গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
Published : 04 Jul 2024, 09:22 PM
টানা বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া পাঠদান বন্ধ রয়েছে ৭৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
জেলা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৪ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি লোকজন। তলিয়ে গেছে পাট, কাউন, তিল ও শাকসবজিসহ বর্ষাকালীন ফসলের ক্ষেত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন ও চত্বরে বন্যার পানি ওঠায় ৬৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ও সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তিনটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ৫১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া করতোয়ার পানি ৬২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি এবং তিস্তার নদীর পানি ১৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ মিলিমিটার।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লালচামার গ্রামের আব্দুল মতিন মিয়া জানান, বাড়ির উঠানে পানি উঠলেও এখনো ঘরের ঢুকেনি। তবে ২ বিঘা জমির মরিচ, পটল ও কচু ক্ষেত ডুবে গেছে তার।
বন্যা আসলে তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না বলে জানান তিনি।
ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ওঠার পর থেকে গবাদি পশু নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন বলে জানিয়েছেন ফুলছড়ি উপজেলার বাউসী গ্রামের আবেদ আলী।
সাঘাটা উপজেলার বরমতাইড় গ্রামের হানিফ মিয়া জানান, বন্যা আসলে পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে চরম বিপদে পড়তে হয়।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম জানান, পানি বাড়ায় তার গোটা ইউনিয়ন প্রায় ডুবে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
গাইবান্ধা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জুয়েল মিয়া জানান, বন্যায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের দুই হাজার ১৫০ পরিবার, সুন্দরগঞ্জের সাতটি ইউনিয়নের চার হাজার ৭০০ পরিবার, সাঘাটার আটটি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার ১৭০ পরিবার এবং ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ছয় হাজার ৮০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র ও মেডিকেল টিম গঠন করার পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা এবং স্পিট বোর্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বন্যা কবলিত ইউনিয়নগুলো হলো- সদর উপজেলার কামারজানি ও মোল্লারচর; সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া, বেলকা, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, চণ্ডিপুর ও হরিপুর; ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া, উদাখালি, ফুলছড়ি ও গজারিয়া এবং সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, ঘুড়িদহ, ভরতখালী, সাঘাটা, মুক্তিনগর, কামালেরপাড়া, কচুয়া ও জুমারবাড়ী ইউনিয়ন।
গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকসানা বেগম জানান, ভবন ও চত্বর বন্যার পানি ওঠা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সদর উপজেলায় দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা এবং ফুলছড়ি উপজেলার পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদ্রাসার সামষ্টিক মূল্যায়ন গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।
বন্যার কারণে জেলা সদরে ১৭টি, ফুলছড়ির ১৪টি, সাঘাটার ২১টি এবং সুন্দরগঞ্জের ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোনালী সরকার।
গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে।
নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়েছে; তবে ঝুঁকি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান এই পাউবো কর্মকর্তা।