“মিয়ানমারের ভেতরে মর্টার শেল নিক্ষেপ হলে সীমান্তের এ পারের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। স্থানীয়রা সবসময় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।”
Published : 31 Jan 2024, 08:38 PM
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের গোলাগুলির প্রচণ্ড শব্দ থেমে থেমে শোনা গেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, “বুধবার ভোর ৩টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল ও গুলির বিকট শব্দ পাওয়া যায়। অবশ্য মঙ্গলবার কোনো ধরনের শব্দ শোনা যায়নি।”
আরাকান আর্মি (এএ) মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। শনিবার সংঘর্ষের খবরের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উলুবনিয়া এলাকার নুরুল ইসলামের বাড়িতে একটি গুলি এসে পড়লে আতঙ্ক তৈরি হয়।
হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোছেন বলেন, “মিয়ানমারের ভেতরে মর্টার শেল নিক্ষেপ হলে সীমান্তের এপারের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। মর্টার শেল, গুলি এদিকে এসে পড়ে কি-না স্থানীয়রা সবসময় সেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।”
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সীমান্তে বসবাসকারীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আবারও মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্তে দিয়ে মর্টার শেল ও গুলির শব্দ ভেসে আসছে। যদিও এটি তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা।
“তবে এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে যেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেজন্য সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।”
গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দারাও। মিয়ানমার অংশে মঙ্গলবার রাতের বেলায়ও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘ছুটি’ দিয়ে দেওয়া হলেও তবে মঙ্গলবার ফের খুলেছে।
ওপারে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।
বাহিনীগুলো হল- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ।
আরও পড়ুন:
মিয়ানমারে যুদ্ধ: রাখাইনের যে খবর পাচ্ছেন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারের গুলি এসে ভেদ করল টেকনাফের বাড়ির দরজা
তুমব্রু সীমান্তে রাতেও গোলাগুলি, পরিদর্শনে ডিসি-এসপি
মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে ফের গোলাগুলি, এপারে আতঙ্ক
সীমান্তে ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ থাকার নির্দেশ বিজিবি মহাপরিচালকের
বিদ্রোহী জোটের হামলায় বহু এলাকা হাতছাড়া, কোণঠাসা মিয়ানমার জান্তা
জান্তা আমলে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে: ভলকার তুর্ক
জরুরি অবস্থার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা মিয়ানমার জান্তা সরকারের
ভারতে পালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনারা, উদ্বিগ্ন মিজোরাম
প্রত্যাবাসন: রাখাইন ঘুরে ‘উন্নতি’ দেখেছে আরআরআরসি, রোহিঙ্গারা হতাশ
মিয়ানমারে পেরে উঠছে না জান্তা বাহিনী, সমর্থন হারাচ্ছেন মিন অং হ্লাইং
বিদ্রোহী জোটের হামলায় বহু এলাকা হাতছাড়া, কোণঠাসা মিয়ানমার জান্তা
বিদ্রোহী জোটের হামলায় বহু এলাকা হাতছাড়া, কোণঠাসা মিয়ানমার জান্তা