ছোট আকারের ব্ল্যাক হোলের বিপরীতে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল একেবারে ভিন্ন। ফলে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল সরাসরি কোনো তারা থেকে জন্মাতে পারে না। কারণ, কোনও তারাই এদের তৈরি করার জন্য যথেষ্ট বড় আকারের নয়।
Published : 21 Jun 2024, 12:17 PM
সম্প্রতি এক গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্যের সন্ধান পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, যেখানে উঠে এসেছে, একাধিক ব্ল্যাক হোলের মধ্যে সংঘর্ষ থেকে তৈরি নতুন ব্ল্যাক হোল এদের ‘প্যারেন্ট’ ব্ল্যাক হোল বা পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ব্ল্যাক হোল কীভাবে বিকশিত হয় সে সম্পর্কে আরও বুঝতে এ যুগান্তকারী উদঘাটনটি সহায়তা করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোপার্টিকেল ফিজিক্স’-এ, যার মূল লেখক ‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডা’র পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দুই অধ্যাপক ইমরে বার্তোস ও অস্কার বারেরা।
মিল্কিওয়েসহ বেশিরভাগ ছায়াপথের কেন্দ্রে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে। এইসব ব্ল্যাক হোলের ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে মিলিয়ন, এমনকি বিলিয়ন গুণও বড় হয়ে থাকে।
ছোট আকারের ব্ল্যাক হোলের বিপরীতে এসব সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল একেবারে ভিন্ন। ফলে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল সরাসরি একটি তারা থেকে জন্মাতে পারে না। কারণ, কোনও তারাই এদের তৈরি করার জন্য যথেষ্ট বড় আকারের নয়।
এর পরিবর্তে এসব ব্ল্যাক হোল গ্যাস ও ধূলিকণা, এমনকি নিজের আশপাশের বিভিন্ন তারাকে গ্রাস করার মাধ্যমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ব্ল্যাক হোলের ভর দ্রুত বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হতে পারে— অন্যান্য ব্ল্যাক হোলের সঙ্গে প্রতিবার মার্জ (একত্রীকরণ) করার মাধ্যমে বড় এবং আরও বড় আকারের ব্ল্যাক হোলে পরিণত হওয়া।
বার্তোস ও ব্যারেরার গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, এই একীভূতকরণের ফলে তৈরি বিভিন্ন ব্ল্যাক হোল নিজেদের ঘূর্ণন ও ভরের তথ্যের মাধ্যমে এদের পূর্বসূরীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেয়।
“আমরা দেখতে পাই, অন্যান্য ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষের ফলে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন ব্ল্যাক হোল এদের পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক তথ্য বহন করে,” বলেছেন বার্তোস।
“আমাদের নতুন গবেষণায় এইসব ব্ল্যাক হোলের পূর্বপুরুষদের পুনরায় ঘূর্ণনের গঠনের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয় আগের বিভিন্ন গবেষণার উপর ভিত্তি করে, যেখানে সাধারণের নজর ছিল।
এসব ব্ল্যাক হোলকে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যর মাধ্যমে চিহ্নিত করা যায়। যেমন– ভর, স্পিন (বা কৌণিক ভরবেগ) ও বৈদ্যুতিক চার্জ।
তাত্ত্বিক পদার্থবিদ জন হুইলার বলেছেন, “ব্ল্যাক হোলের অতি সুক্ষ্ম কোনও কিছু নেই” অর্থাৎ এদের আলাদা করার বৈশিষ্ট্যের অভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও, বার্তোস ব্যাখ্যা করেছেন, এর উৎস সম্পর্কে জানার জন্য ব্ল্যাক হোলের স্পিন বা ঘূর্ণনের তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেমন– যেসব ব্ল্যাক হোল নিজের আশেপাশের গ্যাস শুষে নেয় বা আগের ব্ল্যাক হোলের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটিয়ে থাকে সেসব ব্ল্যাক হোলের উচ্চ ঘূর্ণন থাকে। এর বিপরীতে, তারা থেকে গঠিত ব্ল্যাক হোলের তুলনামূলক কম ঘূর্ণন থাকে।
এ গবেষণা করার জন্য গবেষক বার্তোস ও ব্যারেরা ‘বেইসিয়ান ইনফারেন্স’ নামের এক গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এ কৌশলটি ব্ল্যাক হোল নিয়ে এরইমধ্যে জানা বৈশিষ্ট্য অনুমান মিলিয়ে এদের পূর্বপুরুষদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বোঝার চেষ্টা করে। এ গবেষণাটি এখন বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে কারণ বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ ও একত্রীকরণ পরীক্ষা করতে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ব্যবহার করেছেন, যেটি স্পেসটাইমে অতিক্ষুদ্র তরঙ্গের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে ইঙ্গিত মিলছে, ব্ল্যাক হোলের ‘অ্যাসেম্বলি লাইন বা সমাবেশ রেখা’ যেখানে একাধিক ব্ল্যাক হোল একের পর এক মিশে যায় এমন ঘটনা মহাবিশ্বে সাধারণ বৈশিষ্ট্য হতে পারে।