বন্যপ্রাণীর মৃতদেহের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছে বনবিভাগ।
Published : 01 Jun 2024, 12:44 PM
ঘূর্ণিঝড় রেমালের জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে সুন্দরবনে হরিণের আরও ১২টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১২৭টি হরিণ ও চারটি শুকরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হলো।
শুক্রবার রাতে সবশেষ খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক মিহির কুমার দো এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এসব বন্যপ্রাণীর মৃতদেহের অধিকাংশই সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা, কচিখালী, দুবলা, নীলকমল, আলোরকোল, ডিমের চর, পক্ষীরচর, জ্ঞানপাড়া, শেলার চরসহ নদী ও খালে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া ১৮টি হরিণ ও একটি অজগর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের বনে ছেড়ে দিয়েছে বনবিভাগ।
বন্যপ্রাণীর মৃতদেহের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছে বনবিভাগ।
মিহির কুমার দো বলেন, রেমালের জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বন্যপ্রাণীর। জলোচ্ছ্বাসে লবণপানি বনের মধ্যে আটকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, মঙ্গলবার থেকে সুন্দরবনে তল্লাশি করে প্রতিদিনই তারা মৃত অবস্থায় হরিণ উদ্ধার করছেন। শুক্রবার বনের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হরিণের মরদেহ অনেকাংশে পচে গেছে।
বনবিভাগ ও সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে এবার ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় সুন্দরবন। স্বাভাবিক সময়ে ২৪ ঘণ্টায় দুইবার ভাটা এবং দুইবার জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হয় বনের একটি অংশ।
কিন্তু এবারই প্রথম ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে থেকে পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টায় বনে কোনো ভাটা হয়নি। অর্থাৎ, এই দীর্ঘ সময় পুরো বন পানিতে তলিয়ে ছিল। আর জোয়ারে পানির উচ্চতা ছিল স্বাভাবিকের চাইতে ৫ থেকে ৬ ফুট, কিছু এলাকায় এর চেয়েও বেশি।
দীর্ঘ সময় এতো উঁচু জোয়ারের ফলে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণির বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করছিলেন বন কর্মকর্তারা।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, ২০০৭ সালে সিডরের পর সুন্দরবনে ৪০টি হরিণ, একটি বাঘ ও একটি তিমির মৃতদেহ পাওয়া যায়। ২০০৯-এ ঘূর্ণিঝড় আইলার পর তিনটি হরিণ ও একটি শূকরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হওয়া ঝড়গুলোতে বাঘ, হরিণসহ অন্য কোনো বন্য প্রাণীর ক্ষতি হয়নি। ২০২১ সালের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে চারটি হরিণের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
বন বিভাগের তথ্য বলছে, সুন্দরবনের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে, জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৪ দশমিক এক বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এছাড়া আছে প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী।
আরও পড়ুন
ঘূর্ণিঝড় রেমাল:সুন্দরবনে আরও ৪৪ বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার
রেমাল:সুন্দরবনের আরও ১৬টি বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার
ঘূর্ণিঝড় রেমাল:সুন্দরবনে মিলল ২৬ হরিণের মৃতদেহ
সুন্দরবনের নদী ফুলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত,বন্যপ্রাণী নিয়ে শঙ্কা