নৌকা ছাড়া ভোটের ‘কৌশল’ কেমন ফল দিল

কুমিল্লায় ভোটের হার গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রায় কাছাকাছি, তবে ময়মনসিংহে ভোট পড়েছে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে ১২ শতাংশ পয়েন্টেরও বেশি।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2024, 07:32 PM
Updated : 9 March 2024, 07:32 PM

আওয়ামী লীগ নানা সমীকরণে দেশের দুই মহানগরে কাউকে নৌকা না দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর একটিতে ভোট পড়ল প্রায় ৩৯ শতাংশ, আরেকটিতে ৫৬ শতাংশের বেশি। 

এর মধ্যে কুমিল্লায় ভোটের হার গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রায় কাছাকাছি, তবে ময়মনসিংহে ভোট পড়েছে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে ১২ শতাংশ পয়েন্টেরও বেশি। 

স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক সংযোজনকারী ক্ষমতাসীন দলের নতুন এ সিদ্ধান্তের প্রভাব তাহলে কী? 

সেই প্রশ্নে এখনই সিদ্ধান্তে আসতে চান না নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। একজন বলেছেন, আওয়ামী লীগ ‘পাইলটিং’ করেছে। 

ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা বলেছেন, ভোটের যে হার হয়েছে, তাতে তারা খুশি। অন্যদিকে বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, ভোট তাদের ভাবনাতে নেই। আওয়ামী লীগ প্রতীক দিক বা না দিক, তাতে কিছুই যায় আসে না। 

দুই মহানগরীর মধ্যে কুমিল্লায় প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস বেশি হলেও সেখানে কাউন্সিলর পদে লড়াই হয়নি, স্থানীয় নির্বাচনে ভোট আনার ক্ষেত্রে যা গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে ময়মনসিংহে মেয়রের পাশাপাশি ভোট হয়েছে কাউন্সিলর পদেও। তাই মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস ছাড়াই সেখানে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশি। 

আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা না করলেও কুমিল্লায় মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ-সবাই একজোট হয়ে তাহসীন বাহার সূচনার পক্ষে কাজ করেছেন। 

তিনি সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে, এ পরিচয়ই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদেরকে তার পেছনে একাট্টা করেছে। গত দেড় দশকের বাস্তবতায় এ মহানগরে আওয়ামী লীগ আর বাহার যেন সমান্তরাল হয়ে গেছেন।

তবে ময়মনসিংহে চিত্র এমন নয়। এখানে পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে দলীয় প্রতীকে লড়েছেন কেবল জাতীয় পার্টির প্রার্থী। তিনি ভোট পেয়েছেন টেনেটুনে এক হাজার। বাকি চারজনই আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট। 

এই নগরে জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা ইকরামুল হক টিটু দলের মহানগর শাখার সভাপতি। তবে দলের কোনো পর্যায় থেকে তার প্রতি আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষিত হয়নি। নেতাকর্মীরা ক্ষমতাসীন দল থেকে দাঁড়ানো চার প্রার্থীর মধ্যে যে যার মত পাশে ছিলেন। 

শনিবার ভোট অবশ্য কেবল দুই মহানগরেই ছিল না। পৌরসভা, জেলা পরিষদ ইউনিয়ন পরিষদে কোথাও সাধারণ নির্বাচন, কোথাও উপনির্বাচন ভোট হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৩৩টি পদে রায় দিয়েছেন ভোটাররা। এর কোনোটিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি, কাউকে সমর্থনও জানায়নি। 

সেসব নির্বাচন জাতীয় পর্যায়ে আলোচনায় আসেনি, ফলাফল থেকে শুরু করে প্রচারের কোনো পর্যায়ে সংবাদ হয়নি বললেই চলে। তবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি ইউনিয়নের সদস্য পদে উপনির্বাচনে ফল ঘোষণার পর দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজনের প্রাণহানি হয়েছে। 

