যন্ত্রটি সূর্যের আলোকে ধারণ করে ও জ্বালানি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক বিক্রিয়াকে শক্তি দিতে তা তাপে পরিণত করে।
Published : 23 Mar 2025, 06:28 PM
সূর্যের আলোকে জেট বা বিমান জ্বালানিতে রূপান্তর করে এমন সৌরশক্তিচালিত যন্ত্র তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, বায়ুমণ্ডলে কার্বন না ছড়িয়েই জেট জ্বালানি তৈরিতে সহায়তা করবে এটি।
এ সৌরশক্তিচালিত যন্ত্রটি তৈরি করেছেন ‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ বা ক্যালটেকের বিজ্ঞানীরা।
জ্বালানির চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানির উৎস খুঁজে বের করা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে—বিশেষ করে বিমান চলাচলের মতো ক্ষেত্রে, যেখানে কার্বনভিত্তিক জ্বালানি এখনও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
এ সমস্যা সমাধানে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ‘লিকুইড সানলাইট অ্যালায়েন্স’ বা এলআইএসএ’র সঙ্গে কাজ করে একটি ছোট ডিভাইস বা যন্ত্র তৈরি করেছে ক্যালটেকের গবেষণা দলটি, যা সূর্যের আলো ব্যবহার করে জীবাশ্ম জ্বালানি বা বিদ্যুৎ নয় বরং বিমানের জ্বালানি তৈরির জন্য তাপ উৎপাদন করতে পারে।
‘ফটোথার্মোক্যাটালাইটিক রিঅ্যাক্টর’ নামে পরিচিত এ ডিভাইসটি সূর্যের আলোকে ধারণ করে ও জ্বালানি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক বিক্রিয়াকে শক্তি দিতে তা তাপে পরিণত করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ সিস্টেমটিকে বিশেষ করে তোলে এর সূর্যালোক শোষক স্তর। এটি ডিভাইসটির এমন একটি অংশ, যা তাপকে বেরিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যতটা সম্ভব সূর্যের আলো শোষণ করার জন্য ডিজাইন করেছেন গবেষকরা।
এজন্য সিলিকন, জার্মেনিয়াম, সোনা ও রুপার মতো উপাদান ব্যবহার করে একটি স্তরওয়ালা কাঠামো তৈরি করেছে গবেষণা দলটি, যেখানে প্রতিটি স্তর একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা রেখেছে এবং এগুলো একসঙ্গে ডিভাইসটিকে কেবল সূর্যের আলো ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়া চালানোর জন্য যথেষ্ট গরম হতে সহায়তা করে।
গবেষকরা বলছেন, স্তরওয়ালা কাঠামোটি ওপরে থাকা ‘কোয়ার্টজ উইন্ডো’ এর ভেতরে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে ও ডিভাইসটির একটি ভ্যাকুয়াম স্তর তাপকে আটকে রাখতে সহায়তা করে। স্বাভাবিক অবস্থায় শোষক স্তরের তাপমাত্রা ১৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সম্পূর্ণ সূর্যের আলোতে ২৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছতে পারে তাপমাত্রা, যা দরকারি বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া চালানোর জন্য যথেষ্ট।
গবেষণায় ‘ইথিলিন অলিগোমারাইজেশন’ বিক্রিয়ায় ডিভাইসটি ব্যবহার করেছে ক্যালটেক-এর গবেষণা দলটি। এটি এমন এক বিক্রিয়া, যা ছোট আকারের বিভিন্ন হাইড্রোকার্বন অণুকে দীর্ঘতর বা লম্বা অণুতে পরিণত করে।
‘অ্যালকিন’ নামে পরিচিত এসব দীর্ঘ চেইন বিমান জ্বালানিতে পাওয়া চেইনের মতোই। এখন পর্যন্ত এই ধরনের বিক্রিয়ায় সাধারণত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মতো তাপের প্রয়োজন হত। তবে এ নতুন ডিভাইসটি কেবল সৌর শক্তি ব্যবহার করেই এটি করতে পারে বলে দাবি নির্মাতাদের।
গবেষণায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি ইথিলিন ব্যবহার করা হলেও কার্বন ডাই অক্সাইড, পানি ও সূর্যের আলো থেকেও ইথিলিন তৈরি করা সম্ভব বলে ইঙ্গিত মিলেছে এতে।
যার মানে, ভবিষ্যতে প্রাথমিক উপাদান ও প্রয়োজনীয় শক্তি দুটোই নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসতে পারে, যা এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে সত্যিকার অর্থে পরিবেশবান্ধব করে তোলে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল সেল প্রেস-এর ‘ডিভাইস’-এ।