বগুড়ায় ডাকঘরে প্রহরী খুন লুটে বাধা দেওয়ায়: পুলিশ

পরিকল্পনা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি কিনে ঈদের বন্ধের মধ্যে ২০ এপ্রিল শফিকুল ডাকঘরে গিয়েছিলেন বলে জানান পুলিশ সুপার।

বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2023, 03:40 PM
Updated : 4 May 2023, 03:40 PM

বগুড়ার প্রধান ডাকঘরের ভল্ট লুটে বাধা দেওয়ায় নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক প্রশান্তকে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুধবার নওগাঁর সাপাহারের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।  

বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, শফিকুলের কাছ থেকে ডাকঘর লুট ও প্রশান্তকে হত্যার সময় পরিহিত পোশাকসহ বিভিন্ন আলামাত জব্দ করা হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার সঙ্গে ‘শফিকুলের জড়িত থাকার’ বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরায় পাওয়া ছবি ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে শফিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নয়টি মামলা রয়েছে।  

গ্রেপ্তার শফিকুলকে পেশাদার অপরাধী বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। 

পুলিশ সুপার জানান, ২০১৯ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশের বনানী থানা এলাকায় জনতা ব্যাংকের ভল্ট কেটে টাকা লুট করার সময় ধরা পড়েছিলেন শফিকুল। বিভিন্ন স্থানে চুকি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের কথা তিনি স্বীকার করেছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ১২ মার্চ মোটরসাইকেলযোগে নওগাঁ থেকে বগুড়ায় আসেন শফিকুল ইসলাম। বগুড়া জেলা ডাকঘরে মোটরসাইকেল পার্ক করতে গিয়ে তিনি দেখতে পান যে লোকজন টাকা তুলে বের হচ্ছে। এটি দেখে পোস্ট অফিসের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের ভাবনা আসে তার মাথায়। এরপর সে অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজান তিনি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি কিনে ঈদের বন্ধের মধ্যে ২০ এপ্রিল শফিকুল ডাকঘরে গিয়েছিলেন বলে জানান পুলিশ সুপার। 

এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, সেদিন রাতভর অপেক্ষার পর সকালে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। ভল্ট রুমে প্রবেশ করে সিসি টিভি ক্যামেরার লাইন কেটে দেন এবং ভল্টও কাটেন। কিন্তু টাকার বাক্স দূরে থাকায় টাকা নিতে পারেননি। পরে আবার নওগাঁ ফিরে যান তিনি।” 

“২৪ এপ্রিল রাতে আবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডাকঘরে যান তিনি। রাত ২টার দিকে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। বারান্দার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন। তবে কর্তব্যরত প্রশান্ত জেগে থাকায় কার্টন ও বস্তার আড়ালে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করতে হয় তাকে। এক পর্যায়ে সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ভল্ট রুমে চলে যান। 

“ভল্ট রুমের তালা কাটার শব্দে প্রশান্ত জেগে গেলে তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় শফিকুলের কাছে থাকা এসএস পাইপ দিয়ে প্রশান্তের মাথায় আঘাত করেন এবং গলা চেপে ধরেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রশান্ত মারা যান। এরপর শফিকুল ভল্ট রুমের র‌্যাক থেকে আট লাখ টাকা নিয়ে চলে যান।”

যাবার সময় নিহত প্রশান্তের পকেট থেকে চাবি নিয়ে মূল গেটের তালা খুলে বাইরে বের হয়ে আবার তালা দিয়ে যান এবং সেদিনই নওগাঁয় ফিরে যান তিনি, বলেন এসপি সুদীপ। 

পুলিশ সুপার আরও জানান, শফিকুল নওগাঁ পৌঁছে সদরের জলিল মার্কেটের মার্কেন্টাইল ব্যাংকে নিজের অ্যাকাউন্টে দুই লাখ এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে তিন লাখ ৭৬ হাজার টাকা জমা রেখে নওগাঁর ভাড়া বাসায় চলে যান। পরে সেখানকার গ্যারেজ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়ি সাপাহার চলে যান। 

গ্রেপ্তার শফিকুলকে আদালতে পাঠানো হবে; আর এর ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে তিনি জানান।  

এর আগে গত ২৩ এপ্রিল রাতে নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালনকালে খুন হন ডাকঘরের অফিস সহায়ক প্রশান্ত কুমার আচার্য্য। পরদিন ডাকঘরটির পোস্ট অফিস পরিদর্শক (শহর) মহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় অজ্ঞাত ৫-৭ জনকে আসামি করে হত্যা ও ডাকাতির মামলা করেন।

আরও পড়ুন

Also Read: বগুড়ায় ডাকঘরে প্রহরী খুন: খোয়া গেছে ৮ লাখ টাকা

Also Read: বগুড়ায় প্রধান ডাকঘরের অফিস সহায়ক খুন