দুর্গত অঞ্চলের বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছেন। তাদের জন্য ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
Published : 05 Jul 2024, 10:13 PM
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা।
শুক্রবার জেলার চার উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের প্রায় ২৯ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার বিঘার জমির ফসল। বিশেষ করে দুর্গম চরাঞ্চলে ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি বেশি করুণ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জুয়েল মিয়া জানান, বন্যায় গাইবান্ধা সদর উপজেলা পাঁচটি ইউনিয়নের ৩ হাজার ৫১৮ পরিবার, সুন্দরগঞ্জের সাতটি ইউনিয়নের চার হাজার ৭০০ পরিবার, সাঘাটার আট ইউনিয়নের ১৩ হাজার ২৯০ পরিবার এবং ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের সাত হাজার ৪২০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ঘাঘটের পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া করতোয়ার পানি ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তিস্তার পানি ৪ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার থেকে দুর্গত অঞ্চলের বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছেন। তাদের জন্য ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলার গুপ্তমনিচর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৫০) জানান, বৃহস্পতিবার থেকে তার ঘরের ভেতর তিন থেকে চার ফুট পানি। নলকূপ, রান্নাঘর ও শৌচাগার ডুবে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে হাঁস-মুরগি। গরু ও ছাগল নিয়ে মহা বিপদের মধ্যে আছেন।
“দুইদিন থেকে শুকনা খাবার খেয়ে আছি। তাও শেষ হয়ে গেছে। তাই বৃষ্টির মধ্যেই নৌকা নিয়ে বালাসিঘাট এলাকায় বাজারে শুকনো খাবার ও পানি কিনতে আসছি।”
একই গ্রামের সাজু মিয়া বলেন, গ্রামের অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। তারা সামান্য খাবার খেয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। আবার বাড়ি-ঘরে আসবাবপত্র রেখে আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছেন না। এ মুহূর্তে তাদের শুকনো খাবার ও পানি খুবই দরকার।
ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান জানান, “বর্তমানে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শুধু গজারিয়ায় নয়, পানিবন্দি ফুলছড়ি উপজেলার সব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট হয়েছে।”
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জুয়েল মিয়া জানান, বন্যা দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবারের তিন হাজার ৫০টি প্যাকেট ও ১৬৫ টন চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। এছাড়া পানিবন্দি লোকজনকে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলমান বন্যায় ইতোমধ্যে চার উপজেলায় দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
“পানি যদি দ্রুত নেমে যায়, তাহলে এসবের ক্ষতি কম হবে। আর যদি বন্যা স্থায়ী হয়, কিংবা আরও বাড়ে; তাহলে কী পরিমাণ ফসল নষ্ট হবে, তা পরে জানা যাবে।”
তবে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, “নদ-নদীর পানি বাড়লেও আপাতত দীর্ঘ মেয়াদের বন্যার সম্ভাবনা নেই। ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার কারণ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল। এ পানি ঘাঘট নদীতে প্রবেশ করেছে। একই কারণে করতোয়ার পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
পুরানো খবর:
গাইবান্ধায় ১৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি, ৭৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপরে, ডুবেছে নিম্নাঞ্চল
গাইবান্ধায় বাড়ছে নদ-নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা