এ তাপমাত্রায় বিভিন্ন ইলেকট্রন সাধারণত পরমাণুর সঙ্গে আবদ্ধ হওয়ার বদলে উত্তপ্ত এক আয়নিত প্লাজমায় অবাধে চলাচল করে, যাকে ইলেকট্রনের ‘নাচ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
Published : 12 Nov 2024, 04:44 PM
দুটি নিউট্রন তারা’র সংঘর্ষের পর এক বিস্ময়কর ঘটনা লক্ষ্য করেছেন জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীরা, যা ছিল এক ব্ল্যাক হোলের জন্মের বিস্ফোরক ঘটনা ও এর পরবর্তী সময়ে জ্বলজ্বলে ‘ইলেকট্রনের নাচের’ মতো দৃশ্য বলে দাবি তাদের।
‘নিলস বোর ইনস্টিটিউট’-এর গবেষকদের নেতৃত্বে এ আবিষ্কারটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এ। মহাজাগতিক বিভিন্ন ঘটনার চরম পরিস্থিতি সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে এই গবেষণা।
নিউট্রন তারা হচ্ছে বিশালাকার কোনো তারার অবশিষ্টাংশ, যা সৃষ্টি হয় ওই তারা ধ্বংসের মাধ্যমে। এসব তারার ভর সাধারণত ১০ থেকে ২৯ সৌর ভরের সমান হয়।
দুটি নিউট্রন তারা’র সংঘর্ষের ফলে ঘটে ‘কিলোনোভা’ নামের এক বিশাল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা। কিলোনোভা মূলত এক ধরনের আগুনের গোলক, যা কয়েক শত সূর্যের মতো উজ্জ্বলভাবে জ্বলজ্বল করে জ্বলে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ বিস্ফোরণের ফলে নিউট্রন তারা থেকে আসা পদার্থের তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমে তৈরি হয় ভারী উপাদান, যা থেকে বের হয় প্রচুর পরিমাণ শক্তি।
কিলোনোভা থেকে আসা এই আলো পরীক্ষা করে কণার তাপমাত্রা ও এর আচরণ পরিমাপ করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষণ করা গেছে নিউট্রন তারা সংঘর্ষের মাইক্রোস্কোপিক বা আণুবীক্ষণিক বৈশিষ্ট্য।
কিলোনোভা’র পুরো ছবি পেতে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র হাবল স্পেস টেলিস্কোপ’সহ ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টেলিস্কোপ, যার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা গেছে নিউট্রন তারা সংঘর্ষের ঘটনাটি।
পৃথিবী ঘোরার কারণে বিস্ফোরণের কেবল একটি সংক্ষিপ্ত অংশের ছবিই তুলতে পেরেছে এসব টেলিস্কোপ। তবে সব ছবির তথ্য একসঙ্গে করে ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করেছেন গবেষকরা।
“এই সম্মিলিত তথ্য আমাদের যে কোনও একক পর্যবেক্ষণের চেয়েও বেশি তথ্য দিতে পারে,” বলেছেন ‘নিলস বোর ইনস্টিটিউট’-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী ও এ গবেষণার প্রধান গবেষক অ্যালবার্ট স্নেপেন।
নিউট্রন তারা’র সংঘর্ষের পরে তাপমাত্রা বিস্ময়করভাবে বেশি থাকে, যা সূর্যের কেন্দ্রের চেয়ে প্রায় এক হাজার গুণ বেশি উত্তপ্ত। এমনকি বিগ ব্যাং এর কয়েক সেকেন্ড পরে মহাবিশ্বের তাপমাত্রার সমান এই তাপমাত্রা।
এই তাপমাত্রায় বিভিন্ন ইলেকট্রন সাধারণত পরমাণুর সঙ্গে আবদ্ধ হওয়ার বদলে উত্তপ্ত এক আয়নিত প্লাজমায় অবাধে চলাচল করে, যাকে ইলেকট্রনের ‘নাচ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিস্ফোরণটি ঠাণ্ডা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ইলেকট্রন ধীরে ধীরে পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরমাণু গঠন করে। বিষয়টি অনেকটা আদি মহাবিশ্বের মতো ঠাণ্ডা হয়ে প্রথম পরমাণু গঠনের মতোই।
এ বিস্ফোরণে ভারী উপাদান হিসেবে স্ট্রনশিয়াম ও ইট্রিয়ামের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, এসব ভারী উপাদানের কারণে নিউট্রন তারা’র মধ্যে এ ধরনের সংঘর্ষ ঘটেছে।
লোহার চেয়েও ভারী আরও অনেক উপাদানের উৎস ব্যাখ্যা করতে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করতে পারে এই নতুন আবিষ্কার। কারণ দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, এ ধরনের চরম মহাজাগতিক ঘটনাই সম্ভবত এমন ভারী বিভিন্ন উপাদানের উৎস।
বিস্ফোরণ থেকে পদার্থ দ্রুত সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশাল আগুনের গোলা পেড়িয়ে আসতে আলোর কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। বিস্ফোরণের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা আলো পর্যবেক্ষণ করে কিলোনোভা’র বিভিন্ন অঞ্চলের ঠাণ্ডার মাত্রা ও পারমাণবিক গঠনের বিভিন্ন পর্যায় লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এ অনন্য দৃশ্যটি নিউট্রন তারা বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে এর ‘আগে’ ও ‘পরে’ পরমাণুর গঠন প্রক্রিয়াটি দেখতে সাহায্য করেছে বিজ্ঞানীদের।
বিভিন্ন ভারী উপাদান সৃষ্টির এক বিরল ঝলক দিয়েছে নতুন এই আবিষ্কার। পাশাপাশি মহাবিশ্বের বিভিন্ন উপাদান কীভাবে এসেছে সে প্রশ্নের উত্তরও দিতে সহায়তা করেছে এটি।