ভোটের দিন কুমিল্লায় ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী’ সূচনা ছাড়া বাকি তিনজনের সবাই নানা অভিযোগ এনেছেন। 

তাদের দাবি, তাদের সমর্থকদেরকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রে আসতে নিষেধ করা হয়েছে; কেন্দ্রের বাইরে সূচনা সমর্থকদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে; এজেন্ট বের করে দেওয়ার কথাও উঠেছে। তবে সেসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন সূচনা। 

আওয়ামী লীগের ‘নতুন কৌশলের’ প্রথম প্রয়োগ 

বিএনপির বর্জনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আসনে আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট জমিয়ে ফেলার পর ক্ষমতাসীন দল সামনের বছরগুলোতে ভোটারদের কেন্দ্রে টানতে চেষ্টা করছে। 

এর অংশ হিসেবে গত ২২ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দল সিদ্ধান্ত জানায়, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা প্রার্থী ঘোষণা করবে না, কাউকে সমর্থনও দেবে না।

২০১৪ সাল পর্যন্ত স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ছিল না। তবে ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই নির্বাচনগুলোও দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে এর পক্ষে-বিপক্ষে দুই দিকেই যুক্তি পাল্টা যুক্তি চলতে থাকে। 

এরপর গত ৯ বছরে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর ভোটে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হাঙ্গামা, মারামারি, প্রাণহানি ঘটেছে। তেমনি বিরোধী দলের পক্ষ থেকে তাদের প্রার্থীদের বাধা দান, ভোট কারচুপির অভিযোগ করা হয়।

বিএনপির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ছিল তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া ভোট হলে তা ‘সুষ্ঠু হবে না’- এমন যুক্তি দেখিয়ে। তবে এবার তারা ভোট বর্জন করেছে ‘দলীয় সরকারের অধীনে ভোট সুষ্ঠু হয় না’ অভিযোগ তুলে। 

বিএনপির এই সিদ্ধান্তের পাল্টা চালে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পথ উন্মুক্ত করে দেয়, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয় পেয়ে চমক দেখায়, যাদের মধ্যে দুই একজন ছাড়া সবাই ক্ষমতাসীন দলের। 

সেই পথ ধরে আওয়ামী লীগ পরে স্থানীয় নির্বাচনে কাউকে নৌকা না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটির ধারণা, নৌকা প্রতীক না থাকলে বিএনপি অনুসারীরা ভোটের লড়াইয়ে নামবেন। তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, কেন্দ্রে ভোটার আসবে বেশি। 

আবার এতে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের বিশৃঙ্খলা বা বিদ্রোহও থাকবে না- তৃণমূলের নেতারা ভোটারদের কাছাকাছি যাবেন আরো বেশি। 

দুই শতাধিক পদে স্থানীয় এই নির্বাচন সেভাবে আলোচনায় না থাকলেও আওয়ামী লীগের ‘নতুন কৌশলের’ প্রথম প্রয়োগ হিসেবে এর রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল। 

ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান মনে করেন, তাদের কৌশল ‘সফল’ হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ভোটারের উপস্থিতি যা হয়েছে তা সন্তোষজনক। আমি মনে করি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশন আবারও একটা সুন্দর নির্বাচন দিয়ে তাদের স্বচ্ছতা প্রমাণ করেছে।”

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অবশ্য বলেছেন, ‘কোনো কৌশলে’ তাদের দলের সিদ্ধান্ত পাল্টাবে না।   

তিনি বলেন, “আমরা তো এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তাহলে আমরা কেন যাব? সেখানে প্রতীক থাকা না থাকা আসলে কোনো গুরুত্ব বহন করে না।” 

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম মনে করেন, নতুন কৌশলেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শনের বাইরের মানুষ কেন্দ্রে এসেছেন কম। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগের সিটি নির্বাচনগুলো যদি আমরা দেখি, সেগুলো অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ ছিল, সব দলের অংশগ্রহণ ছিল। সেখানে টার্নআউট আরও বেশি ছিল। ৬০ শতাংশের বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ছিল। সেই তুলনায় এটা কম। 

“এখানে সবাই মোটামুটি এক দলের মানুষ। সে কারণে সাধারণ ভোটার তেমন আগ্রহ বোধ করেনি। তাই অর্ধেক ভোটার কেন্দ্রে যায়নি।” 

দুই সিটি ও বরগুনা পৌরসভা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ- জানিপপ এর একদল কর্মী।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অনেকটা নির্দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের পথে এটা একটা ‘পাইলটিং’ এর মত। ভোটের প্রতি জন-আস্থা বেড়েছে কিনা তা মূল্যায়ন করা সময় এটা নয়। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অনেকগুলো উপাদান কাজ করে। 

“তবে প্রতীক উন্মুক্ত রাখার পরীক্ষায় দলের কৌশল সফল বলা যায়। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে এটা শুধু হার-জিতের নির্বাচন। সহিংসতার আশঙ্কা থাকলেও তা না ঘটায় সন্তোষজনক নির্বাচনই হয়েছে।” 

সূচনার সঙ্গেই ছিল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ 

২০২২ সালে জয়ী আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যুতে শূন্য ঘোষিত মেয়র পদে উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মহানগর আওয়ামী লীগের এক জরুরি বর্ধিত সভা হয়। সেখানে মূল দল ছাড়াও ছিল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। 

সেখানেই ‘সবার সিদ্ধান্তে’ তাহসীন বাহার সূচনাকে মহানগর আওয়ামী লীগের ‘একক প্রার্থী’ ঘোষণা দেন সংসদ সদস্য বাহার, যিনি সেই সভার সভাপতিত্ব করেন। 

বাহার নিজে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর তার মেয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক।  

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লা শাখার সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সূচনার এই বিজয়ের নেপথ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের দৃঢ় নেতৃত্ব। মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে দলের প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা এমপি সাহেবের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং দীর্ঘদিনের ভোটের অভিজ্ঞতাই এই বিজয়ের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে।”

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন ছিলেন সূচনার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক। 

ফলাফল ঘোষণার পর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সূচনা এই বিজয় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বিজয়। এই বিজয় আমাদের প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিজয়। এই বিজয়ের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কতটা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের সকল নেতাকর্মীরা একযোগে কাজ করায় মহানগর আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী সূচনা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।” 

অন্যদিকে সূচনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কু বিএনপির বলয়ের বাইরে তৃতীয়বার নির্বাচন করলেন। ২০১২ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে তিনি ভোটে অংশ নেন নাগরিক কমিটির ব্যানারে। ২০১৭ সালে লড়েন ধানের শীষ নিয়ে। দুবারই পান জয়। 

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়- বিএনপির এই সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ২০২২ সালের জুনের ভোটে দাঁড়ানোয় বিএনপি তাকে বহিষ্কার করলেও সে সময় এই মহানগরে দলে তার প্রভাব ছিল ব্যাপক। ৫০ হাজারের কাছাকাছি ভোট পেয়ে তিনি হেরে যান ৩৪৩ ব্যবধানে। 

সেই নির্বাচনে সাক্কু বিরোধী বিএনপির সমর্থন পেয়ে যান স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজামউদ্দিন কায়সার, যিনি ২৯ হাজার ৯৯ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়ে সাক্কুর পরাজয়ের কারণ হয়েছিলেন।

সেই ভোটে অংশ নেওয়ায় দুই বছর ধরেই তারা বিএনপির বাইরে। এবারের নির্বাচনে দুই নেতার অনুসারী বিএনপির কর্মী সমর্থকদের প্রচারে দেখা গেলেও ভোটকেন্দ্রে তারা সেভাবে উপস্থিত হননি।  

