মাধ্যমিক পর্যায়ের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি শিক্ষক গত সপ্তাহে তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নারীবিদ্বেষী আচরণের অভিযোগ করেছেন।
Published : 20 Apr 2025, 03:52 PM
বিভিন্ন স্কুলে নারীবিদ্বেষ ও লিঙ্গবৈষম্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনফ্লুয়েন্সাররা রয়েছেন– এমনই বক্তব্য উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের শিক্ষক ইউনিয়নের নতুন এক জরিপে।
যুক্তরাজ্যের ৫ হাজার ৮০০ শিক্ষকের ওপর চালানো দেশটির অন্যতম বড় শিক্ষক ইউনিয়ন ‘এনএএসইউডব্লিউটি’-এর জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে প্রায় তিনজন মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার স্কুলের ছেলেদের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এ জরিপে ইনফ্লুয়েন্সার ও স্বঘোষিত নারী বিদ্বেষী অ্যান্ড্রু টেইটের নাম উল্লেখ করেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক।
যুক্তরাজ্যের ‘ডিপার্টমেন্ট ফর এডুকেশন’ বা ডিএফই বলেছে, “বিপজ্জনক ইনফ্লুয়েন্সাদের উত্থানের” কারণে শিশুদের ওপর যে “ক্ষতিকর প্রভাব” পড়েছে তা ঠেকাতে শিক্ষকদের সহায়তা করছে তারা।
এ সপ্তাহ শেষে যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির বার্ষিক সম্মেলনে এসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক করবেন ইউনিয়ন সদস্যরা।
একজন শিক্ষক বলেছেন, “স্কুলের ছেলেরা আমার সঙ্গে কথা না বলে একজন পুরুষ শিক্ষক সহকারীর সঙ্গে কথা বলছে। কারণ আমি একজন নারী বলে তারা আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না। ইনফ্লুয়েন্সার অ্যান্ড্রু টেইটকে অনুসরণ করছে তারা। আর এরা কেবল ১০ বছরের শিশু।”
আরেকজন শিক্ষক বলেছেন, “গত বছর মাধ্যমিকের এক ইংরেজি ক্লাসে একদল ছেলেকে নিরুৎসাহিত করার পরও তারা অ্যান্ড্রু টেইটকে নিয়ে রচনা লিখেছিল। তাদের লেখার মধ্যে ছিল, নারীরা একজন পুরুষের সম্পত্তি অ্যান্ড্রুর এমন দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছে তারা। তাদের লেখা এ রচনা নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকরা যোগাযোগ করলে হতবাক হয়ে যান তারা।”
২০২৩ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নারীদের নিয়ে তার বিতর্কিত মতামত তরুণদের ক্ষতি করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে টেইট দাবি করেন, তিনি “ভালোর জন্য শক্তি হিসেবে কাজ করছেন”।
এদিকে, এনএএসইউডব্লিউটি’র সাধারণ সম্পাদক প্যাট্রিক রোচ বলেছেন, “উগ্র ডানপন্থী ও চরমপন্থীদের বিপজ্জনক প্রভাব থেকে সব শিশু ও তরুণকে রক্ষা করতে স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “এক্ষেত্রে শিক্ষকদের কাঁধে দায়িত্ব একা ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”
তবে ছেলে ও তরুণদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করতে হয় সে সম্পর্কে পেশাদারদের প্রশিক্ষণ দেয় এমন একটি দলের প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, টেইটের মতো মানুষের প্রভাবের চেয়ে তরুণদের পর্ন দেখার বিষয়টি “অনেক বেশি প্রভাব ফেলে”।
২০১৯ সালে ‘মেন অ্যাট ওয়ার্ক’ চালু করা মাইকেল কনরয় বলেন, “পর্ন না থাকলে অ্যান্ড্রু টেইট পরিচিত নাম হতো না।”
“দুঃখজনকভাবে আমাদের ছেলেরা পর্নের মাধ্যমে যৌনতা সম্পর্কে শিখছে, যেটি সাধারণত তাদের কাছে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে ক্ষমতার পার্থক্যের প্রতিনিধিত্ব করছে।
“অ্যান্ড্রু টেইটের মতো মানুষদের কাজ দেখলেই তাদের মধ্যে সেই শব্দটা বেজে ওঠে। এই অর্থে, তারা ভাবে এটা এরইমধ্যেই তাদের শেখা হয়ে গেছে।”
কনরয় বলেন, “আট বা নয় বছরের বেশি বয়সী ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রায়ই এমনটা হয়ে থাকে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের কাছে ফোন রয়েছে ও পর্নোগ্রাফিতে প্রবেশ করতে পারে।”
তিনি বলেন, বিভিন্ন স্কুলে নারীবিদ্বেষ ও লিঙ্গবৈষম্যের মতো নানা বিষয় নতুন না হলেও অনলাইনে ক্ষতিকর কনটেন্টে প্রবেশের কারণে তারা আরও “অস্থির” হয়ে উঠছে।
এ মাসের শুরুর দিকে বিবিসি নিউজ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি শিক্ষক গত সপ্তাহে তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নারীবিদ্বেষী আচরণের অভিযোগ করেছেন।
জরিপে উত্তরদাতাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন, এই ধরনের আচরণ ঠেকাতে নিজেদের অসহায় বলে মনে করেন তারা।