গেইমিং এবং ব্যায়াম কীভাবে বিশ্লেষণের কার্যকারিতা ও মানসিক সাস্থ্য উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে, এ গবেষণায় সেদিকটি খতিয়ে দেখেছেন গবেষণাটির প্রধান ও ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র নিউরোবিজ্ঞানী আড্রিয়ান ওয়েন।
Published : 01 Nov 2024, 04:05 PM
ভিডিও গেইম, শারীরিক ব্যায়াম ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের মধ্যে রোমাঞ্চকর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
এ গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, ভিডিও গেইম খেলা মানুষের বোঝার ক্ষমতা যেমন স্মৃতিশক্তি ও যুক্তিবিচার বাড়িয়ে দিতে পারে, যেখানে নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, প্রতিটি প্রভাব একসঙ্গে নয় বরং মানসিক স্বাস্থ্যের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে।
গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে ‘ম্যানচেস্টার সায়েন্স ফেস্টিভাল’ আয়োজনের কথা মাথায় রেখে, যার প্রিপ্রিন্ট সংস্করণ এখন সবার জন্য উন্মুক্ত।
এ গবেষণায় বিভিন্ন দেশ থেকে দুই হাজারের বেশি মানুষ সাইন আপ করেছেন। প্রথমে তারা নিজেদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে একটি ‘লাইফস্টাইল’ জরিপ পূরণ করেন। এর পর তারা বেশ কিছু অনলাইন ব্রেইন গেইম খেলেন, যেগুলো বিভিন্ন মানসিক দক্ষতা যেমন স্মৃতিশক্তি, মনযোগ ও মৌখিক সক্ষমতা পরিমাপ করার উদ্দেশ্যে নকশা করা।
এইসব গেইম সরবরাহ করেছে ‘ক্রেয়স’, যা মেধা পরীক্ষার সুপরিচিত প্ল্যাটফর্ম।
গেইমিং এবং ব্যায়াম কীভাবে বিশ্লেষণক্ষমতা ও মানসিক সাস্থ্য উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে, এ গবেষণায় সেদিকটি খতিয়ে দেখেছেন গবেষণাটির প্রধান ও ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র নিউরোবিজ্ঞানী আড্রিয়ান ওয়েন।
প্রাথমিকভাবে এ গবেষণার প্রায় এক হাজার অংশগ্রহণকারী সকল কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন।
এর ফলাফলে দেখা গেছে, যারা প্রতি সপ্তাহে পাঁচ ঘণ্টা বা এর চেয়ে বেশি সময় ভিডিও গেইম খেলেছেন, তাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতায় উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। এর মানে সমস্যার সমাধান, স্মৃতিশক্তি ও যুক্তিবিচারের মতো কাজে তাদের মস্তিষ্ক আগের চেয়েও দক্ষ উপায়ে কাজ করেছে।
এদিকে, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার মতো মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে গেইমিংও কাজে আসেনি। অন্যদিকে, যেসব অংশগ্রহণকারী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ডব্লিউএইচও’র নির্দেশিকা অনুসরণ করে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দেড়শ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করেছেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে উন্নতি দেখা গেছে।
অংশগ্রহণকারীদের ১২ শতাংশই দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে বিষণ্ণতার কোনো লক্ষণ নেই। আর তাদের নয় শতাংশের মধ্যে উদ্বেগের লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে, তাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতায় তেমন উন্নতিও লক্ষ্য করা যায়নি।
যারা এরইমধ্যে উৎকণ্ঠা অথবা বিষণ্ণতায় ভুগছেন, এই গবেষণার ফলাফল শুধু তাদের ওপরই প্রভাব ফেলেনি, বরং যাদের শুরুতে এমন কোনো লক্ষণ ছিল না বা একেবারেই সামান্য ছিল, তাদের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এতে দেখা যায়, নিয়মিত ব্যায়াম ভালো মানসিক স্বাস্থ্য রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
মস্তিষ্ক ও মানবদেহ কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত, তা মানুষের পক্ষে পুরোপুরি বুঝে ওঠা সম্ভব না হলেও এ গবেষণার ফলাফল রোমাঞ্চকর এক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
উদাহরণ হিসেবে, আমরা নিজেদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি, ক্ষুধা মানুষের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বা মানসিক চাপ থেকে শারীরিক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। তবে, এইসব প্রভাব কীভাবে কাজ করে, তা বোঝা এখনও বড় বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ।