পুলিশ জানায়, ডাকঘরের ভোল্টে ৪৩ লাখ টাকা ছিল; সেখান থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা খোয়া গেছে।
Published : 25 Apr 2023, 12:45 AM
বগুড়ার অফিস সহায়ক খুন হওয়া প্রধান ডাকঘর থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা লুট হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সোমবার সকালে প্রশান্ত কুমার আচার্য্য নামে ডাকঘরের অফিস সহায়কের মরদেহ উদ্ধার হয়, ঈদের ছুটি উপলক্ষ্যে যিনি রোববার রাতে নৈশ প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার জানান, দুপুরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল ইসলামের উপস্থিতিতে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ তাদের ভোল্টের টাকা হিসাব করে দেখেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী ভোল্টে ছিল ৪৩ লাখ টাকা। বিকালে হিসাব করে আট লাখ টাকার ঘাটতি পাওয়া যায়। বাকি টাকা ডাকঘরের কর্মকর্তারা ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে জমা করেন।
তবে প্রশান্তের স্বজনদের দাবি, পূর্বশত্রুতার জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। হত্যার ঘটনা চাপা দিতে ডাকাতির নাটক সাজানো হয়েছে।
প্রশান্তের ছেলে জয়ন্ত কুমার আচার্য্য বলেন, বাড়ি থেকে খাওয়া শেষে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডাকঘরে আসেন প্রশান্ত। এরপর সকালে তার কাকা গোবিন্দের কাছে বাবার মৃত্যুর খবর জানা যায়।
নিহতের ছোট ভাই গোবিন্দ আচার্য্য বলেন, “ঈদের কারণে ভাইয়ের ডাকঘরে রাতের ডিউটি ছিল। আমিও এখানে চাকরি করি। সকালে অফিসে বাইরের গেট বন্ধ ছিল। ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। দেয়াল টপকে একজন ঝাড়ুদার ভিতরে গেলে ভাইকে পড়ে থাকতে দেখতে পায়। পরে আমিও ভিতরে ঢুকি।”
ভাইকে বারান্দায় দেখে পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে মরদেহ উদ্ধার করে বলে তিনি জানান।
বড় ভাই পরেশ আচার্য বলেন, “প্রশান্তকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। হত্যার ঘটনা চাপা দিতে ডাকাতির নাটক সাজানো হয়েছে। অফিসের অনেকেই প্রশান্তকে হিংসে করত৷ তাদের ধরলেই জানা যাবে কীভাবে কী হয়েছে।”
ডাকঘর কর্তৃপক্ষ জানায়, ডাকঘরে স্থায়ী আমানত, সাধারণ হিসাব, সঞ্চয়পত্র, পেনশন, রেভিনিউ ও ডাকটিকিট বিক্রির টাকা গচ্ছিত থাকে। সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা তারা ভোল্টে রাখতে পারেন। প্রতিদিনকার টাকা পরের দিন ব্যাংকে জমা হয়। তবে ঈদের জন্য কিছু টাকা ভোল্টে ছিল। এর পরিমাণ প্রায় ৪৩ লাখ টাকা।
ডাকঘরের সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল রাকিব বিশ্বাস জানান, ডাকঘরে দুজন নৈশপ্রহরী আছেন। ঈদের সময় তারা ছুটিতে থাকেন। এই সময়টায় প্রশান্ত কুমার দায়িত্ব পালন করেন। এভাবেই বিগত বছরগুলোয় দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
ডাকঘরের ভিতরে গেলে দেখা যায়, পিছনের গেটের ভিতরে বারান্দায় প্রশান্তের মরদেহ পড়ে আছে। তার মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন। এক হাতে কাপড় বাঁধা। মরদেহ থেকে প্রায় ২০ ফুট দূরের পশ্চিম দিকে বারান্দার দুটি শিক কাটা ছিল। দুর্বৃত্তরা ডাকঘরের ভোল্টের দরজা কাটার চেষ্টা করেছে। তবে পুরোটা কাটতে পারেনি। তবে কাটা অংশ দিয়ে কিছু টাকা তারা বের করে নেয়।
পুলিশ ও ডাকঘরের কর্তৃপক্ষ জানায়, ডাকঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৩টার পর থেকে ক্যামেরার কোনো ফুটেজ নেই। কারণ সেগুলোর লাইন কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে সাড়ে ৩টার আগের ফুটেজে মুখোশ পরা একজনের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ জানান, প্রাথমিকভাবে এটিকে ডাকাতির চেষ্টা মনে হয়েছে। দুর্বত্তরা মাথায় আঘাত করে প্রশান্তকে খুন করেছে৷ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার ভাই গোবিন্দকে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। আর প্রশান্তের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
টাকা লুটের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, ডাকঘরের ভোল্ট ছিল ৪৩ লাখ টাকা। সেখান থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা খোয়া গেছে। বাকি টাকা অক্ষত আছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ সবগুলো দিক সামনে রেখেই তদন্ত করছে।
প্রশান্ত কুমার আচার্য্য বগুড়া শাহজাহানপুরের বেজোড়া হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা। তিনি ডাকঘরের এমএলএসএস পদে নিযুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন