থেকে সংগ্রহ করা হয়, যার একটি মধ্য আটলান্টিক থেকে ও অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পূর্বে।
কোরের এসব পলিতে মোট আয়রনের পরিমাণ ও এতে উপস্থিত নির্দিষ্ট ধরনের আয়রনের বিভিন্ন রূপ পরিমাপ করেন গবেষকরা। এখানে ‘বায়োরিঅ্যাকটিভ’ আয়রনের পরিমাণ চিহ্নিত করার দিকে বেশি নজর দেন তারা, যা মহাসাগরে সহজেই দ্রবীভূত হতে পারে ও সামুদ্রিক জীবের কাজে লাগতে পারে।
গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, মহাসাগরের আরও পশ্চিমে সংগৃহীত পলিতে বায়োরিঅ্যাকটিভ আয়রনের পরিমাণ কম। এ থেকে বোঝা যায়, সাহারা মরুভূমির ধূলিকণা সমুদ্র জুড়ে ভ্রমণ করার সময় বায়োরিঅ্যাকটিভ আয়রনের বেশিরভাগই পানিতে থাকা জীবের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই মহাসাগরের তলদেশে আয়রনের পরিমাণ কম। এমনকি ধূলিকণা যত দূরে ভ্রমণ করেছে ততই পরিবর্তিত হয়েছে এর আয়রনের পরিমাণ, যা মহাসাগরের প্রাণের পক্ষে আয়রনকে শোষণ করা সহজ করে তুলেছে।
এই দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রা আয়রনকে আরও দ্রবণীয় এবং জীবের জন্য সহজলভ্য করে তোলে, বলেছেন রিভারসাইডের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র অধ্যাপক ও এ গবেষণার প্রধান লেখক ড. টিমোথি লিয়ন্স।
এ ধূলিকণা আমাজন অববাহিকা বা বাহামার মতো অঞ্চলে পৌঁছানোর সময় আয়রনে পরিণত হয়, বিশেষ করে বায়োরিঅ্যাক্টিভ আয়রনে সমৃদ্ধ হয় এটি। যা স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রকে অনেক প্রভাবিত করে।
সাহারা মরুভূমি থেকে আসা ধূলিকণা এর উৎস থেকে দূরে থাকা প্রাণের উপর বড় প্রভাবই ফেলে না, বরং মহাসাগরের জীবকে সমর্থন করে ও গোটা বিশ্বের পরিবেশগত বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এমন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানও সরবরাহ করে।