“উপাচার্য চাইলে কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। তবে কাউকে কন্টিনিউয়াসলি আমন্ত্রণ জানানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা নজিরবিহীন,” বলেন একজন সিন্ডিকেট সদস্য।
Published : 19 Apr 2025, 12:08 AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য না হলেও ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় অংশ নিচ্ছেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ; আলোচনায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তারা সম্মানীও গ্রহণ করছেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকরা বলছেন, ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিন্ডিকেট সদস্য না হলে সভায় অংশগ্রহণ বা সম্মানী গ্রহণের সুযোগ নেই। শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহের স্বার্থে কাউকে পর্যবেক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো যায়, তাও সীমিত ক্ষমতার আওতায়। সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তিনি অংশ নিতে পারেন না।
কিন্তু কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ এ পর্যন্ত সাতটি সিন্ডিকেট সভায় অংশ নিয়ে সভার আলোচনায় সক্রিয় থেকেছেন এবং প্রতি সভায় উপস্থিতির জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে সম্মানী গ্রহণ করেছেন, যাকে ‘নজিরবিহীন’ বলেছেন সিন্ডিকেটের একজন সদস্য।
সিন্ডিকেট সদস্য আবু হোসাইন মোহাম্মদ আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "উপাচার্য চাইলে কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। তবে কাউকে কন্টিনিউয়াসলি আমন্ত্রণ জানানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা নজিরবিহীন। আমি গত দুই বছর ধরে সদস্য হিসেবে আছি। আমি কখনো দেখি নাই।"
সম্মানীর বিষয়ে তিনি বলেন, "সিটিং অ্যালাউন্স শুধুমাত্র সিন্ডিকেট সদস্যদের জন্য। আমি এর আগে কখনো অন্য কাউকে নিতে দেখি নাই।"
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ, তবে তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন শিক্ষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা, যোগ্যতা ও মর্যাদা নির্ধারিত এবং অন্য কোনো পদে থাকা ব্যক্তির এসব সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
“সদস্য না হয়েও ধারাবাহিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং সম্মানী গ্রহণ ঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দুর্বলতা, বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড এবং আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।”
সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণ এবং সম্মানী নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তারা দুজনেই বলেছেন, তারা সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণ করেছেন উপাচার্যের আমন্ত্রণে।
প্রশ্ন করা হলে সাইফুদ্দিন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপাচার্যের এখতিয়ার আছে আমন্ত্রণ জানানোর। তাই, আমরা তার আমন্ত্রণে সিন্ডিকেটে অংশগ্রহণ করেছি। আর প্রতিটি সিন্ডিকেট সভায় সদস্যদের জন্য সম্মানীর ব্যবস্থা রয়েছে।”
অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “উপাচার্য মহোদয়ের এখতিয়ার আছে যে কাউকে ইনভাইট করার। আমরা তার ইনভাইটেশনে সিন্ডিকেটে গিয়েছি ।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তাদের অবজারভার হিসেবে রেখেছি। প্রতিবার সিন্ডিকেট মিটিংয়ের আগে তারা আমার কাছ থেকে পারমিশন নেন। তবে অধ্যাদেশের ধারায় এটা উল্লেখ আছে আমি জানি। তাই তারা অবজারভার হিসেবে অংশ নেন। এখানে নিয়মের লঙ্ঘন হওয়ার মত কিছু দেখছি না।”
তাদের সম্মানী গ্রহণের বিষয়ে প্রশ্ন করলে উপাচার্য বলেন, “এ বিষয়ে আমি আলাপ করে দেখব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশকে সম্মান জানিয়ে এবং আর্থিক সাশ্রয়ের স্বার্থে এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।”