প্রায় এক কোটি ১০ লাখ বছর আগে যখন একটি বিশাল উল্কা গ্রহটিকে আঘাত করেছিল তখন এগুলো মঙ্গল গ্রহ থেকে নিক্ষিপ্ত হয়। পাশাপাশি একটি বড় খণ্ড ভেঙে টুকরা টুকরা হয় ও বিভিন্ন শিলা মহাকাশে ছিটকে যায়।
Published : 02 Jun 2024, 02:22 PM
মঙ্গলে একাধিক রোভার পাঠিয়েছে নাসা। তবে, চাঁদের পাথর যেমন পৃথিবীতে আনা সম্ভব হয়েছে, মঙ্গলের বেলায় তেমনটা ঘটেনি। মঙ্গল থেকে কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে আনা সম্ভব হয়নি।
অথচ বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা মঙ্গল থেকে নিক্ষিপ্ত উল্কাপিণ্ড বিশ্লেষণ করে ফেলেছেন।
কীভাবে?
গবেষণা অনুসারে, এইসব তথ্য মিলেছে মঙ্গলের এমন এক উল্কাপিণ্ড থেকে, যা লাল রঙের গ্রহটিতে তৈরি হয়েছিল একশ ৩০ কোটি বছর আগে। পরবর্তীতে, সে উল্কাপিণ্ড সাড়ে ২২ কোটি কিলোমিটারের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে এসে আছড়ে পড়েছে। আর এতোদিন ধরে পৃথিবীর বুকে থাকা ওই উল্কাপিণ্ডই বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা
তারা বলেছেন, মঙ্গল গ্রহের ভূত্বকের ভেতরের স্তর বা ম্যান্টেলে একটি স্পষ্ট কাঠামো থাকার পাশাপাশি এর ভূত্বকে স্বতন্ত্র পানির উৎস রয়েছে।
তবে, উল্কাপিণ্ডটি থেকে কেবল মঙ্গলের ছোট একটি অংশ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। এর আগে মানুষ মঙ্গলের পৃষ্ঠে মহাকাশযান ও ল্যান্ডার পাঠালেও সেখান থেকে কিছু ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
উদাহরণ হিসেবে, মঙ্গল গ্রহ থেকে নির্গত সেসব উল্কাপিণ্ডের নমুনা বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক দশকগুলোয় বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। এগুলো পাওয়া গেছে অ্যান্টার্কটিকা ও আফ্রিকা মহাদেশে।
গ্রহটি কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে বিভিন্ন উল্কাপিণ্ড তা দেখাতে সাহায্য করে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। তবে গ্রহ থেকে আরও নমুনা তুলে আনার জন্য উল্কা সহায়ক হতে পারে; গ্রহের পৃষ্ঠ সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র ‘মার্স স্যাম্পল রিটার্ন’ মিশনে ব্যবহার করা হয়, যেখানে প্রথমবারের মতো লাল গ্রহের টুকরো তুলে আনা হবে।
“মঙ্গলগ্রহের উল্কাপিণ্ডই হল একমাত্র ভৌত উপাদান, যা আমরা মঙ্গল গ্রহ থেকে পেয়েছি,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো’র অধ্যাপক ও মঙ্গলের এইসব নমুনা বিশ্লেষণকারী গবেষক দলের নেতৃত্ব দেওয়া জেমস ডে।
“এইসব উল্কাপিণ্ড আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট ও সঠিক পরিমাপ করতে সাহায্য করার পাশাপাশি গ্রহটির মধ্যে ও এর পৃষ্ঠের কাছাকাছি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রক্রিয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে।”
এজন্য গবেষক দলটি মঙ্গলের একই আগ্নেয়গিরি থেকে নেওয়া উল্কাপিণ্ড ব্যবহার করেছেন। প্রায় এক কোটি ১০ লাখ বছর আগে যখন একটি বিশাল উল্কা গ্রহটিকে আঘাত করেছিল তখন এগুলো মঙ্গল গ্রহ থেকে নিক্ষিপ্ত হয়। পাশাপাশি একটি বড় খণ্ড ভেঙে টুকরা টুকরা হয় ও বিভিন্ন শিলা মহাকাশে ছিটকে যায়।
এগুলোর মধ্যে কিছু এসে পড়েছে পৃথিবীতে। প্রথমটি ১৮২৫ সালে ফ্রান্সে পাওয়া গিয়েছিল এবং এরপর থেকে আরও অনেক উল্কা পৃথিবীতে পাওয়া গেছে।
গবেষণা দলটি ‘নাখলাইট’ ও ‘চ্যাসসাইনাইট’ নামে পরিচিত দুটি ধরনের উল্কাপিণ্ডের দিকে নজর দেয়। গবেষকরা দেখতে পান, এগুলো আসলে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত ও মঙ্গলের উল্কার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
“পৃথিবীতে থাকা মঙ্গলগ্রহের উল্কাপিণ্ডের সংগ্রহের সঙ্গে যার সবকটিই আগ্নেয়গিরির উৎস মিলে যায়, ফলে আমরা মঙ্গল গ্রহের অভ্যন্তরীণ গঠন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি,” বলেছেন অধ্যাপক ডে।
“অবাক করার মতো বিষয় হল, মঙ্গল গ্রহের আগ্নেয়গিরির সঙ্গে এর অবিশ্বাস্য মিল যেমন রয়েছে, তেমনি পার্থক্যও রয়েছে।”
“একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের ওহু’র মতো জায়গায় সাম্প্রতিক আগ্নেয়গিরির মতোই নখলাইট ও চ্যাসসাইনাইট উল্কাপিণ্ড তৈরি হয়েছে। সেখানে নবগঠিত বিভিন্ন আগ্নেয়গিরি টেকটোনিক শক্তি তৈরির মাধ্যমে ম্যান্টেলের উপর চাপ দেয়, যা আরও আগ্নেয়গিরি তৈরি করে।”
“অন্যদিকে, মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন পানির আধার অত্যন্ত প্রাচীন, এমনকি লাল গ্রহটি তৈরি হওয়ার পরপরই এরা একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে গেছে। পৃথিবীতে টেকটোনিক প্লেটগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পানির আধার পুনরায় এক সঙ্গে করতে সাহায্য করেছে। এই অর্থে, মঙ্গল গ্রহটি বর্তমানে কেমন দেখায় তা থেকে প্রথম দিকের পৃথিবী কেমন ছিল তার একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র দেওয়া যেতে পারে।”
এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল ‘অ্যা হেটারোজেনাস ম্যান্টেল অ্যান্ড ক্রাস্টল স্ট্রাকচার ফর্মড ডিউরিং দ্য আর্লি ডিফারেনেশিয়েশন অফ মার্স’ শিরোনামে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে।