“এটা কেমন কথা? দলের সঙ্গে সংসারের কী সম্পর্ক?”
Published : 15 Dec 2024, 09:52 PM
স্ত্রী আওয়ামী লীগের কর্মী। ফেইসবুকে ‘জয় বাংলা’ লেখায় তাকে তালাক দেওয়ার জন্য স্বামীকে চাপ দেওয়ার এবং মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর চন্দ্রিমা থানার হাজরাপুকুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে ভুক্তভোগী দম্পতি মিজানুর রহমান ও বীনা মজুমদার জানিয়েছেন।
নগরীর চন্দ্রিমা থানার হাজরাপুকুর এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান পেশায় ব্যবসায়ী। আর বীনা নগরীর শাহমখদুম থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ২০১৩ ও ২০২৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছিলেন।
মিজানুর রহমান জানান, শনিবার তার ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে বাসায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত কাজে বাইরে বের হলে শাহমখদুম থানা যুবদলের সদস্য মো. সনিসহ কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে মারধর করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ যায় সেখানে।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, “আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমাকে দেখে ওরা বলছে, স্ত্রীর কামাই খায়। আমি এর প্রতিবাদ করে বলি, আমি সারা দিন কাজ করি। স্ত্রীর কামাই কেন খাব? তখন আমাকে বলে তুই যদি তোর বউকে না ছেড়ে দিস, এখান থেকে না পাঠাস, তাহলে খবর আছে। ছাড়ব কেন? প্রশ্ন করলে তারা আমাকে গালি দেয় এবং মারধর শুরু করে।”
তাদের মারধরে হাত, মাথা, কান ও কপালে আঘাত পেয়েছেন বলে জানান মিজানুর।
মিজানুরের স্ত্রী বীনা মজুমদার বলেন, “বিজয় দিবস উপলক্ষে ফেইসবুকে একটি পোস্টে জয় বাংলা লিখি। এ জন্য সনি আমাকে ফোন করে বলে এসব লেখা যাবে না। লিখলে খুব খারাপ হবে। তখন আমি তাকে বলি, দল যখন ক্ষমতায় ছিল, আমি তো কারও সঙ্গে খারাপ কিছু করিনি। এরপরেও যদি আমার খারাপ হয়, তাহলে হবে। তারপর ফোন রেখে দেই।”
তিনি বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় আমার স্বামী সেলুনে যাচ্ছিল। ওরা ধরে বলে তোর বউ আওয়ামী লীগ করে, তুই তোর বউয়ের কামাই খাস। তুই তোর বউকে ছেড়ে দিবি। তখন তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। চিৎকার শুনে আমি গেলাম।
“সনি ছেলেটা কয়দিন আগেও আমাকে আম্মা বলে ডাকত। তাকে জিগেস কী ব্যাপার সনি? এসব কী?। সে উত্তরে বলে কোনো আওয়ামী লীগের গান চলবে না। তখন আমি বলি যে, আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগ করব, মরে গেলেও করব। দল ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক। এরপরই আমার স্বামীর গায়ে হাত তোলে।”
বীনা বলেন, “আমার দোষ একটাই, আমি আওয়ামী লীগ করি। এ জন্য আমার স্বামীকে চাপ দিচ্ছে যেন আমাকে ছেড়ে দেয়। এটা কেমন কথা? দলের সঙ্গে সংসারের কী সম্পর্ক? যারা অন্যায় করেছে, তারা শাস্তি পাবে।
“যাদের জন্য আওয়ামী লীগের এই অধঃপতন, তাদের বিচার হোক। যারা অন্যায় করেনি, তাদের কেনো হেনস্তা? এটা কেমন ন্যায়বিচার? আমরা এখন আতঙ্কিত। আমরা নিরাপত্তা চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদল নেতা মো. সনি বলেন, “আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে বীনা মজুমদার বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন। এ জন্য তার স্বামীকে বলছিলাম। তখনই কয়েকটা ছেলে দুই একটা কিল-ঘুষি মেরে দিয়েছে। পরে এটা আমরা মীমাংসা করে ফেলেছি।”
তবে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন সনি।
এ বিষয়ে নগরীর চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিয়ার রহমান বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় ঝামেলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজনই এটা মীমাংসা করে নিয়েছেন। তাই পুলিশ ফিরে এসেছে। এ ব্যাপারে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে দেখা হবে।”