ময়মনসিংহ নগর আওয়ামী লীগ ছিল না কারো পাশেই

কুমিল্লার চেয়ে ময়মনসিংহের চিত্র আলাদা।

এখানে জয় পাওয়া মো. ইকরামুল হক টিটু মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কুমিল্লার মত সভা করে তাকে সমর্থন দেননি।

আওয়ামী লীগে টিটোর বিরোধী পক্ষ সম্মিলিতভাবে একজনকে মেয়র পদে ভোটে দাঁড় করাতে চেয়েছিল। তারা মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত-উর রহমান শান্তর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দ্বিধা-বিভক্ত জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সেটি হয়নি। সংসদ সদস্য ওই পথে যাননি।

টিটুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম এবং শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাদেক খান মিল্কী টজু স্থানীয় সংসদ সদস্যর সমর্থন পাবেন বলে আশা করেছিলেন। কারণ টিটুর সঙ্গে শান্তর রাজনৈতিক দ্বৈরথ পুরনো। তবে সেটিও হয়নি।

দুই সিটির ভোটের পূর্বাপর 

শনিবার ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটিসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক পদে ভোট হয়েছে। এরমধ্যে সবার নজর ছিল দুই সিটি ভোটে। 

ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে পদে ভোট পড়েছে ৫৬.৩০ শতাংশ। মেয়র হয়েছেন দেয়াল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো. ইকরামুল হক টিটু। 

কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে মেয়র পদে ভোটের হার ৩৮.৮২ শতাংশ। মেয়র হচ্ছেন বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসীন বাহার সূচনা। 

কুমিল্লা সিটিতে ২০১২ সালের নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৬৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ৫৯ শতাংশ ভোট পড়ে। সেই হিসাবে সিটি নির্বাচনে এবারই সবচেয়ে কম ভোট পড়ল। 

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনে ভোট পড়ে ৩৯ শতাংশ। 

২০১৯ সালে ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী কেবল একজন হওয়ায় ভোট করতে হয়নি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ সদর আসনে ভোটের হার ছিল ৪৪ শতাংশ। 

৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে গড়ে ভোট পড়ে প্রায় ৪২ শতাংশ।

সিইসি সন্তুষ্ট 

বিএনপি ও সমমনাদের বর্জন, হরতাল-অবরোধ, বহির্বিশ্বের নানা প্রতিক্রিয়ার মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের জন্য ছিল চাপের। সেই আয়োজনে মোটামুটি উৎরে যাওয়ার দুই মাস পর রাজনৈতিক বিভেদহীন এই ভোট নিয়ে কমিশন কখনো চাপে ছিল, এই নমুনা দেখা যায়নি একটিবারের জন্যও। 

ভোটের প্রচার চলাচালে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের যে বিষয়গুলো বারবার বাংলাদেশের নির্বাচনে দেখা যায়, তা অনেকটাই অনুপস্থিত ছিল কুমিল্লা-ময়মনসিংহে।

ভোট শেষে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজেই নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে নিয়ে এসে প্রতিক্রিয়া দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। 

তিনি বলেন, “দুচারটি অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোথাও প্রভাবে খাটানো হয়েছে, হস্তক্ষেপ করা হয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।” 

শনিবার যেসব এলাকায় ভোট হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ১৮টি অপ্রীতিকর ঘটনায় ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দৃষ্টিতে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোনো অভিযোগ আমরা এখনো পাইনি যে প্রভাবে খাটানো হয়েছে, হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। কুমিল্লায় কেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলি হয়েছে, ছুরিকাঘাতও হয়েছে একটি কেন্দ্রে। তবে কেন্দ্রের ভেতরে ভোট প্রভাবিত হয়নি।” 

পুরনো খবর

Also Read: উপজেলা, সিটি, পৌর ভোটে নৌকা দেবে না আওয়ামী লীগ

Also Read: সিটি নির্বাচনে ইসির অস্বস্তিমাখা স্বস্তি

Also Read: এবার আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’বিহীন ভোট-কৌশলের পরীক্ষা

Also Read: দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে: সিইসি